বগুড়ার চরাঞ্চলে দেড়শ' কোটি টাকার লাল মরিচ কেনা বেচা
বগুড়ার চরাঞ্চলে উৎপাদিত লাল মরিচের চাষ কমে যাচ্ছে। চাহিদা মোতাবেক দাম না পেয়ে মরিচের পরিবর্তে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে কৃষকরা। তবে এবার চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রায় দেড়শ' কোটি টাকার লাল মরিচ বিক্রি করবে বলে আশাবাদী চরাঞ্চলের কৃষকরা।
কৃষকের কাছ থেকে কেনা এই মরিচই আবার হাত বদলের মাধ্যমে কয়েক মাসের ব্যবধানে শুকনা আকারে বিক্রি হবে ৫শ' কোটি টাকার বেশী।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর বিস্তৃর্ন চরে সবচেয়ে বেশী মরিচের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও সোনাতলা, গাবতলী, ধুনট ও শেরপুর উপজেলায় যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর চরে মরিচের চাষ হয় ব্যাপক। অন্যান্য উপজেলা গুলোতে কম বেশী মরিচের চাষ হলে যমুনা নদীর চরে চাষ করা মরিচের চাহিদা সবচেয়ে বেশী। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরেও দেশের বিভিন্ন মসলা প্রস্তুত কারক কোম্পানী গুলো চরাঞ্চলের মরিচ কেনার জন্য সারিয়াকান্দিতে ক্রয় কেন্দ্র খুলেছে বেশ কয়েক বছর আগে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও ৭০০ হেক্টর কম জমিতে এবার মরিচ চাষ করা হয়েছে। অথচ গত বছর বগুড়া জেলায় ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছিল।
কৃষি বিভাগ বলছে, উৎপাদন খরচ কম এবং ভাল দাম না পাওয়ায় কৃষক চরাঞ্চলের জমিতে ভুট্টা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। ফলে এবার মরিচ চাষ কিছুটা কম হলেও ফলন হয়েছে বাম্পার। কৃষিবিভাগের তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র বগুড়া জেলাতেই এবছর ১৮ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন মরিচ (শুকনা আকারে) পাওয়া যাবে।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে যমুনা ও বাঙ্গালী নদীর বিস্তৃর্ন চরাঞ্চলের মাঠ জুড়ে এখন পাকা মরিচে ভরপুর। নদী তীর, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ থেকে শুরু করে ধান শুকানোর চাতাল গুলো যেন লাল গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কৃষক জানান, মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মরিচ জমি থেকে উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। কৃষক উৎপাদিত মরিচের বেশীর ভাগ বিক্রির পর কিছুটা শুকনা আকারে সংরক্ষন করেন নিজেদের বাড়িতেই।
সারিয়াকান্দি উপজেলার কৃষক সাইদুল ও মোখলেছ জানান, গতবছর মরিচ চাষ করে ভাল দাম পান নি। একারনে তারা অধিকাংশ জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন।
ভুট্টা জমি থেকেই বিক্রি করা যায় বলে তারা মরিচ চাষ কম করেছেন। এছাড়াও মরিচ শুকানোর পর সংরক্ষন করতে না পারায় মৌসুমের শুরুতেই পাকা মরিচ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকেন। সেই মরিচ শুকানোর পর কয়েক হাত বদলে খুচরা বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
সারিয়াকান্দি উপজেলার আন্ধারবাড়ি গ্রামের মরিচ ব্যবসায়ী আব্দুল বারী বলেন তিনি এবার ২৫০ মন পাকা (টোপা) মরিচ কিনেছেন। ১০০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা মন দরে কেনা পাকা মরিচ শুকানোর পর মন প্রতি ৮থেকে ১০ কেজি শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। তিনি বলেন মৌসুমের শুরুতে শুকনা মরিচ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করা যায়। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করে শুকনা মরিচের দাম অর্ধেকে নেমে আসায় ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে। একারনে ব্যবসায়ীরাও এবার মরিচ কিনছেন চিন্তা ভাবনা করে।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন মসলা প্রস্তুতকারী কোম্পানী মরিচ ক্রয় কেন্দ্র খুলেছেন সারিয়াকান্দিতে। ব্যবসায়ীরা মরিচ শুকানোর পর কোস্পানীর কাছে বিক্রি করে থাকেন। গাবতলী উপজেলার বাইগুনী গ্রামের মরিচ ব্যবসায়ী দুলু মন্ডল বলেন গত বছর মরিচের ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় এবার তিনি ঝুঁকি নেননি। গত বছর ৩০০ মন মরিচ কিনলেও এবার কিনেছে ১০০ মন পাকা মরিচ।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক দুলাল হোসেন বলেন, ভুট্টা চাষের কারনে এবার চরাঞ্চলে ৭০০ হেক্টর কম জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে। ভুট্টা চাষে খরচ কম ও ফলন ভাল হওয়ায় কৃষক ভুট্টা চাষে ঝুঁকে পড়ছে। তিনি বলেন দেশের বিভিন্ন মসলা প্রস্তুতকারক কোম্পানী গুলো এখনও মরিচ কেনা শুরু করেনি। কোম্পানী গুলো মরিচ কেনা শুরু করলে মরিচের দাম বাড়বে।