একটি ‘দেশলাই কাঠি’ নিভিয়ে দিল তিন বোনের জীবন!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

একটি ‘দেশলাই কাঠি’ নিভিয়ে দিল তিন বোনের জীবন!

একটি ‘দেশলাই কাঠি’ নিভিয়ে দিল তিন বোনের জীবন!

সারথি রানী দাশ, সাকসি রানী দাশ ও হ্যাপি রানী দাশ- তিন বোন। মিঠুন দাশ ও আরতি দাশ দম্পতির চোখের মনি। বাবা-মা দুজনেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী। মেয়েদের নিয়ে সুখের সংসার তাদের। কিন্তু তা স্থায়ী হলো না। একটি দেশলাইয়ের সর্বনাশা আগুন কেড়ে নিয়েছে তাদের তিন রাজকন্যার প্রাণ।

ঘটনা ঘটেছিল গত ২০ জুন চট্টগ্রাম নগরের বান্ডেল রোডের সেবক কলোনির এলাকায়। প্রতিদিনের মতো মা-বাবা সন্তানদের রেখে ভোরে কাজে চলে গেছেন। সকালে বের হয়ে যাওয়াতে হয়তো তারা আগুন থেকে বেঁচে গেলেন। কিন্তু এখন এই বেঁচে থাকার কোনো মূল্য নেই তাদের জীবনে। সারথি রানী দাশ (১৭), সাকসি রানী দাশ (১৩) ও হ্যাপি রানী দাশ (৬) কে হারিয়ে শোক প্রকাশের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন মিঠুন-আরতি দম্পতি।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, ওই দিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বান্ডেল রোডের ঘরের ভেতরে একটা বিকট শব্দ হয়। শব্দ শুনে ও ঘর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরে চার মেয়েকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। তার মধ্যে তিন বছর বয়সী ছোট মেয়ে সুইটি কিছুটা কম দগ্ধ হয়। সারথি ও হ্যাপির অবস্থার অবনতি হলে দুদিন পর ২২ জুন রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।

এদিকে মেঝ মেয়ে সাকসি রানী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুন চমেক হাসপাতালে মারা যায়। এতেই যেন শুরু চলে যাওয়ার পালা।

বিজ্ঞাপন

সাকসির সৎকার শেষে মিঠুন ও আরতি ঢাকায় চলে যান বাকি দুই মেয়েকে সুস্থ করতে। এরপর ৩০ জুন সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিভে যায় বড় মেয়ে সারথি রানীর জীবন প্রদীপ।

সেঝ মেয়ে হ্যাপিকে হাসপাতালে রেখে বড় মেয়ের সৎকারে চট্টগ্রামে আসেন বাবা-মা। সৎকার শেষে পুনরায় ঢাকায় ফিরে হ্যাপিকে সুস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন চালিয়ে যান তারা। কিন্তু সেই হ্যাপিও আর ধরে রাখা গেল না। গতকাল বুধবার (১২ জুলাই) সকালে নিভে গেল তার জীবান প্রদীপও। হাসপাতালের যাবতীয় কাজ শেষে গতরাতে হ্যাপির মরদেহ নিয়ে চট্টগ্রামের আসেন মিঠুন ও আরতি দম্পতি।

কোতোয়ালি থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন মেজবোন সাকসি সকালে ছোট বোনের জন্য দুধ গরম করে ভুলে চুলা বন্ধ না করে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেক পর বড় বোন সারথী ওঠে ছোট বোনের জন্য পুনরায় দুধ গরম করতে যান। এসময় দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। এতে চার বোন দগ্ধ হয়।

স্থানীয় কাউন্সিলর বাবু জহর লাল হাজারী বলেন, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। তিনজনের অবস্থায় গুরুতর ছিল। দুজনকে ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেই একে একে দুজন মারা যায়। সেখানেই একে একে দুজন মারা যায়। এর আগে চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।