নিষেধাজ্ঞায় দেশের জেলেরা ঘরে, সমুদ্রে মাছ ধরছে ভিনদেশী জেলেরা

  • আবু হোসাইন সুমন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বাগেরহাট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিষেধাজ্ঞায় দেশের জেলেরা ঘরে, মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভিনদেশী জেলেরা

নিষেধাজ্ঞায় দেশের জেলেরা ঘরে, মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভিনদেশী জেলেরা

মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় মোংলাসহ আশপাশ উপকূলের জেলেরা জাল-নৌকা ঘাটে রেখে ঘরে বেকার অবস্থায় রয়েছেন। নদীতে জাল ফেলতে না পারায় আয় না থাকায় ঘরে চাল নেই তাদের, ভাত নেই পেটেও। নিষেধাজ্ঞা পালনকারী সরকারি চাল বরাদ্দের সহায়তাও মিলছে না সঠিক সময়ে। তারপরও খাদ্য সহায়তার কার্ড পাওয়া না পাওয়া নিয়ে রয়েছে জেলেদের নানা অভিযোগ। এদেশের জেলেরা যখন নিষেধাজ্ঞা পালন করছেন তখনই ভিনদেশী জেলেরা সাগর থেকে লুটে নিয়ে যাচ্ছেন মা ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এদেশের জেলেরাই।

সরেজমিনে জেলে-পরিবারে খোঁজ খবরে জানা গেছে, সাগর-সুন্দরবনে বর্তমানে চলছে মা ইলিশ সংরক্ষণের নিষেধাজ্ঞা। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, তাই মোংলার সমুদ্র ও সুন্দরবন উপকূলের জেলেদের জাল, দড়ি ও নৌকা-ট্রলার এখন ঘাটে অলস পড়ে রয়েছে। জেলে পেশার এ সকল মানুষের ভিন্ন কোন কাজের সুযোগও নেই। তাই বেকার হয়ে ঘরে বসে সময় কাটছে তাদের। নদীতে জাল ফেলতে না পারায় আয়ও নেই। তাই খেয়ে না খেয়ে কষ্টের মানবেতর জীবন করছেন হাজার হাজার জেলে পরিবারের। তাদের এ দুঃখ যেন দেখার কেউ নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে জেলে কার্ড দেয়া হয়, তাতেও রয়েছে স্বজনপ্রীতি। ফলে প্রকৃত জেলেরা সেই কার্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যাদের কার্ড রয়েছে তারাও এখনও পাননি চলতি নিষেধাজ্ঞার সময়ের খাদ্য সহায়তা। জেলেরা খাদ্য সহায়তা পায়নি এর আগের ৬৫দিনের নিষেধাজ্ঞায়ও। তাই চরম দুঃখ কষ্টে পশুর নদীর পাড়ের জেলে পরিবারগুলো। নির্বাচনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বদলের পাশাপাশি বদলে যাচ্ছে জেলেদের কার্ডের মালিকানাও।

বিজ্ঞাপন

সাগর-নদীতে মাছ ধরেন চাঁদপাই ইউনিয়নের জেলে সুজন সরকার তিনি বলেন, আমার জেলে কার্ড রয়েছে, একবার মাত্র চাল পেয়েছি। এখন শুনছি আমার কার্ড মেম্বর কেটে দিয়েছে।

চাঁদপাই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর দুর্জয় হালদার বলেন, যারা জেলে না এমন লোকও কার্ড পেয়েছেন। তাই তাদেরকে বাদ দিয়ে প্রকতৃ জেলেদের কার্ড দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কার্ড করার সময় অনেক জেলে সাগরে-সুন্দরবনে থাকায় তারা তালিকাভুক্ত হয়নি। নতুন তালিকায় বাদ পড়াদের অন্তভুক্ত করতে মৎস্য কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

চিলার জেলে রোকন সরকার বলেন, চলতি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কোন খাদ্য সহায়তা আমরা এখনও পাইনি। আমরা খুব কষ্টে আছি, সরকারের কাছে সহায়তা পাওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।

চিলা এলাকার জেলে অঞ্জন বলেন, আমাদের পেশা নদীতে জাল ধরা। এখন বন্ধ থাকায় কোন কাজ নেই, খুব কষ্টে আছি। সরকারের কাছে দাবি আমরা যেন দ্রুত সহায়তা পাই।

কানাইনগর গ্রামের জেলে গাবরিয়েল সরদার বলেন, সারাজীবন জেলে পেশায় আছি, আজও কোন কার্ড পাইনি। জেলে নেতা বিদ্যুৎ বাবু কার্ড করতে আঠারো টাকা চেয়েছিল, দিতে না পারায় কার্ড দেয়নি।

দক্ষিণ কাইনমারী গ্রামের কমলা সরকার বলেন, আমাদের এখানকার ৯৫ ভাগ লোকই জেলে। অনেকের জেলে কার্ড আছে চাল পায়না, কি সমস্যা আছে জানিনা। আর যাদের যে চাল দেয়া হয় তাতে তাদের চলেনা। তিনি আরো বলেন, এখন মাছ ধরায় নিষিদ্ধ সময় চলছে আমাদের দেশে, আর এই সুযোগে ভারতের জেলেরা আমাদের সাগর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কি লাভ হলো সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে। এমন অনেক জেলেই অভিযোগ করে বলেন, সরকারী নিষেধাজ্ঞা মেনে আমরা ঘরে বসে আছি। সেই সুযোগে ভারতের জেলেরা সাগর থেকে মাছ লুটে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে নিষেধাজ্ঞার মানে হলো কি? এছাড়া নিষেধাজ্ঞায় খাদ্য সহায়তাও এখনও পাইনি। আমরা বছরের পর বছর ধরে নদীতে মাছ ধরি তারপরও জেলের স্বাকৃতি পায়নি। যারা জেলে না এমন লোক সহায়তা কার্ড পাচ্ছেন। আমাদের দুঃখের কথা সবাইকে বলি কিন্তু তাতে কোন কাজই হয়না। 

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: জাহিদুল ইসলাম বলেন, জেলেদের খাদ্য সহায়তা শীঘ্রই দেয়া হবে, আর জেলেদের জন্য নতুন তালিকা করা হচ্ছে। এটা সম্পন্ন হলে অনেকেই সহায়তার আওতায় আসবেন। যারা প্রকৃত জেলে না তাদেরকে বাদ দেয়া হবে। আবার সময় মত প্রকৃত জেলেরা তথ্য না দেয়ায় বাদ পড়ে থাকতে পারেন। তিনি আরো বলেন, জেলে কার্ড বিতরণের নানা অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি তারও কানে এসেছে। তাই অনিয়ম রোধে তিনি নিজেই কার্ড নিবন্ধনের কাজ করছেন। অপরদিকে চলমান নিষেধাজ্ঞার সময় ভিনদেশী জেলেরা এদেশের সাগরের মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন জেলেদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সাথে আলাপ হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন। এবং আমরা কোস্ট গার্ডের সাথে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর টহল বাড়ানেরা জন্য ইতিমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারপরও যারা এদেশের সাগরে যখনই ঢুকছেন তখনই তাদেরকে ধরে এনে পুলিশে সোপর্দ করছেন নৌবাহিনী-কোস্ট গার্ড সদস্যরা।