অনশন ভাঙলেও ভিসি পতনের আন্দোলন চলবে
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি ফরিদ উদ্দিন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন থামবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল পৌনে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকায় সাংবাদিকদের একথা জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তারা দু'হাত তুলে একসাথে শপথ বাক্য পাঠ করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরছি না। তারা বলেন, আমাদের সহপাঠীদের জীবন বাচাঁতে আমরা তাদেরকে অনশন ভাঙতে বলবো। যদি তারা অনশন ভাঙে তবুও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমাদের একদফা দাবি ভিসিকে পদত্যাগ করতে হবে।
আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, সোমবার (২৪ জানুয়ারি) রাত থেকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, 'অনশনরত শিক্ষার্থীদের সবার অবস্থার অবনতি হচ্ছে এবং তারা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। তারা সবাই খিঁচুনি, ব্লাডে অক্সিজেন ও সুগার লেভেল কমে যাওয়া, ব্লাড প্রেশারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় পড়ছেন। তারা অর্গান ড্যামেজের ঝুঁকিতে আছেন।
'তিনি আরও বলেন, 'অনশনকারীদের মেডিকেল রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে সিনিয়র চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, অনশন দীর্ঘায়িত হলে যেকোনো মুহূর্তে হার্ট ফেইলিওরসহ কোমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় ২০ জন অনশনকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি ৮ জন ক্যাম্পাসে অনশন করছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে তারা অনশন ভাঙেনি বলে জানা গেছে।
এদিকে, শাবিপ্রবির সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে তাদেরকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আটক শিক্ষার্থীদের পরিবারের অভিযোগ, শাবি ভিসির পদত্যাগের দাবিতে শাবিপ্রবির চলমান আন্দোলনে কিছু অর্থ সহায়তা করায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির টিম ঢাকায় পাঁচজনকে আটক করেছে। তারা শাবির সাবেক শিক্ষার্থী বলে শুনেছি। তাদের সিলেটে নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে কী কারণে তাদের আটক করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কিনা এসব বিস্তারিত জানি না। তারা এলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
এদিকে, ভিসি ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে টানা ১৩ দিন থেকে উত্তাল শাবি ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলন ক্রমেই সহিংসতার দিকে এগুচ্ছে। টানা সাত দিন থেকে আমরণ অনশন পালন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গত শনিবার থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অবরুদ্ধ রাখা অবস্থায় আন্দোলনের এক পর্যায়ে ভিসির বাসভবনের বিদ্যুত লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সোমাবার রাতে পরে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়।
গত রোববার বিকেল থেকে ভিসির বাসভবনের মুল ফটকে মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। এর থেকে ভিসির বাসভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মঙ্গলবার দুপুরে ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সাথে খাবার নিয়ে আসলে তাদেরকে ভেতরে যেতে দেয়নি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ এক ঘন্টা অপেক্ষা করে ফিরে যেতে হয়েছে তাদেরকে। তবে ভিসির সাথে নিয়ে আসা চাল ডালসহ শুকনো খাবার পুলিশের মাধ্যমে ভেতরে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের। অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। শনিবার সন্ধ্যার দিকে হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রোববার ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে ভিসিকে মুক্ত করে। এতে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠে।