প্রতিবন্ধকতার শিকল যেন প্রতিবন্ধীদের পিছু ছাড়ছেই না



আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতিবন্ধকতার সকল দেয়াল ভেঙে সাফল্যের উচ্চ চূড়াতে পৌঁছাতে বেশ কাঠ-খড় পোড়াতে হয় একজন প্রতিবন্ধীকে। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা না, সমাজে এমন প্রচলিত কথা থাকলেও যখন একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষা গ্রহণের চিন্তা মনে লালন করেন; নিজেকে অন্য সাধারণ মানুষের মত গড়ার কথা ভাবেন তখন থেকেই সংগ্রামের দিনলিপি শুরু হয়। অনেক প্রতিবন্ধীই সংগ্রামের এ যাত্রার মধ্যবর্তী পথে হাল ছেড়ে অন্য পথ বেছে নেন। শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিক একজন মানুষের মত শিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন যেন ধরা ছোঁয়ার বাহিরে এক অধরা স্বপ্নই থেকে যায়। অনেকে প্রচন্ড বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই সাফল্যকে হাতের নাগালে পেতে প্রতিনিয়ত ছুটেই চলেছেন।

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষা কিছুটা বন্ধুসুলভ হলেও প্রাথমিকের পাঠ চুকাতেই শিক্ষাজীবন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য, কারণ বাংলাদেশে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের অধিকাংশ স্কুলই শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে। মাধ্যমিকে এই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হয় মূলধারার কোন স্কুলে যার অধিকাংশতেই উপযুক্ত শিক্ষা উপকরণ নেই কিংবা স্কুলগুলো প্রতিবন্ধীদের জন্য বন্ধুসুলভ নয়। এদিকে উচ্চ শিক্ষা তো তাদের কাছে আরেকটা সংগ্রামের নাম।

এমনটাই বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আসিফ করিম পাটোয়ারী। প্রাথমিক বিদ্যালয় তার কাছে কিছুটা মানানসই হলেও মাধ্যমিকে এসে মূল ধারার বিদ্যালয়ে পড়তে অনেকটাই বেগ পেতে হয় শুরুতে৷ সেই সময় সরকার ১ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ব্রেইল বই প্রদান করত না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আসিফ জানান, কখনও অডিও রেকর্ড শুনে পড়াশোনা করছেন, কখনো বা তার বাবা উচ্চ মূল্যে ব্রেইল পদ্ধতিতে বইগুলো প্রিন্ট করে নিয়ে এনে পড়েছেন তিনি।

আসিফ করিম আরও জানান, মাধ্যমিক মাড়িয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে গেলে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে থাকে। বিনামূল্যে ব্রেইল বই না পেলেও উচ্চ মূল্যে ব্রেইল বই প্রিন্ট করে পড়েছেন। কখনো বন্ধুদের কাছ থেকে অডিও রেকর্ড শুনে পড়াশোনা চালিয়ে নিয়েছেন। আসিফ করিম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দিন যত যাচ্ছে চ্যালেঞ্জিং বাড়ছে। পথ অনেক সংকীর্ণ হচ্ছে। উচ্চ শিক্ষার প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংরক্ষিত থাকলেও, এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতে আসিফ তার শ্রুতি লেখক’ক নিয়ে জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন।

এছাড়া দেশের অনেক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে বন্ধু সুলভ না বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতেও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে চিহ্নিত। অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা হলো এমন একটি শিক্ষা কাঠামো, যা সব ধরনের শারীরিক, মানসিক ও আর্থসামাজিক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সুশিক্ষিত হয়ে উঠতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চতুর্থ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সব শিশুর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমতাপূর্ণ ও মানসম্মত সুশিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তবে তা বাস্তবায়নে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।

২০১৪ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক তথ্য বলছে, দেশে প্রতিবন্ধী শিশুদের সাক্ষরতার হার ৩৩ শতাংশ। একই বছর ইউনিসেফ প্রকাশিত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ৯৭ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ৮৯ শতাংশ প্রতিবন্ধী শিশু সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারে না। এর মানে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থার কথা কাঠামোতে থাকলেও তা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ঠিক ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হয়ে উঠছে না।

এদিকে দেশের উচ্চ শিক্ষায় কারিকুলামে গলদ রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান। তিনি মনে করেন, উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যই জ্ঞান উৎপাদন কিংবা দক্ষতার উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা। অথচ আমরা উচ্চ শিক্ষাই এনে মুখস্থ নির্ভর একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালিয়ে নিচ্ছি। এমন অবস্থাতে ডিজএ্যাবিলিটি আছে এমন মানুষদের জন্য উচ্চ শিক্ষা ডাবল চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে।

তিনি মনে করেন, লিখেই কেন একজন মানুষের শিখন যাচাই করতে হবে। আমরা মুখস্থ করিয়ে লিখিয়ে পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করাতে চাই যে সে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষায় সমস্যা সমাধান ও প্রজেক্টবেজ শিখনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

এদিকে একই ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের আইন ও ঐতিহ্যের কারণে এমনটা করে থাকে। তবে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না আমরা দেশের সামগ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব জায়গাতে যেন প্রতিবন্ধীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি ৷ তাছাড়া এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একক কোন ইস্যু না, এটি জাতীয় ইস্যু। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে উদ্যোগও নিয়েছি। তবে আমলাতন্ত্রের জটিলতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভাগগুলোর নেই কোন পদক্ষেপ:

বাঁধা বিপত্তি মাড়িয়ে উচ্চ শিক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ক্লাস ও বন্ধু-বান্ধবের নোটের উপর নির্ভর করতে হয় বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আসিফ। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে তৃতীয় বর্ষে পড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সেভাবে পড়াশোনার বিষয়ে সহায়তা করে না। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে অনির্বাণ ও পিডিএফ নামে দুটি সংগঠন। ক্লাসের অডিও রেকর্ড, পরীক্ষায় শ্রুতি লেখক প্রয়োজনের পাশাপাশি যেকোন সহায়তা লাগলে তাদের শরণাপন্ন হন বলে জানান তিনি।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান। তিনি বলেন, তার বিভাগ যথেষ্ট রকমের সদয় তার প্রতি। এছাড়াও ক্লাসের অডিও রেকর্ড, পরীক্ষায় শ্রুতিলেখক প্রয়োজন হলে তিনি সজ্জা ও পিডিএফের মত সংগঠনের সহায়তা নিয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি সাপোর্ট সেন্টার থাকে। তারাই এ বিষয়টি দেখে থাকেন। যেখানে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য শ্রুতিলেখকদের একটি পোল থাকে। যেসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর প্রয়োজন হবে তারা ওই পোল হতে সহায়তা নিতে পারবে। যেই শ্রুতি লেখকের সাথে শিক্ষার্থীদের পূর্ব কোন পরিচিতি থাকবে না। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এমন সাপোর্ট সেন্টারগুলো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

উচ্চ শিক্ষায় ফাঁকা থাকছে প্রতিবন্ধী কোটায় সংরক্ষিত আসনগুলো:

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৮৫টি। এর ১ শতাংশ (৬১ জন) প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। প্রতিবন্ধী কোটায় প্রতি বছর ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। এছাড়াও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও আসন সংরক্ষিত থাকে। তথ্য জানার ঘাটতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথাকথিত প্রথা ও ঐতিহ্যের কারণে উচ্চ শিক্ষায় বন্ধু সুলভ হতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ভারতে প্রতিবন্ধীদের সুযোগ সুবিধা এবং শিক্ষা নিশ্চিতে তারা তাদের জায়গাতে বেশ শক্ত। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসন পূরণ না করে, তখন তাদের দেশে জবাবদিহি করতে হয় সঙ্গে তিরস্কারও করা হয়! অথচ আমাদের দেশ, ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী সুরক্ষা যে আইন তার তফসিলের ধারা বাস্তবায়নে কোন কাজ করেনি।

সুবিধা করতে পারছে না প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর শিক্ষা উপবৃত্তি:

সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে শিক্ষা উপবৃত্তি চালু থাকলেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তাদের কাছে এ টাকার পরিমাণ অতি নগন্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ বৃত্তি খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বলে অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। জানা যায়, সমাজসেবা অধিদফতর শুরুতে ১২ হাজার ২০৯ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়। এ কর্মসূচির আওতায় মাসিক উপবৃত্তির হার প্রাথমিক স্তরে ৩০০ টাকা, মাধ্যমিক স্তরে ৪৫০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৬০০ টাকা এবং উচ্চতর স্তরে ১০০০ টাকা। এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধীদের সাথে কথা হলে তারা বার্তা২৪.কম-কে জানান, সরকারের এ ব্যাপারে সদয় হওয়া প্রয়োজন, সেই সঙ্গে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে আমাদের অর্থ সংকটে পড়তে হবে না।

উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেও সাফল্যের উচ্চ শিখরে উঠতে বৈষম্যের অভিযোগ

চলতি বছরের ৯ মে ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চাকরির দাবিতে বসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শাহীন আলম। পরবর্তীতে চাকরির আশ্বাসে তিনি আমরণ অনশন প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও চাকরিতে ঢুকতে পারছি না। সংবিধানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর ধারা (১) দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা দিয়েছে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বঞ্চিত বা তার প্রতি বৈষম্য করা বা তাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। বিভিন্ন দফতরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অবহেলা ও অর্থের কাছে হার মানতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই আমাদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া দেশের বাহিরে বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ চাকরির বিজ্ঞাপ্তি রয়েছে। সেখানে আমাদের দেশে বিসিএস থেকে চাকরি প্রতিবন্ধী কোটা তুলে দেওয়াতে অনেক বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে, বলে জানান ঢাবির দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন ও রোকনুজ্জামান।

বিশ্ববিদ্যালয় ও এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরের মাধ্যমে একটা কোলাবরেশনে প্রয়োজন, বলে মনে করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান। তিনি বলেন, চাকরির বাজারে প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে সচেতনতা প্রয়োজন। অধ্যাপক তারিক ‘ছিয়া’ গ্রুপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তারা (ছিয়া গ্রুপ) দেখেছে অপ্রতিবন্ধীদের তুলনায় প্রতিবন্ধী মানুষদের উৎপাদনশীলতায় বেশি কর্মক্ষম। এভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সুযোগ দিতে থাকলে ধারণা এমনিই পাল্টে যাবে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ২০০৬ সালে জাতিংঘের Convention on the Rights of Persons with Disabilities, এই কনভেনশনের সঙ্গে ভারতের সংবিধানের সংঘর্ষ থাকায় ভারত তার সংবিধানকে সংশোধন করেছে। কিন্তু আমরা সংবিধান সংশোধন না করে ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন করেছি। যেখানে ভারত সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য একই আইন রেখেছে কিন্তু আমাদের দেশে তা পুরোপুরিভাবে ভিন্ন। ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইনে পরবর্তী বিধিগুলো আমরাও পাইনি, যেখানে অনেক জেলা-উপাজেলা পর্যায়ে কমিটি থাকার কথা। সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি।

দেশে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব নেই কারও কাছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী জনসংখ্যার হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ কিন্তু ২০১০ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত খানা জরিপে দেখা যায়, এ হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ আর ২০১৬ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, পৃথিবীতে আনুমানিক ৬৫ কোটি লোক, যাদের মধ্যে ২০ কোটি শিশু, এরা কোন না কোনভাবে পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী ৷ এসব অসহায় মানুষের ৮০ শতাংশের বাস দরিদ্র দেশগুলোতে, যারা স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত ৷

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন-২০১১ এর উদ্ধৃতি দিয়ে উপস্থাপিত এক প্রবন্ধে বলা হয়- পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার শতকরা ১৫ দশমিক ৬ ভাগ প্রতিবন্ধী, যাদের ৮০ শতাংশ মানুষ উন্নয়নশীল দেশে বাস করে। তবে বাংলাদেশে সমাজসেবা অধিদফতরের চলমান প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ জরিপে’ ৮ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মাত্র ২৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৩ জন প্রতিবন্ধী মানুষ পাওয়া গেছে।

প্রতিবন্ধীদের ছাড়া কখনোই এসডিজি বাস্তবায়ন হবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, যখন লক্ষ্যগুলো গণনা করা হবে, তখন যদি ৯৮ শতাংশ অর্জন হয় তখন আর আমাদের এচিভমেন্ট আর অর্জন হবে না।

এই অধ্যাপক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টি বাড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে তাদের কাছে প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ে যে খসড়া নীতিমালা দেওয়া হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপন হিসেবে জারি করলে প্রতিবন্ধীদের সকল প্রতিবন্ধকতাই কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

   

মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, আব্দুস সালাম (৫০) এবং অপরজন হলেন ছানোয়ার হোসেন (৪৫)।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সবজি বিক্রেতাদের বাড়ী মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম এলাকায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গোলড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক মো: শাহ আলম বলেন, সকালে মানিকগঞ্জের জাগীর সবজি আড়ত থেকে সবজি ক্রয় করে কাটিগ্রাম এলাকার মৃত সাইজুদ্দিনের ছেলে আব্দুস সালাম এবং আব্দুস সামাদের ছেলে ছানোয়ার হোসেন নিজ এলাকায় যাচ্ছিলো।

যাত্রাপথে তাদের বহন করা ভ্যানটিকে অজ্ঞাত একটি গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যায়। এসময় ভ্যান চালক রাস্তার পাশে পড়ে গেলেও ওই দুই সবজি বিক্রেতা মারা যায় বলে জানান তিনি।

গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুখেন্দু বসু বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত এক জনের মরদেহ জেলা হাসপাতালে এবং একজনের মরদেহ থানায় রাখা হয়েছে। নিহতদের পরিবারে খবর দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

;

সিলেটে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
সিলেটে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু

সিলেটে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের স্থানীয় দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার কম্পিউটার অপারেটর অমিত দাস শিবুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে নগরীর হাজারিবাগ এলাকার পেছনের মাঠে তার মরদেহ পড়েছিল। খবর পেয়ে সিলেট মেট্রোপলিটনের (এসএমপির) বিমানবন্দর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।

নিহত অমিত দাস শিবু গৌর চাঁদ দাসের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তিনি নগরীর বাগবাড়ি নরসিং টিলা এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতেন।

জানা যায়, অমিত দাস শিবু প্রতিদিনের মতো আজ রাতেও উত্তরপূর্ব পত্রিকা অফিসে কাজ করে বাসায় ফিরছিলেন। রাত পৌনে ২টার দিকে স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়।

এব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। তার মরদেহের পাশে মোটরসাইকেলটি চাবি লাগানো অবস্থায় রাখা ছিল। তবে মোবাইল ফোন পাওয়া যায়নি। কিন্তু মোবাইলের শেষ লোকেশন ঘটনাস্থলেই দেখাচ্ছে। তার দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন মিলেনি। এরপরও ঘটনাটিকে রহস্যজনক ধরে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

;

গ্যাস-বিদ্যুৎ-সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ আইএমএফ’র



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ভারসাম্য ঠিক রাখতে ও ভর্তুকি সহনীয় পর্যায়ে রেখে সার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয়ের (বাড়ানো) সুপারিশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল।

অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এ সুপারিশ করেছে ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণে আসা আইএমএফ’র প্রতিনিধিদল।

প্রতিনিধিদলটি ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তাও জানতে চেয়েছে। এছাড়া লক্ষ্যভিত্তিক খেলাপিঋণ কমানো বিশেষ করে সরকারি মালিকানার ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ কমিয়ে আনা এবং প্রক্রিয়াধীন থাকা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত আইনগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থবিভাগের বাজেট অনুবিভাগের সঙ্গে ভর্তুকি নিয়ে বৈঠক করে মিশনের একটি অংশ, ভর্তুকি কমিয়ে আনেত পেট্রোলিয়াম পণ্যের জন্য একটি পর্যায়ক্রমিক সূত্র-ভিত্তিক মূল্য সমন্বয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সরকারকে স্বাগত জানায়।

তবে সার্বিক বাজেট ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার জন্য বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত কৃষিতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে যাবে সরকার। তবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভর্তুকি কমাতে পর্যায়ক্রমে এসবের দাম বাড়ানো হবে।

আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস পাপাগেওর্জিউ–এর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে।

বৈঠকে সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারাসহ সোনালী ব্যাংকের এমডি মো. আফজাল করিমসহ জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের এমডিরাও উপস্থিত ছিলেন।

;

রাতের আঁধারে শিক্ষার্থীদের ক্লাস, অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৬



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাজীপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আফাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজ নামে বেসরকারি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাতের আঁধারে ক্লাস করাতে গিয়ে ছয় শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি গোপন রেখে অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীদের কালিয়াকৈর সদরের রুমাইসা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে তাদের পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার টান কালিয়াকৈর এলাকার আফাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজের একটি ক্লাস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের পরিবার সূত্র জানায়, সারাদেশে তীব্র তাপদাহের কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতে এইচএসসি পরিক্ষার্থীদের রাতের আঁধারে ক্লাস করানো হচ্ছিল। এসময় তীব্র গরমে ৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মাইক্রোবাসে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে এসে তাদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়।

অন্যদিকে কিছু শিক্ষার্থীর অবস্থা বেশি খারাপ থাকায় তাদের পার্শ্ববর্তী জেলা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কুমুদিনী সরকারি কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে আফাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল ও কলেজের পরিচালক মো. সোহাগ রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নৈশপ্রহরী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ভেতরে ক্লাস চলছিল। কিছুক্ষণ পর গরমে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে যায়। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

;