টুনা মাছ সংগ্রহে ৩ জাহাজ আসছে আগামী জুনে
গভীর সমুদ্র থেকে টুনাসহ সমজাতীয় মাছ সংগ্রহের জন্য তিনটি জাহাজ সংগ্রহ করছে মৎস্য অধিদফতর। যা আগামী বছরের জুন মাসে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক।
বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, টুনা ও সমজাতীয় মাছ সংগ্রহের জন্য আমরা বেসরকারি বিনিয়োগ আহ্বান করেছিলাম। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরামর্শ ও নির্দেশনায় ‘গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ও সমজাতীয় পেলজিক মাছ আহরণ’ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাহাজ সংগ্রহের জন্য আমরা গত মার্চে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলেও কোনো প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। যে কারণে গত মাসের ১৩ তারিখে পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এবার ৬টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। আশা করছি এ সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন শেষে অক্টোবর মাসের মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া সম্ভব হবে। কার্যাদেশ দেওয়ার ৮ মাস পরে জাহাজ আমরা হাতে পাবো।
‘গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ও সমজাতীয় পেলজিক মাছ আহরণ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জুবায়েদুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, এবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা জাহাজ সরবরাহে ৬টি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এগুলো- বাংলাদেশ ১টি, শ্রীলংকান ২টি, সিঙ্গাপুরের ১টি, মালয়েশিয়ান ১টি এবং আবর আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মধ্য থেকে সর্বনিম্ন দরদাতাকে নির্বাচন এ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করা হবে। পরে এক মাস সময় দেওয়া হবে চুক্তির জন্য। পরবর্তীতে ৮ মাস সময় দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। শুরুতে আমরা নিজেরাই গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় মাছ সংগ্রহের জন্য সমুদ্রে যাব। পরে বেসরকারি বিনিয়োগ কারীদের আহ্বান জানাবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ৩১ হাজার ৯৮ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার একচ্ছত্র অর্থনৈতিক এলাকার (ইইজেড) এই নীল জলসম্পদের মালিক হয়েও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে গভীর সমুদ্র থেকে টুনা মাছ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এ কারণে গত বছরের ১৮ আগস্ট একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয় ‘গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ও সমজাতীয় পেলজিক মাছ আহরণ’ প্রকল্প। পরীক্ষামূলক নেওয়া এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ কোটি ছয় লাখ টাকা।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক মাহবুবুল হক আরো বলেন, আমরা একদিকে জাহাজ সংগ্রহ করছি। অপরদিকে গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় মাছের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার কাজ করছি। এজন্য আমরা আমাদের উপকূলীয় এলাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র সমূহে গবেষণার কাজ চলছে। গবেষণায় সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আমরা গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় মাছ পাচ্ছি তবে এগুলো কিছুটা ছোট। আমরা মনে করছি যেসব জায়গায় এসব মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার আশপাশেই এসব মাছের প্রজনন ক্ষেত্র রয়েছে। আমরা আশা করি আগামী বছরের আক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসে আমরা এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারবো।
বর্তমানে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনামের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। গভীর সমুদ্র থেকে টুনা মাছ আহরণ করলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও ওপরে উঠে যাবে। দেশে বর্তমানে উৎপাদিত মাছের পরিমাণ ৪২ দশমিক ৭৭ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে অভ্যন্তরীণ মাছ মোট ৩৬ দশমিক ২২ লাখ মেট্রিক টন ও উপকূলীয় সামুদ্রিক মাছ ৬ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।
এই প্রকল্প পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদ পারভেজ বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। আজ দরপত্র আহ্বান করা হলো। এছাড়াও প্রকল্পে জনবল নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ চলছে।
তিনি আশা করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা গভীর সমুদ্রে আমাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ ধরতে তিনটি লং লাইনার প্রকৃতির ফিশিং ভ্যাসেল সংগ্রহ, ভ্যাসেল পরিচালনায় দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ, টুনা ও সমজাতীয় পেলজিক মৎস্য আহরণ, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কর্মকৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা তৈরি, ক্রুসহ টুনা আহরণে নিয়োজিত ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ এবং ৩৭ জন দেশীয় ও সাতজন আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ কাজ চলমান রয়েছে।