হাসপাতাল প্রস্তুতের তাগিদ
দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আবার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জ্যামিতিক হারে বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণ। ২৬ দিনের ব্যবধানে শনাক্তের হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তাতে বাংলাদেশ আরেকটি ঢেউয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের হাসপাতাল প্রস্তুতের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ডেলটা ধরনও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এভাবে এক মাস ধরে সংক্রমণ চললে রোগী ভর্তির শয্যা মিলবে না। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় শয্যা প্রস্তুত রাখতে হবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুই দিন ধরে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গতকাল শনাক্তের হার কিছুটা কমলেও তা ১৪ শতাংশের নিচে নামেনি। গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০ সপ্তাহ পর সংক্রমণ টানা দুই দিন ১৪ শতাংশের বেশি রইল।
করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল মানিকগঞ্জে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সংক্রমিতদের শতকরা একজনের আইসিইউয়ের প্রয়োজন। যে হারে করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংকট দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং টিকা নিতে হবে। সরকার যে ১১ দফা হেলথ গাইডলাইন দিয়েছে, তা মেনে চললে লকডাউন দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। দেশের জন্য, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই গাইডলাইন মেনে চলতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, জ্যামিতিক হারে সংক্রমণ বাড়ছে। হাসপাতালে রোগীর ভিড়ও বাড়ছে। তাই দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালের সাধারণ ও আইসিইউ শয্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি জনসাধারণকে সরকার আরোপিত স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রতিবেশী ভারতে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়া ওমিক্রন পরিস্থিতি বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, সেখানে ৫ থেকে ১০ শতাংশের মতো রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ছে। এখনও দৈনিক ২০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হলে ১০ শতাংশ করে দুই হাজার মানুষের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়বে। এভাবে এক মাস ধরে সংক্রমণ চললে রোগী ভর্তির শয্যা মিলবে না। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় শয্যা প্রস্তুত রাখতে হবে।
দেশে গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ২৮টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৪৪৭ জনের। শনাক্তের হার ১৪.৩৫ শতাংশ। মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। সর্বশেষ এই সাত জনসহ দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেল ২৮ হাজার ১৩৬ জন এবং মোট শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ ১২ হাজার ৪৮৯ জন। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয় চার হাজার ৩৭৮ জনের। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১৪.৬৬ শতাংশ এবং মৃত্যু হয় ছয়জনের।
আরও পড়ুন: বাসে ঠাসাঠাসি, উধাও স্বাস্থ্যবিধি