অসময়ে তরমুজ চাষ করে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা
অসময়ে বাণিজ্যিকভাবে মাচায় তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা। কম খরচে অধিক ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান চাষি। এর আগে অসময়ে তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবার অনেক কৃষক এই তরমুজ চাষ করে লাভের আশায় রয়েছে। বিশেষ জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আবাদে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানায় কৃষি বিভাগ।
ঠাকুরগাঁওয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিশেষ জাতের ব্লাক কুইন, ইয়েলো ড্রাগন আর ব্লাক হানি জাতের তরমুজ। এসব তরমুজের ভেতরের অংশের রঙ কখনো হলুদ কখনো লাল। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু, আবাদে খরচ কম। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় খুশি কৃষক।
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভাতারমাড়ি ফার্মের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ২৭ একর (৫৪ বিঘা) জমিতে মাচায় তরমুজ চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন কৃষকেরা।
তরমুজ চাষি লিপু মিয়া বলেন, আমি ইউটিউবে অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষের ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়ে এইবার বাণিজ্যিকভাবে এই তরমুজের আবাদ করি। লেখাপড়ার পর আমি বেকার ছিলাম। একদিন হঠাৎ করে ইউটিউবে দেখি গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন অনেকেই। তখন আমিও অসমেই তরমুজ চাষ করি। আমি এবার দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো। আমি আশাকরি প্রায় ৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।
কথা হয় পাশের এলাকার ফয়জুল নামে এক কৃষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্রতিবারেই সিজিনাল যে তরমুজটা হয় সেটা করে থাকি কিন্তু এবার গ্রীষ্মকালীন যে তরমুজ সেটা চাষ করেছি। আমি প্রায় দেড় একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। আমি আশা করি তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।
আগে বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষ করতো না কৃষক। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন বর্ষাকালেও মাচায় তরমুজ চাষ হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে বীজ যেন পচে নষ্ট না হয় সেজন্য উন্নতমানের পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বীজ অঙ্কুরোদগম হয়ে চারা বেরিয়ে আসে। বর্তমানে মাচায় এখন অনেক তরমুজ ঝুলছে। প্রতিটি তরমুজ ৩-৪ কেজি ওজনের। লাল ও হলুদ বর্ণের এ তরমুজগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। আর অসময়ে এমন সুন্দর তরমুজ দেখতে প্রতিদিন দুরদুরান্ত থেকে সাধারণ মানুষ আসছে তরমুজ ক্ষেতে।
তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসা দর্শনার্থী লিমন বলেন, তরমুজগুলো দেখতে অনেক সুন্দর। আর এই সময়ে মাচায় তরমুজ চাষ হয় এটা দেখার জন্যই শহর থেকে ছুটে আসা। দেখার পরে অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম। কৃষিতে প্রযুক্তি আজ কৃষিকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। আমরা এখন সারাবছর তরমুজ খেতে পারবো।
তরমুজ চাষি জয়নাল হোসেন জানান, অসময়ে মাচায় তরমুজ চাষের কথা শুনে অনেকেই পাগলামি বলে ভেবেছিল। পরে যৌথভাবে আমরা চাচা ভাতিজা মিলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের জন্য এই তরমুজ আবাদ করি। প্রায় ৫০ দিনের কঠোর পরিশ্রমের ফলে এখন আমরা তরমুজের ফলন ভালো দেখতে পাচ্ছি। ৬০ দিনের মাথায় তরমুজ কাঁটা শুরু করবো। বাজারজাত ভালোভাবে করতে পারলে ও বাজারে দাম ভালো পেলে লাভবান হব আশা করছি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাচায় তরমুজ চাষে উৎপাদন খরচ খুব একটা বেশি না। এই তরমুজ অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু। চাষিরা যাতে তরমুজ কোন অসুবিধা ছাড়াই বাজারজাত করতে পারে সেজন্য আমরা সকল ধরনের সহযোগিতা করবো। নতুন এই পদ্ধতি গোটা জেলায় প্রায় (২৭) একর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। আমরা তাদের সকল সহযোগিতা দিয়ে আসছি।