‘বাবাকে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে যুদ্ধে যাই’



রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ। ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মুক্তিযুদ্ধের বছর ১৯৭১ সালে আমি গৌরীপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তখন আমি ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। একদিন শনিবার বাবাকে বললাম পাশের গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছি। এরপর কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে ঘরে থাকা দশ টাকা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে পায়ে হেঁটে বিজয়পুর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত যাই। ভারতের মেঘালয় প্রদেশে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধ করি। এরপর ৫ নভেম্বর গৌরীপুর ফিরে আসি। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গৌরীপুর হানাদার মুক্ত করি।’

১৯৭১ সালে দেশ রক্ষার যুদ্ধে যাওয়ার গল্পটা এভাবেই বার্তা২৪.কমের কাছে তুলে ধরেন সেদিনের বিশ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ।

আবুল কালামের বাড়ি উপজেলার বেকারকান্দা গ্রামে। তার বাবা মৃত জোবেদ আলী সরকার। মা মৃত আমেনা বেগম। দুই ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ জেলা শহরের জজ কোর্টে আইন পেশায় আছেন। দাম্পত্য জীবনে তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

শনিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে পৌরশহরে হাতেম আলী রোডস্থ আবুল কালামের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বসে কথা হয় এ প্রতিনিধির। কথা প্রসঙ্গে যুদ্ধদিনের নানা ঘটনা তুলে ধরেন তিনি। আবুল কালাম বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই ভাষণ শোনার পর আওয়ামী লীগ নেতা হাতেম আলী মিয়া এমসিএর নেতৃত্বে আমরা ২০-২৫ জনের একটি দল সংঘবদ্ধ হই। ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হয়। ১৬ এপ্রিল হাতেম আলী ভাইয়ের নির্দেশে আমরা কয়েকজন সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাটের কুদরত আলী মণ্ডল এমসিএর কাছে যাই অস্ত্র আনার জন্য। কিন্তু কুদরত ভাই অস্ত্র না দিয়ে ভারত চলে যান। তাই খালি হাতে ফিরতে হয় গৌরীপুর।

এদিকে গৌরীপুর ফিরে জানতে পারি হাতেম আলী তার লোকজন নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ভারত চলে গেছেন। মন খারাপ হয় আমার। কিন্তু আমি দমে যাওয়ার পাত্র নই। ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল আমি বাবাকে জানাই পাশের গ্রামে বেড়াতে যাচ্ছি। এরপর কাপড়ের ব্যাগ ও দশ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে ভারতের পথে রওনা হই। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন স্থানীয় কনু মিয়া, নূরুল আমিন ও একটি হিন্দু ছেলে। পথিমধ্যে দূর্গাপুর থানার কাকুড়াকান্দা গ্রামে পৌঁছালে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারী আমাদের গতিরোধ ও মারধর করে বেঁধে রেখে মালামাল লুট করে।

এর একদিন পর দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে দূর্গাপুরের বিজয়পুর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের বাঘমারা বিএসএফ ক্যাম্পে যাই। সেখানে গিয়ে দেখা হয় গৌরীপুরের হাতেম আলী ভাই, ফজলুল হক, ডা. এম এ সোবহান, নজমুল হুদা এমসিএ, তোফাজ্জল হোসেন চুন্নু, হাসিম ভাইসহ পরিচিত অনেকের সঙ্গে। সেখান থেকে মেঘালয় ক্যাম্পে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেই। ইংরেজি ও হিন্দি ভাষায় দক্ষতা থাকায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আমি দোভাষীর দায়িত্ব পালন করতাম।

যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষে আমিসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সশস্ত্র দল মেঘালয় সীমান্তের জক্স গ্রামে আস্তানা করি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ওই দলটির কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন চুন্নু। ভারত থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে ঢুকে প্রায়ই পাকিস্তানি ক্যাম্পে হামলা করে আস্তানায় ফিরে আসতাম।

১৯৭১ সালের ২৫ জুন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মুরারি আমাদের নিয়ে বিজয়পুর পাকিস্তানি ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করে। ২৬ জুন ভোর ৬টায় বিজয়পুর বাঘমারা এলাকার মধ্যবর্তী পাহাড়ে আমরা ৭২ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি দল ভারী অস্ত্র, গোলাবারুদসহ সশস্ত্র অবস্থান নেই। সাড়ে ৬টায় দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। অর্ধশতাধিক পাকসেনা মারা যায়। একটি গাছের আড়াল থেকে আমি ও সহযোদ্ধা সন্তোষ পাকবাহিনীদের লক্ষ্য করে গুলি করছিলাম। এ সময় পাকবাহিনীর একটি মর্টার শেল সন্তোষের মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় সে। ওই যুদ্ধে অর্ধশতাধিক পাকসেনা আমাদের হাতে মারা যায়। আমরা জয়ী হয়ে বিজয়পুর ক্যাম্পে লাল সবুজ পতাকা ওড়াই। তবে প্রতিকূল পরিবেশের কারণে সেদিন সন্তোষের মৃতদেহ ধর্মীয় রীতিনীতি ছাড়াই পুড়িয়ে ফেলতে হয়েছিল।’

কথা প্রসঙ্গে আবুল কালাম বলেন, ‘বিজয়পুর ক্যাম্প দখলের কিছুদিন পর দূর্গাপুর থানার কলসিন্দুর গ্রামে আমার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল পাকবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। ওই যুদ্ধে নয়জন পাকসেনা মারা যায়। আগস্ট মাসে আমরা তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর নেতৃত্বে দূর্গাপুরের ঘোঁষগাও গ্রামে পাকিস্তানি ক্যাম্পে হামলা চালাই। দেড়ঘণ্টার যুদ্ধে আমাদের দুজন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারায়।’

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নিয়ে গৌরীপুর আসেন আবুল কালাম। পাকিস্তানি দোসর ও রাজাকাররা তখন গৌরীপুর থানায় অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধাদের গতিবিধি পাকবাহিনীকে অবহিত করত।

আবুল কালাম বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় কোম্পানি কমান্ডার রফিকুল ইসলাম ও আমাদের দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গৌরীপুর থানা দখল করি এবং লাল সবুজ পতাকা ওড়াই। তখন পাকিস্তানি দোসর ও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে। অনেকে পালিয়েও যায়। হানাদার মুক্ত হয় গৌরীপুর।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর পাকবাহিনী যেন এলাকায় না ঢুকতে পারে সেজন্য ৮ ডিসেম্বর রাতে গৌরীপুর-ময়মনসিংহ রেলপথের একটি ব্রিজ ও ৯ ডিসেম্বর গৌরীপুর-ময়মনসিংহ সড়কপথের গুজিখা ব্রিজ বোমা মেরে ধ্বংস করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেই। ১০ ডিসেম্বর ব্রহ্মপুত্র নদী পাড় হয়ে জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত করি।’

আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ ১৯৭২ সালে ডিগ্রি, ১৯৭৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করে আইন পেশায় যুক্ত হন। একই বছর তিনি গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি বর্তমানে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গৌরীপুর শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

   

টেস্ট করাতে টানাটানি, আনসারদের দৌরাত্মে বেহাল হাসপাতাল



রাকিব হাসান, গুলশান জাহান সারিকা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

"দ্য গুড ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য ডিজিস, দ্য গ্রেট ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য পেশেন্ট হু হ্যাজ দ্যা ডিজিসেজ" স্যার উইলিয়াম অসলারের উক্তিটি আর যে কোনোভাবেই দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়, তা বলা বাহুল্য। এখানে হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতেই জেরবার হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পদে পদে হতে হচ্ছে হয়রানি আর প্রতারণার শিকার। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পরপর দুই দিন সরেজমিন দেখে এর প্রমাণ মিলেছে। 

১৫ মে বুধবার সকাল ১১টা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শিউলি বেগম। এখানে এসে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে। প্রথমে দীর্ঘ সিরিয়াল দাঁড়িয়ে টিকেট কেটেও দীর্ঘ অপেক্ষা। অবশেষে ডাক্তার দেখাতে পারলেও তার দেয়া টেস্টের একটি বড় তালিকা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন শিউলি। এতসব নানা রকমের টেস্ট! কোথায় করবেন কিভাবে করবেন তার কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া তিনি পাননি হাসপাতাল থেকে। কিন্তু হাজির আনসার সদস্যরা। হাসপাতালের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাই এখন টেস্ট বাণিজ্যের দালাল। রোগীর হাতে টেস্টের কাগজপত্র দেখলেই আনসার সদস্যরা শুরু করে দেয় ডাকাডাকি- টানাটানি। 

নিজেদের মধ্যেই চলে পাল্লাপাল্লি। কোন রোগীকে কে কব্জা করবে। যেখানে রোগীর লাইন, সেখানেই আনসারের দৌরাত্ম। টিকেট কাটতে আসা রোগীদের ভীর ঠেলে আনসার ঢুকে যাচ্ছে কারো জন্য লাইন ভেঙ্গে টিকেট কেটে দিয়ে টুপাইস কামিয়ে নিচ্ছে। ডাক্তার দেখানোর সিরিয়ালেও তারা হানা দিচ্ছে। টাকা নিয়ে পড়ে আসা রোগীকে আগে সিরিয়াল পাইয়ে দিচ্ছে। ইমার্জেন্সি বিভাগে আসা রোগীদের ক্ষেত্রেও তাদের দৌরাত্ম দেখা গেলো। গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরও পেছনে ফেলে আনসারের আনা রোগীদের আগে দেখা হচ্ছে। আর এসব দেখার কেউ নেই। 

কোন কোনো রোগীর স্বজনদের দাবি, আনসার সদস্যদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলে কটাক্ষ আর গালাগাল শুনতে হয় তাদের। 

এখানেই শেষ নয়, হাসপাতালের কর্মচারী আর আনসারদের যোগসাজশে চলছে ট্রলি কিংবা হুইলচেয়ারের বাণিজ্যও। সরকারের এসব সামগ্রী রোগীর জন্য বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা হলেও তা চলে গেছে এইসব অসাধুদের দখলে। তারা সেগুলো কব্জায় রেছে রোগী বুঝে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে ছাড়ছে। রোগী পৌঁছালেই তারা শুরু করে দেয় ট্রলি নিয়ে দরকষাকষী। কেউ টাকা না দিলে তাদের রোগীকে ছুয়ে পর্যন্ত দেখে না কর্মচারীরা। আর যদি কোনো রোগীর স্বজন সামান্য প্রতিবাদও করে তাহলে তাদের কপালে জোটে দুর্ব্যবহার। 

পরিচয় গোপন রেখে ইমার্জেন্সি বিভাগে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্য আ: হাই এর সাথে কথা বলে জানা যায় এম্বুলেন্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টসহ প্রায় সকল সার্ভিস তিনি দিতে পারবেন। 

অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যাবে কি-না? এমন প্রশ্নে বললেন, হাসপাতালের মাত্র একটা এম্বুলেন্স সেইটা কই আছে জানিনা। তবে যদি কেউ প্রাইভেট এম্বুলেন্স চায় তাহলে যেকোনো সময় তিনি ম্যানেজ করে দিতে পারি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলের ভাড়া কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫০০-১৬০০ টাকা হলেই চলবে। 

আনসার সদস্য আ: হাইকে দেখা গেলো একজন রোগীর আত্মীয়র সঙ্গে তার ব্যস্ত সময় কাটছে। রোগীর ব্যবস্থাপত্র /টেস্টের তালিকার ছবি তুলে হাসপাতালের কোন একজন প্যাথলজিষ্টকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দিলেন। উল্টো দিক থেকে জেনে নিচ্ছেন তার খরচ কতো ইত্যাদি। যেনো তিনিই রোগীর সবকিছু। 

হাসপাতালে কি এসবের ব্যবস্থা নেই? এমন প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মীর সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন, প্রতিদিন সকালে মাত্র ৫০ জন রোগীর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয় হাসপাতালে। তবে নানা রকমের সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে হাতে গোনা কয়েকটি ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট ছাড়া বাকি সব টেস্ট বাইরে থেকেই করতে হয়। 

ভুক্তভোগী শিউলি বেগম জানালেন, তার সন্তানের বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর ও বমি। সকালে হঠাৎ জ্বরের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কিছু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে টেস্ট করতে নানা রকমের ঝক্কি-ঝামেলা ও রিপোর্ট পেতে একদিন দেরি হবার কথা জানায় হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মচারীরা। এ সুযোগে একজন আনসার সদস্য তার হাতে থাকা টেস্টের কাগজপত্র দেখে ছবি তুলে নেন। এবং সকল টেস্ট তিনি করিয়ে দেবার আশ্বাস দেন। 

হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে অবহেলা করে টেস্ট বাণিজ্যের সাথে আনসার সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে এবং টেস্ট এর রেজাল্টের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বার্তা ২৪ কে বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তা স্বীকার করছি। তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া আনসার সদস্যদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও টেস্ট বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি কোন আনসার সদস্য এমন কাজে জড়িত তাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আমাদের প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে খুব শীগ্রই আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশাকরি এম্বুলেন্স যুক্ত হলেই এই সংকটেরও সমাধান হবে, বললেন ডা. শফিউর। 

এক পর্যায় প্রতিবেদকের দেয়া তথ্য ও ছবি হাতে পেয়ে পরিচালক ডা. শফিউর রহমান তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আনসার সদস্যকে ক্লোসড করেন। সেই সাথে এমন অনিয়মের কোন খবর চোখে পরলে সংবাদকর্মীদের জানানোর অনুরোধ করেন।

;

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, কুমিল্লা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। 

শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭ টার দিকে মহাসড়কের নানকরা এলাকায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী রিলাক্স পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ ঘটনা ঘটে। 
স্থানীয়দের বরাতে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জেনেছি। দুর্ঘটনা-কবলিত গাড়িটি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
;

রাণীনগরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরী পুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের সরকারি ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন কালিগ্রাম মুনসিপুর গ্রামের মৃত তহির উদ্দীন মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলাম।

সরেজমিন ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরী পুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েক দফায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর ও ভূমি গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে নির্মাণ করলেও এই প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই অনৈতিকভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন যাদের জমি ও বাড়ি আছে সেই সব ব্যক্তিরা। বরাদ্দ প্রাপ্তদের নিজের জমি ও বাড়ি থাকায় সেখানে বসবাস না করে উদ্বোধনের কিছুদিন পর হতে শুরু হয় ঘর ক্রয়-বিক্রয়। এই ক্রয়-বিক্রয়ে অনেকে যারা বৈধ্য উপায়ে ঘর পায়নি তারা নিরূপায় হয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘর ক্রয় করে বসবাস করছে। আবার অনেকে অল্প দামে ঘর কিনে রাখছে বেশি দামে বিক্রয়ের আশায়। এ যেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে শুরু হয়েছে ঘর-ক্রয় বিক্রয়ের মহোৎসব।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ নং ঘর বিক্রয় করেন মো. বেনো হোসেন, ক্রয় করেন আজিজার। ৩৫ নং ঘর মো. ফেকরুল বিক্রয় করেন ডাকাহার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলীর কাছে এবং একই ঘর ইউনুছ আলী বিক্রয় করেন দুলালের নিকট। ৩৭ নং ঘর আলম বিক্রয় করেন শরিফুলের কাছে। ডাকাহার গ্রামের ছলিম উদ্দীনের নিজস্ব জমি থাকার পরও বাপ-ছেলে ২টি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে, এছাড়াও তারা ২টি ঘর বিক্রয়ের জন্য ক্রয় করে রেখেছে। রহমান কবিরাজ ওই গ্রামের মধ্যে তার ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ি আছে ,তবু ২টি ঘর কিনে রেখেছেন তিনি।

আশ্রয়ণের সহ-সভাপতি (ডাবওয়ালা) হাচিন আলীর জমি ও বাড়ি থাকার পরও তার মা হাসিনা বেগমের নামে ১টি ঘর, নিজের নামে ১টি ঘর ও স্ত্রীর নামে ১টি ঘরসহ মোট ৩টি ঘর বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন। মায়ের ঘর বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের নিকট দামাদামি চলছে। আশ্রয়ণের এসব ঘর বিক্রয়ের মূল হোতা হাচিন আলী বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, হাচিনের কোনো কিছুর অভাব নেই। তার গ্রামের মধ্যে অনেক সম্পদ আছে। ঘরগুলো নিজে দখল করে আছে এমনকি সে বিলাসবহুল জীবন কাটায় এই ঘরে।

অভিযোগের সত্যতা মিলে সেখানে গিয়ে, হাচিনের ঘরে নামি-দামি আসবাবপত্র, ফোনসহ বিলাসবহুল জীবন কাটছে। ঘরের রং বদলিয়ে আলাদা রং করা হয়েছে। যা দেখে বুঝার উপাই নেই এটি আশ্রয় প্রকল্পের ঘর।

এই প্রকল্পে ৫৯টি ঘরের মধ্যে ২০টি ঘর ব্যতিত সবই ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতে বঙ্গবন্ধু কন্যার মুজিব বর্ষের মূল উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল । অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে প্রযোজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

উপকারভোগী নারগিসের কাছ থেকে ৩০ নং ঘর ক্রয় করেন আশরাফুল, যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন ঘর পাইনি তবে নারগিস আমাকে বসবাসের জন্য ঘরটি থাকতে দিয়েছে। ক্রয় করেছেন কিনা প্রশ্নে বলেন, কাগজ করে নিয়েছি তবে কোন টাকা দেয়নি।

এ ব্যাপারে একডালা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম (আপেল) জানান, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ৫৯টি ঘর আছে। এখানে প্রকৃত ভূমিহীনরা ঘর না পাওয়ায় অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। ঘর বেচাকেনা হয়েছে প্রমাণ করার পরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

একডালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার ভূমিমিহীনদের ঘরগুলো বিক্রয় হচ্ছে। আমি মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়ে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি। ঘর বিক্রির সঙ্গে আশ্রয়ণের কয়েকজন নেতা জড়িত বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি, ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;

সিলেটে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেট নগরীর মিরাবাজারে এক সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অ্যাম্বুল্যান্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাত সোয়া ১২টার দিকে মিরাবাজারেস্থ বিরতি ফিলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।

এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত আমীন তৌহিদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে বিরতি ফিলিং স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিকে তারা এসে তা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালান।

এ ব্যাপারে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বেলাল আহমদ জানান, আগুন লাগার পর ফায়ার ফাইটাররা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে এসে অগ্নিনির্বাপণ কাজ শুরু করেন।

তিনি জানান, আগুনের সূত্রপাত মূলত অ্যাম্বুলেন্স থেকে। আগুনে অ্যাম্বুলেন্সটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আপাতত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিরতি ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হন ৯ জন। পরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা যান।

;