মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীতে থামছে না অবৈধ ড্রেজার বাণিজ্য। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের কিছু সাংবাদিকদেরকে ম্যানেজ করে দেদারসে চলছে অবৈধ এই ড্রেজারের রমরমা ব্যবসা।
পদ্মা থেকে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় মারধরের শিকার হয়েছে মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের এক আইনজীবী। বালু উত্তোলন বন্ধে হয়েছে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। এতো কিছুর পরও হরিরামপুরে থামছে না অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন।
উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার একাদিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাঞ্চনপুর মৌজায় এখন যে ড্রেজার চলছে কয়েকদিন আগে তা গোপীনাথপুর উজানপাড়া এলাকায় ছিলো। এলাকার লোকজন সম্মিলিতভাবে বাধা দেওয়ায় একটি ড্রেজার পশ্চিমে সরে গেছে। তবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কয়েক'শ বলগেট বোঝাই করে বালু উত্তোলন করে দেওয়া হয়।
এলাকার কেউ বাঁধা দিতে গেলে প্রসাশনের অনুমতি আছে বলে জানান ড্রেজার ব্যবসার ছত্রছায়ায় থাকা যুবকেরা। এছাড়া কেউ বাধা দিতে গেলে মারধর ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির হুমকি দেয় তারা। যে কারণে নদীপাড়ের মানুষ নিরুপায় বলে মন্তব্য করেন এলাকাবাসী।
নদীপাড়ের এক জেলে বলেন, পদ্মায় প্রচণ্ড ভাঙন চলছে গেলো কয়েক বছর ধরে। আমাদের সকলের কৃষি জমি এখন পদ্মার পেটে। অনেকেই বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে নিঃস্ব হয়ে গেছে। সরকার পদ্মা ভাঙ্গন রোধে নানান ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তবুও থামছে না পদ্মার ভাঙন। এর মধ্যে আবার ড্রেজার দিয়ে পদ্মায় বালু উত্তোলন চলছে ধুমছে। এতে করে এবারের বর্ষায় নদী ভাঙন আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের এক জনপ্রতিনিধি বলেন, পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে শুধুমাত্র প্রশাসন ইচ্ছে করলেই পারবে। বালু উত্তোলনকারীরা অনেক শক্তিশালী। তাদের সঙ্গে স্থানীয়রা পেরে উঠার সুযোগ নেই। সব দপ্তর ঠিকঠাক করেই তারা বালু ব্যবসা করে। পদ্মা থেকে বালু উত্তোলন দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ না করা হলে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের জন-জীবন অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে।
রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলার হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের খাড়াকান্দি গৌরবিদ্যার মাথার পদ্মা নদী অংশে দুটি ড্রেজার চলমান দেখা যায় সরেজমিনে। তারই একটু দক্ষিণে আরও দুইটি ড্রেজার চলছে বলে জানান স্থানীয়রা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় গোপীনাথপুর মধ্যপাড়া এলাকার মামুন মোল্লা নামের এক ব্যক্তি এই ড্রেজার দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে।
পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এই ড্রেজারের শ্রমিক মাত্র। ড্রেজারের বিষয়ে সার্বিক বলতে পারবেন রিপন গাজী। এসব বিষয়ে জানতে রিপন গাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার মামা শিবালয়ের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আকবর এই ড্রেজারের মালিক। তিনিই সব বলতে পারবেন।
এরপর আলী আকবরের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ হলে তিনি বলেন, হরিরামপুর উপজেলার বালু মহাল তিনি নিয়ন্ত্রণ করছেন। বালু মহালের এলাকার বাইরে কাঞ্চনপুরে ড্রেজার চলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে বালু মহালের সীমানার বাইরে ড্রেজার চলার বিষয়টি সত্য। তবে এসব বিষয়ে নিউজ না করার অনুরোধ করেন। তার ছোট ভাই আকিব ফোন দিলে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।
আকিব হোসেন বলেন, প্রশাসন-সাংবাদিক সবাইকে ম্যানেজ করেই ড্রেজার চলছে। এটা নিয়ে নিউজ করলে প্রবলেম হয়। তাই নিউজ না করার অনুরোধ জানান তিনি।
কাঞ্চনপুর এলাকার বাসিন্দা ও মানিকগঞ্জ জজ কোটর্রে আইনজীবী নাসির উদ্দিন বলেন, এলাকার মানুষের মঙ্গলের জন্য পদ্মা নদীর পাড় থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনে ড্রেজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে নিষেধ করেছিলাম। এর জের ধরে ড্রেজার ব্যবসায় জড়িত কিছু লোকজন আমাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। আমিসহ আমার এলাকার হাজারো মানুষের দাবি ড্রেজার সরিয়ে পদ্মায়পাড়ের মানুষ জন-জীবন রক্ষা করুন। পদ্মার ভাঙ্গন রোধ ছাড়া আর কোন চাওয়া নেই বলে জানান এই আইনজীবী।
ড্রেজারের সাবির্ক বিষয়ে জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহরিয়ার রহমান বলেন, উপজেলার বালু মহালের বাইরের এলাকায় ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। তারপরও অনেকেই প্রায়ই ইজারার নাম করে বালু উত্তোলন করে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রায়ই অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়। ফের এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।