১৩২১ অভিযোগের ১২৩০টি নিষ্পত্তি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভূয়া আইডি থেকে হঠাৎ রাজশাহীর এক তরুণীর আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে পড়ে। উপায় না পেয়ে পুলিশের দারস্থ হন ওই তরুণী। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট খুঁজে বের করে নওগাঁর মহাদেবপুরের বাসিন্দা শাফিউল ইসলামকে। ভূয়া আইডি থেকে আপত্তিকর ছবি ছড়ানোর অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়। প্রতিকার পান ওই তরুণী।

এটি চলতি বছরের মে মাসের ঘটনা। তবে একবছরে এ রকম ব্ল্যাকমেলসহ ১ হাজার ৩২১টি অভিযোগ পেয়েছে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এরমধ্যে ১ হাজার ২৩০টি অভিযোগেরই নিষ্পত্তি হয়েছে। অভিযোগ নিষ্পত্তির এই হার ৯৩ শতাংশেরও উপরে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠার এক বছর পূর্ণ করেছে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক যোগ দেওয়ার সাতদিন পরই পুলিশের এই ইউনিট গঠন করেছিলেন। এখন আরএমপির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

আরএমপি জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন করা হয়। তখন ছিলেন একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ও তিনজন পুলিশ কনস্টেবল। পরবর্তীতে আরও কিছু প্রশিক্ষিত সদস্য যুক্ত হয়ে বর্তমানে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ১৩ জন সদস্য সাইবার ক্রাইম ইউনিটে কাজ করছেন।

গত এক বছরে রাজশাহী মহানগরী ও আশপাশের এলাকার ৩৬০টি ফেসবুক সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এসেছে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে। নারীদের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ছবি/ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্লাকমেল করা, ফেসবুকে কারো ছবি দিয়ে ভূয়া একাউন্ট তৈরি করা, ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করা, বিভিন্ন ভুয়া মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পর্ণ ছবি ও ভিডিও পাঠানোর মতো এসব অভিযোগের ৩৪০টি নিষ্পত্তি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বিকাশ, নগদ, রকেটসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস মানি ট্রান্সফার সিস্টেমের অপরাধেরও অভিযোগ এসেছে ৫০টি। ভূয়া অফারের মাধ্যমে পিনকোড হাতিয়ে নিয়ে টাকা সরিয়ে নেওয়ার মতো এসব অভিযোগের সবকটিই নিষ্পত্তি হয়েছে। ইমো সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছে তিনটি। ইমোর মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন ও আর্থিক প্রতারণার মতো এই সবগুলো ঘটনারই নিষ্পত্তি হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ইউনিটে পর্ণগ্রাফি সংক্রান্ত অভিযোগও এসেছে ৫০টি। এগুলো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করেছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

আরএমপি আরও জানায়, একবছরে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ই-মেইল সংক্রান্ত তিনটি অভিযোগ পেয়েছে। দুটিরই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। টিকটক বা লাইকি সংক্রান্ত পাঁচটি অভিযোগেরও সবগুলো সমাধান করতে পেরেছে এই ইউনিট। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করা হচ্ছিল এই অ্যাপসের অপব্যবহারের মাধ্যমে। বিভিন্ন থানায় হওয়া অপহরণের মামলার পর থানা পুলিশ অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধারেও বিশেষায়িত এই ইউনিটের সহায়তা নিয়েছে। এ রকম ৩০টি অভিযোগের পর সবগুলোরই অপরাধীকে গ্রেপ্তারে সহায়তা করেছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।

এদিকে হারানো বা চুরি কিংবা ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধারেও সফলতা রয়েছে এই ইউনিটের। এক বছরে ৮২০টি এ সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে ইউনিটে। এরমধ্যে ৭৫০টি মোবাইল উদ্ধার করতে পেরেছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এর পাশাপাশি রাজশাহী নগরজুড়ে বসানো পুলিশের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরাও পরিচালনা করে থাকে আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একবছরে ২২৭টি ঘটনার অপরাধের অপরাধীকে শনাক্ত করতে এই ইউনিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

মহানগর এলাকার প্রায় কিশোর অপরাধ দমনে কিশোর গ্যাংয়ের ৫০০ জনের তথ্য দিয়ে একটি ডিজিটাল ডাটাবেজও তৈরি করে দিয়েছে এই ইউনিট। এতে মহানগর এলাকার ৯টি গ্যাংয়ের সদস্যদের বিস্তারিত বিবরণ আছে। ‘হ্যালো আরএমপি’ নামের অ্যাপসটিও পরিচালনা করে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এই অ্যাপসে আসা ২২৪টি অভিযোগের সবগুলোই নিষ্পত্তি করে দিয়েছে এই ইউনিট।

সাইবার ক্রাইম ইউনিটের প্রধান সহকারী পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার চৌধুরী বলেন, সরাসরি অপারেশনাল টিম হিসেবে মাঠে কাজ না করার কারণে অনেকেই সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নন। কিন্তু পুলিশি সেবার সবখানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই ইউনিট সম্পর্কে যত বেশি প্রচার হবে, তত সাধারণ মানুষ বা ভুক্তভোগীরা জানতে পারবেন। তাঁরা প্রতিকার চাইবেন। উপকৃতও হবেন।