পীরের নির্দেশে ভোট দিতে যান না নারীরা!

  • মনিরুজ্জামান বাবলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মেয়েদের ভোট দেওয়া ইসলামবিরোধী কাজ। পীরের এমন নির্দেশে স্বাধীনতার পরে গত ১০টি জাতীয় নির্বাচনের কোনোটিতেই ভোট দিতে যাননি এই ইউনিয়নের অধিকাংশ নারী। পরিচয়পত্র নিয়ে ব্যক্তিগত সকল কাজ করলেও ভোটের দিন কেন্দ্রে না গিয়ে ঘরে বসে থাকেন নারীরা। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে মহিলা প্রার্থী থাকায় ক্রমে এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছেন নারীরা।

পীরের নির্দেশে গত ৪৭ বছর ধরে নারীদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার এ ঘটনা ঘটে আসছিল চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৬ নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহল মনে করছেন, এবার আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর জৈনপুরের পীরের অনুসারী হাছান মওদুদ নামে স্থানীয় একজন পীর এই ফতোয়া জারি করেন। ঐ পীর দাবি করেছিলেন, মেয়েদের ভোট দেওয়া নাজায়েজ কাজ। এরপর ১০টি সংসদ নির্বাচন আর কোনো স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে যেতেন না অধিকাংশ নারী।

ফতোয়া জারি করা পীর হাছান অবশ্য বেঁচে নেই। তিনি পাঁচ বছর আগেই মারা গেছেন। আর এ কারণে এবার নারীদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যাপারে আশাবাদী স্থানীয় প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে স্থানীয় প্রশাসন বহু চেষ্টা করেও নারীদের ভোট কেন্দ্রে আনতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। এমনকি নারীদের মধ্যে যারা শিক্ষিত, তারাও আসেন না কোনো নির্বাচনে। ভোট না দিলেও নিত্যদিন ঘরের বাইরে যান এই নারীরা। নিজ ও সন্তানের লেখাপড়া, বাজার ছাড়াও নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। কিন্তু ভোটের দিন সবাই থাকেন ঘরের ভেতরে।

রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৪ হাজার ৪৫৪ জন। তাদের মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১২ হাজার ১১৪ জন। তারা সবাই ভোটার তালিকায় নাম উঠাতে ছবি তুলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্রও নিয়েছেন।

এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই ইউনিয়নের নারীরা ভোট দিতে যাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। যদিও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইসকান্দার আলী আশা করছেন, এবার পরিস্থিতি পাল্টাবে। তিনি বলেন, ‘একটি গুজব উঠেছিল, তবে সমস্ত ব্যাপার সমাপ্ত হয়ে গেছে। এখন মহিলারা আসবে এবং ভোট দেবে।’

রুপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা প্রবাসী রুহুল আমিনের স্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শ্বশুরবাড়ির নারীরা ভোট দিতে যান না। তবে তিনি পাশ্ববর্তী ইউনিয়নে বাবার বাড়িতে ভোটার হওয়ায় সেখানে গিয়ে ভোট দেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার পরিচয়পত্র দিয়েছে, আমরা ভোট দিমু না ক্যান। ভাইয়েরা এতো কষ্ট করে। সবার ভোট দেওয়া উচিত।’ এ সময় তিনি আরও জানান সাহেবগঞ্জে তার পরিচিত অনেক পরিবারের নারীরা ভোট দেয় না।

স্থানীয় সংবাদিক আনিছুর রহমান সুজন বলেন, ‘সম্প্রতি ঐ ইউনিয়নের নারী ভোটারদেও মাঝে কিছু ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়েছে। ৪৭ বছর পর এবার সংসদ নির্বাচনে এখানে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে।’

রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রেনু আরা বেগম বলেন, ‘আমি নারীদের ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে অনেক উদ্বুদ্ধ করেছি। এতে নারীদের মাঝে কিছুটা ধারণা পাল্টেছে।’

নারী ভোটারদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এই নির্বাচনে নারী ভোটারসহ সবাই যাতে ভোটকেন্দ্রে যান, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ও কমিশনের প্রতিনিধি হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ আমাদের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।’