রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। রাজধানীতে প্রতি মাসে অন্তত দেড় শতাধিক মানুষের দাফন হয় এশিয়ার সবচেয়ে বড় এই কবরস্থানে। প্রিয় স্বজনকে শেষ ঠিকানায় রেখে যাওয়ার পরে অনেকেই আসেন কবর জিয়ারত ও দেখভাল করতে। প্রিয়জনের কবরটি দেখে রাখতে গোর খোদক ও কবরস্থানে কাজ করা কর্মীদের অনুরোধ করেন। কবর পরিচর্চা পাশাপাশি নিয়ম অনুযায়ী মাসিক কিংবা বছরের হিসেবে টাকাও দিচ্ছেন। এমন কি কবরে থাকা ব্যক্তির নাম পরিচয় ও মৃত্যুর তারিখ সম্বলিত একটি সাইনবোর্ডও থাকে। যাতে অন্তত কবরের মানুষটির ছোট একটি পরিচয় পাওয়া যায়। তবে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের একটি ব্লকের শতাধিক কবরে এমন কোনো আয়োজন নেই। দাফনের পর আর কেউ ফিরে তাকায় নি কবরগুলোর দিকে। কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি। তাই অবহেলা আর অযত্নে মাটি ভেঙে কবরের ভেতরে চলে গেছে। ভালোভাবে খেয়াল করলে কবরের ভেতরে পচে যাওয়া মানুষটির হাড় ও কাফনের কাপড়ও দেখা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, অজ্ঞাত ব্লকের বেশিরভাগ কবরই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত অজ্ঞাত শহীদদের। বেসরকারি সামাজিক সংস্থা অন্জুমান মফিদুল ইসলামের গাড়িতে করে আসা লাশগুলো দাফন করেছেন কবরের দায়িত্বরতরা। দাফনেই তাদের দায়িত্বশেষ। ফিরে তাকানোর সময় নেই।
কবরস্থানে কর্মীদের যেমন ফুসরত মেলেনি তেমনি অজ্ঞাত শহীদদের কবরের খোঁজ নেয়নি যাদের ডাকে আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ হারানো মানুষগুলো। পরিচয় হারিয়ে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন হওয়া সেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কদেরও। বরং তারা এখন রাষ্ট্রিয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এমন কি এখন আর তাদেরকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায় না। অজ্ঞাত শহীদদের কবর সংক্রান্ত বক্তব্য জানতে অন্তত চারজন সমন্বয়কের সঙ্গে গত এক সপ্তাহেও যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। সহ সমন্বয়ক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেও এই বিষয়ে তারা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি না।
অথচ মাত্র তিন মাস আগেও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এই সমন্বয়কদের ডাকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলো। প্রাণের মায়া ত্যাগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে চোখ রেখে আন্দোলন করেছেন। আর এই আন্দোলন দমাতে গণহত্যা চালিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। হাসিনার ১৫ বছরের ক্ষমতার মসনদ রাখতে নৃশংস হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন। গুলি চালিয়ে হত্যা ও লাশ গুমে মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা হাসিনাকে নামাতে জীবন দিতে হয়েছে কয়েক হাজার যুবক, কিশোর ও শিশুদের। গুলির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে কোনো মতে প্রাণ নিয়ে বেঁচেন আছেন অন্তত ৩০ হাজারা ছাত্র জনতা। তবে এখনো অজানা নিখোঁজদের সংখ্যা।
অভিযোগ আছে, আন্দোলেনের সময়ে রাতের আঁধারে নানাভাবে লাশ গুম করা হয়। নকল কাগজপত্র বানিয়ে ভুয়া পরিচয়ে দাফনের ঘটনাও ঘটেছে। পাশাপাশি নিহত অনেকের মরদেহ দীর্ঘদিন হাসপাতালের মর্গে থাকার পরেও যাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি তাদের অনেককেই অজ্ঞাত হিসেবে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি গণকবর দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। দেশের সবচেয়ে বড় এই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে শতাধিক অজ্ঞাত শহীদের মরদেহ। এছাড়া জুরাইন কবরস্থানে অন্তত ১০ জন অজ্ঞাত শহীদকে দাফন করা হয়েছে। দায়িত্বরতরা অজ্ঞাত মরদেহ দাফনের বিষয়টি স্বীকার করছেন না। তবে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত কোনো অজ্ঞাত মরদেহ দাফনের তথ্য পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ৩ মাসের মাথায় অজ্ঞাত হিসেবে দাফন হওয়া শহীদদের গণকবর দেখে হতবাক হতে হয়েছে। রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অজ্ঞাত মরদেহ দাফনের জন্য নির্দিষ্ট ব্লক রয়েছে।
একাধিকবার অজ্ঞাত কবরের ব্লকে গিয়ে দেখা যায়, অজ্ঞাত কবরের দুটি সাড়ি রয়েছে। বেশিরভাগ কবরই বাঁশের কঞ্চি দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা। কবরগুলোর বেশিরভাগ ভেঙে গেছে। বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে কবরের মাটি। দেখে বোঝার উপায় নেই মাত্র তিন মাস আগে নিহত শতাধিক অজ্ঞাত শহীদকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে।
গত ২৩ অক্টোবর গণনা করে দেখা যায়, ১৮০টিরও বিশে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে চিহ্নত করা কবর। কিন্তু গতকাল ৪ নভেম্বর গিয়ে গণনা করে দেখা যায়, ১১৫টি কবর চিহ্নিত করা রয়েছে। শতশত ভাঙ্গা কবরের মাঝে একটি কবরের ভিন্ন চিত্র দেখা গেলো। সুন্দরভাবে মাটি দিয়ে সাজানো গুছানো। কবরের পাশে লাগানো হয়েছে সৌন্দর্যবর্ধন গাছ।
কবর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাটি দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা কবরটি একজন ফিলিস্তিন নাগরিকের কবর। গত ২৯ জুলাই তাকে দাফন করা হয়েছে। আন্জুমান মফিদুলের মাধ্যমে লাশ যাওয়ায় তাকে অজ্ঞাত ব্লকে দাফন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটির তথ্য বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতায় মোট এক হাজার ৫৮১ জন নিহত হয়েছে। আন্দোলনে আহত হয়েছে ৩১ হাজারের বেশি মানুষ। তবে এই তথ্যই চূড়ান্ত নয়।
গত ৩ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহত ও নিহতদের পাশাপাশি নিখোঁজদের সংখ্যার বিষয়ে জানতে চাইলে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহিদ হোসেন বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তথ্য এখনো পুরোপুরি ফাইনাল হয়নি। আমরা প্রতিদিনই তথ্য পাচ্ছি। অনেক তথ্য যাচাই-বাছাইতে বাদ পড়ছে। আর যারা সঠিক আছে তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
আন্দোলনে আহত ও নিহতদের বাইরে নিখোঁজদের বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তবে এখনো সংখ্যা প্রকাশের সময় আসেনি। তবে আমরা নানা মাধ্যম থেকে গণ কবর ও নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও প্রয়োজন।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বর্তমানে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ বেশ কয়েকজনের সমন্বয়কের মোবাইল ফোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে কয়েকজন সহ সমন্বয়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন নিহত অজ্ঞাত শহীদদের কবর সংরক্ষণ ও সংস্কারের বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদির বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা প্রথমে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের তালিকা সংগ্রহে কাজ করেছি। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে আমার এই বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন বেষম্য বিরোধী আন্দোলনে নিহত অজ্ঞাত শহীদ ও গণকবরের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য। আমি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ৯ দফা দাবির প্রস্তাবক কাদির আরও বলেন, বেষম্য বিরোধী আন্দোলনে পক্ষ থেকে গণ কবরের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি অন্তবর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস পরিদর্শনে যাওয়ার কথা। সেই সময়ে অজ্ঞাত শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় গণ কবর সংস্কার ও সংরক্ষণের বিষয়ে আরও নির্দেশনা আসবে।
আঞ্জুমান মুফিদুলের ইসলামের তথ্যমতে, আন্দোলনচলাকালীন গত ২২ জুলাই থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ৪টি হাসপাতাল এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্ট্রেশন ও প্যালেস্টাইন এ্যামবেসী থেকে ১ টি করে দুইটি মরদেহসহ মোট ৬৯টি মরদেহ দাফন করেছে আঞ্জুমান। সাধারণত অজ্ঞাত মরদেহ কয়েকদিন হাসপাতালে রাখা হয়।
আঞ্জুমানের তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটি এসব মরদেহ রাজধানীর রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করেছে। এসব মরদেহের মধ্যে ২২ জুলাই ১১টি, ২৩ জুলাই ১টি, ২৪ জুলাই ৯টি, ৫ জুলাই ৩টি, ২৭ জুলাই ৭টি, ২৮ জুলাই ১১টি, ২৯ জুলাই ১ টি ও ৩১ জুলাই ৩টি মরদেহ দাফন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ১৪ থেকে ২১ জুলাই কোন মরদেহ দাফন করেনি তারা, এমন তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া আগস্ট মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত তারা দাফন করেছে ২৩টি মরদেহ।
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের তথ্য মতে, তারা ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড মেডিকেল, শহীদ তাজুদ্দিন মেডিকেল থেকে সংগ্রহ করেছে। মেডিকেল ছাড়া বাইরে থেকে তারা কোন মরদেহ সংগ্রহ করেনি।
তথ্য বলছে, ১ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত যত মরদেহ দাফন করা হয়েছে-তার কোনো হিসেব নেই কবরস্থান কর্তৃপক্ষের কাছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন দায়িত্বরতরা।
তারা বলছে, এ সময়ে সেখানে কোন অজ্ঞাত মরদেহ দাফন করা হয়নি। যদিও আগস্টের ওই সময়েই সবচেয়ে ভয়ংকর হণহত্যা চালানো হয়। পুলিশ ও সরকার দলীয় নেতকর্মীদের গুলিতে সবচেয়ে বেশি ছাত্র-জনতা নিহত হয়।
আঞ্জুমানের তথ্যমতে, রায়ের বাজার কবরস্থানে মাত্র ৬৯টি মরদেহ দাফন করেছে। সাধারণত বেওয়ারিশ মরদেহ দাফনের নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। তবে সেখানে দাফনকৃত কবরের সংখ্যা গুনে শতাধিক পাওয়া গেছে। রায়েরবাজার কবরের দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই মাসে ৮১টি ও আগস্টে ৩৩টি অজ্ঞাত মরদেহ দাফন করা হয়েছে। তবে জুরাইন ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানেন দায়িত্বরতরা অজ্ঞাত মরদেহ দাফন হয়নি বলে জানিয়েছেন।
রাজধানীর পল্টন থানার বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ভিপি নুরের দল গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের দূর্ণীতি অনিয়ম, গুম হত্যা, ব্যাংক লুট, ভোট ডাকাতিসহ ফ্যাসিবাদী আচারণের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা ও গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মনিরুজ্জামান সুমনকে গ্রেফতার করেছে পল্টন থানা পুলিশ।
এরআগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন গণ অধিকার পার্টির কর্মী ও হামলায় চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়া রুবেল। গুলিতে মামলার বাদীর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার শাসনামলের বিভিন্ন মন্ত্রী ও নেতাদের আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাসহ অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের গুম, হত্যা, ব্যাংক লুট, ভোট ডাকাতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা চর্চার প্রতিবাদে গণ অধিকার পরিষদ ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর দুপুরে শান্তিপূর্ণ মহা সমাবেসের আয়োজন করে। মামলার বাদী মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময়ে আসামিদের নির্দেশ ও প্রত্যদক্ষ মদদে অজ্ঞাত ৩০০/৩৫০ জন ব্যক্তি ও পুলিশের পোষাক পরিহিত ব্যক্তিরা অতর্কিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে বাদী রুবেল গুলি বৃদ্ধ হয়ে মঞ্চে লুটিয়ে পড়ি এবং তার ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়। প্রানে বেঁচে গেলেও তার ডান চোখর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায় এবং চোখের গঠনগত দিক থেকে ছোট হয়ে যায়। সেদিন মঞ্চে থাকা বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান সহ অনেকেই বুকে গুলি বিদ্ধ হয়।
পল্টন থানা সূত্রে জানা গেছে, পল্টন এলাকায় ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় আন্দোলনকারীদেও ওপর নৃশংসভাবে হামলা ও গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। হামলাকারীদের মধ্যে শান্তিনগর এলাকার বাহিন্দা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মনিরুজ্জামান সুমন অন্যতম।
এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত পহেলা অক্টোবর শান্তিনগরে অভিযান চালিয়ে সুমনকে গ্রেফতার করে পল্টন থানা পুলিশ। পরবর্তীতে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। সুমন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
খাগড়াছড়িতে দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময়ের স্থবিরতা কাটিয়ে আজ থেকে পর্যটকদের জন্য খোলা হয়েছে খাগড়াছড়ি ও সাজেকের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে সাজেক যেতে খাগড়াছড়ি শহরের কাউন্টার এলাকা পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখরিত।
গত ৮ অক্টোবর থেকে পর্যটকদের খাগড়াছড়িতে ভ্রমণে বিরত থাকার পর আজ আবার চালু হওয়ায় খুশি ঘুরতে আসা পর্যটকরা। প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগে অনেকে এসেছেন বন্ধু বান্ধব ও পরিবার পরিজন নিয়ে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পর্যটকদের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে শুক্রবার ও শনিবারের জন্য আগাম বুকিং হচ্ছে সাজেক ও খাগড়াছড়ির হোটেল, কটেজ গুলো।
সাজেকের পাশাপাশি খাগড়াছড়ির আলুটিলা, রিছাং ঝর্ণাসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে পর্যটকদের পদাচরণায় মুখর হবে বলে আশাবাদী এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্তরা।
বগুড়া থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক রানা বলেন, বাইকে করে সাজেকে আসার শখ ছিল অনেক দিন ধরে। আজ সুযোগ হয়েছে, আমরা বন্ধুরা খুব খুশি। আশা করি ভালো ভাবে ঘুরে আসতে পারব।
সাজেক পরিবহন কাউন্টারের লাইনম্যান আরিফ খান বলেন, দীর্ঘ দেড় মাস পর আজ থেকে স্বাভাবিকভাবে সাজেক সড়কে পরিবহন চলাচল করছে। প্রথম দিনে ২৫ টির মতো পিকআপ ও জিপ সাজেকের উদ্দেশে গেছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, পর্যটকরা যেন নিরাপদে সাজেকসহ জেলায় ভ্রমণ করতে পারেন সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। আশা করি আসন্ন পর্যটন মৌসুমে খাগড়াছড়ি জেলায় ব্যাপক পর্যটকের সমাগম ঘটবে।
প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংস ঘটনার জেরে পর্যটকদের পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানায় স্থানীয় প্রশাসন।
ইসলামি মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশেপাশের প্রায় কয়েক কিলোমিটার জুড়ে শুধুই আলেম-ওলামাদের সম্মিলন ঘটেছে। যেখানে সারাদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আসতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে যোগ দিতে ভোর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-ওলামাদের সম্মেলনস্থলে আসতে দেখা যায়। এ সম্মেলন দুপুর ১টা পর্যন্ত চলার কথা রয়েছে।
এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ, নীলক্ষেত, ঢাকা মেডিকেল, সচিবালয় ও হাইকোর্টের সামনের দিক দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহরাওয়ার্দীর সামনে দিয়ে যেতে চাওয়া গাড়িগুলোকে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছে। এদিক যেতে চাওয়া গাড়িগুলোকে বিকল্প পথে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিপুল পরিমাণ জনতার ঢলে রাজধানী জুড়ে দেখা দিয়েছে যানজট। গুলিস্তান, কাকরাইল, শাহবাগ, নীলক্ষেত সহ সোহরাওয়ার্দীর দিকে আসা প্রতিটি রাস্তায় ছিলো বিপুল ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতি।
মিরপুর থেকে আসা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক মুফতি ইউনুস আদনান বলেন, মাওলানা সাদের অনুসারীরা তাকে দেশে এনে মুসলমানদের মধ্যে একটি বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমাদের ইসলামী দাওয়াতের কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদসহ টঙ্গী ইজতেমায় বিভক্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে অথচ দেশের অধিকাংশ আলেম-ওলামা সহ ধর্মপ্রাণ মুসলমান তার বিপক্ষে। এমতাবস্থায় যদি তাকে দেশে আনার পায়তারা করা হয় দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবার আশঙ্কা থেকেই আমাদের আজকের এই সম্মেলন।
এসময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ট্রাকে করে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা মানুষের মাঝে বিভিন্ন খাবার সামগ্রী ও পানি বিতরণ করতে দেখা যায়।
তেমনই একজন মিজান মিয়া। তিনি কামরাঙ্গিরচর থেকে এসেছেন সমাবেশে যোগ দিতে। আসার সময় নিজেরাই কয়েকজন মিলে টাকা উঠিয়ে দুই হাজার পিস পানির বোতল নিয়ে এসেছেন। এগুলো সম্মেলনে আসা মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করছেন।
মিজান মিয়া বলেন, অনেকেই অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন এখানে। অনেকের হাতে হয়তো টাকা নেই, হেটে চলে আসছেন। এই গরমের মধ্যে তাদের সামান্য সাহায্য করার জন্যই এই চেষ্টা।
এর আগে, কওমি মাদরাসাভিত্তিক আলেমরা একাধিক সংবাদ সম্মেলন করে সর্বস্তরের ওলামা-মাশায়েখ ও সাধারণ জনগণকে সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে, ২০১৯ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রথম পর্বে মাওলানা সাদের অনুসারীরা অংশ নেন, এবং দ্বিতীয় পর্বে অন্য পক্ষের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। তবে এবার মাওলানা সাদের অনুসারীরা দাবি করছেন, তারা প্রথম পর্বে ইজতেমা করতে চান। এই দাবি নিয়ে কওমি মাদরাসাভিত্তিক আলেমরা বিরোধিতা জানান এবং তাদের পক্ষ থেকে ইসলামি মহাসম্মেলনের আয়োজন করা হয়।