রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো সংকট নেই



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো সংকট নেই। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং বাণিজ্য এই তিনটি ভিত্তির ওপর বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে।

পররাষ্ট্রসচিব মো.  শহীদুল হক বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ- রাশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার আই ইগ্নাটভ বলেন, রাশিয়া চায় রোহিঙ্গারা নির্বিগ্নে ফিরে যাক। তার সঙ্গে সঙ্গে এ নিয়ে দুই দেশ যে চুক্তি করেছে তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

তিনি বলেন, মস্কো-ঢাকার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশেষ করে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভিত আরও মজবুত করতে ব্যাংকিং চ্যানেল স্থাপনে জোর দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে শিগগিরই রাশিয়ার ব্যাংক চালু হবে।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করতে অত্যন্ত আগ্রহী। প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে নির্মাণাধীন পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তারই উদাহরণ। তবে সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার করতে হলে দু’দেশের বেসরকারি খাতকেও একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্গোসহ এয়ার কানেক্টিভিটি ও সরাসরি সমুদ্র পথে যোগাযোগ স্থাপনেও রাশিয়া সরকারের আগ্রহের কথা জানান তিনি।

 

   

কক্সবাজারে পানিতে ডুবে একদিনে ৪ মৃত্যু



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
কক্সবাজারে পানিতে ডুবে একদিনে ৪ মৃত্যু

কক্সবাজারে পানিতে ডুবে একদিনে ৪ মৃত্যু

  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজারে পানিতে ডুবে একদিনে চার শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে পুকুরে ডুবে খালা-ভাগ্নির মৃত্যু, মসজিদের পুকুরে নেমে স্কুলছাত্রের মৃত্যু এবং সমুদ্রে বড় ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হয় ছোট ভাইয়ের।

শনিবার (১ জুন) কক্সবাজারের পেকুয়া, মহেশখালী এবং কক্সবাজার শহরে এমন মর্মান্তিক তিনটি পৃথক ঘটনা ঘটে।

পেকুয়ায় পুকুরে ডুবে খালা-ভাগ্নির মৃত্যু

শনিবার (১ জুন) সকালে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের কাদিমাকাটা গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে জন্নাতুল মাওয়া (৫) ও সিদরাতুল জন্নাত মুনিরা (৪) নামে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটনা ঘটে।

জন্নাতুল মাওয়া ওই গ্রামের জহির আলমের মেয়ে ও মুনিরা একই উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের বেলাল হোছাইনের মেয়ে। তারা সম্পর্কে খালা-ভাগ্নি।

স্থানীয় ওসমান নামে একজন জানান, সিদরাতুল জান্নাত মুনিরা নানার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। সকালে খালা জান্নাতুল মাওয়া ও ভাগ্নি মুনিরা খেলতে গিয়ে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন তাদের খোঁজ না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করলে পাশের বাড়ির একটি পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পায়। একপর্যায়ে তারা শিশু দু’টির মৃতদেহ উদ্ধার করে।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম জানান, পরিবারের লোকজনের অগোচরে খেলতে গিয়ে কেউ একজন পুকুরে পড়ে গেলে অপরজন তাকে বাঁচাতে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমন ঘটনা খুবই মর্মান্তিক।

মহেশখালীতে পুকুর থেকে স্কুল ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার

শনিবার (১ জুন) দুপুরে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকের ছনখোলা পাড়া জামে মসজিদের পুকুরে ভাসমান অবস্থায় নকীবুল ইসলাম (৯) নামের এক স্কুল ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে খেলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

নকীবুলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তার পিতা খাইরুল আমিন জানায়, নকীবুলকে আজকে দুপুরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া না গেলে, একপর্যায়ে ছনখোলা পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকার খুঁজতে গিয়ে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক নকীবুল কে মৃত ঘোষণা করে।

নিহত নকীবুল হোয়ানকের হরিয়ার ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বড় ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো ছোট ভাইয়ের

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে শনিবার (১ জুন) দুপুর ২টার দিকে ঢেউয়ের কবলে পড়ে রিফাত নামের এক কিশোর। পরে ওই কিশোরকে ঢেউয়ের কবল থেকে বাঁচাতে যায় এক সঙ্গে মাছ ধরতে আসা তার আপন ছোট ভাই সিফাত আলম। এতে ঢেউয়ের কবল থেকে রিফাত বেঁচে গেলেও বেঁচে ফিরেনি সিফাত আলম। বড় ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে ঢেউয়ের কবলে পড়ে মৃত্যু হয় তার।

নিহতের পিতা আব্দুস শুকুর জানান, ছোট একটি জাল নিয়ে রিফাত-সিফাত দুই ভাই নাজিরারটেক সাগরে খেলার ছলে মাছ ধরতে যায়। সেখানে রিফাত (বড় ছেলে) সমুদ্রের ঢেউয়ের কবলে পড়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছোট ছেলে সিফাত আলম (১০) জালসহ ঢেউয়ের কবলে পড়ে। পরবর্তীতে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

;

বাস মালিকদের সুবিধা দিতে রেলের কেউ বসে নেই: রেলমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রেলপথমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম বলেছেন, বাস মালিকদের কোন ধরণের সুবিধা দিতে রেলের কেউ বসে নেই। যদি এ ধরণের কোন কর্মের সাথে কেউ লিপ্ত হয় আর সেটা যদি প্রমাণ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে রেল মন্ত্রণালয় কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।

কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধের কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বাস মালিকদের বিশেষ সুবিধা দিতে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি বন্ধ করা হয়েছে। এটি সর্ম্পূণ মিথ্যাচার এবং কল্পনাপ্রসূত একটি সংবাদ। এটা সঠিক না। কল্পনানির্ভর করে কোন কিছু হয় না, বাস্তবে কল্পনা প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। মূলত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়

শনিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মাশালিয়া বাজারে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আশার কথা হলো এই ট্রেনটি ১২ জুন পুনরায় চালু হচ্ছে। আমাদের সম্পদ সীমিত। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা চেষ্টা করছি সবগুলো ট্রেনই চালু রাখার। মাঝে মাঝে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুয়েকটি ট্রেন বন্ধ হতে পারে। তবে আমরা সেটি দ্রুত পুনরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু ট্রেন বন্ধ করে বাস মালিকদের সুবিধা দিব, এটাতো বিকৃত মানসিকতার পরিচয়।

হিন্দু-মুসলিম সবাই এক সাথে সৌহার্দপূর্ণভাবে বসবাস করার আহবান জানিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে আমাদের লাভ কি? ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোন অশান্তি সৃষ্টি করা কিংবা উগ্রতা ইসলামের বিধানে নেই। মুষ্টিমেয় কিছু দুষ্কৃতি এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির জন্য হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালায়। কারা হামলা চালায় আমরা কিন্তু তাদের চিনি। হামলাকারীদের চিহ্নিতকরে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের এ অঞ্চল শান্তি প্রিয় অঞ্চল। এখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, ওসি আলমগীর হোসেন, জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ফরিদ হোসেন বাবু প্রমুখ।

;

‘মহাসুখের অট্টালিকা’ নির্মাণে শ্রমিকের মৃত্যু, আপসেই শেষ!



আল-আমিন রাজু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা সাহিত্যের পঞ্চকবি খ্যাত গীতিকার ও কবি রজনীকান্ত সেনের রচিত স্বাধীনতার সুখ কবিতায় বাসস্থান নিয়ে বাবুই ও চড়ুই পাখির সংলাপ সবারই জানা। ‘আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে’। বাবুই পাখির উদ্দেশ্যে চড়ুই পাখির সংলাপটির বাস্তবতা বড়ই নির্মম। সমাজের খেটে খাওয়া দিনমজুরের জীবনের বিনিময়ে তৈরি হয় সেই ‘মহাসুখের অট্টালিকা’। সুউচ্চ এই সব দালানের প্রতিটি ইটের গাঁথুনিতে মিশে আছে শ্রমিকের ঘাম ও রক্তের ফোটা। জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নির্মম মৃত্যু হলেও শেষ পর্যন্ত বিচার কিংবা সঠিক ক্ষতিপূরণ মেলে না। বরং রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের চাপে নামমাত্র ক্ষতিপূরণে আপস করতে বাধ্য হয় নিহতের স্বজনরা।

যেমনটা ঘটেছে রাজধানীর সবুজবাগের মায়াকাননে নির্মাণাধীন দশতলা ভবন থেকে বাঁশের মাচান ভেঙে নিচে পড়ে নিহত তিন শ্রমিকের বেলায়। চলতি বছরের ১৭ মে (শুক্রবার) সকালে ভবনের বাইরের অংশের দেওয়ালের প্লাস্টারের কাজ করতে গিয়ে তারা নিচে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই মারা যায় আলতাবুর (৪০) ও অন্তর (২০) নামের দুই শ্রমিক। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় মফিজুল (২০)। এই ঘটনায় সবুজবাগ থানায় ভবন মালিক আমিনুল হক ভূঁইয়া (৫১) ও ঠিকাদার ফারুক হোসেনকে (৪০) আসামি করে একটি অবহেলাজনিত হত্যা মামলা করেন নিহত শ্রমিক আলতাবুরের স্ত্রী আফরোজা বেগম। মামলা ১৩ দিনেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। বরং মাত্র তিন লাখ টাকায় মীমাংসা করা হয়ে গেছে।

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার সাহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। তবে ঘটনার দুদিন পরেই আসামিরা নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। তাই তাদের কাছে আমরা যেতে পারিনি।

মামলা হলেও আসামিরা মীমাংসা করার বিষয়টির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার কাছে এই বিষয় নিয়ে কেউ আসেনিও। আর যেহেতু আসামিরা জামিনে আছে, তাই আমার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই।

মায়াকাননের সেই ভবনে কাজ করা একাধিক শ্রমিক ও মিস্ত্রির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাসসহ স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি গত ২২ মে আপস করে দেন। ঠিকাদার ফারুকের বাসায় হওয়া সেই বৈঠকে বলা হয়, প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। ঘটনার দিন হাসপাতালের খরচ ও মরদেহ বহনে গাড়ি ভাড়ার খরচ বাবদ ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি আড়াই লাখ টাকা গত ২৯ তারিখ পরিশোধ করার কথা থাকলেও কোনো টাকা শ্রমিকরা পাননি। মালিকপক্ষ আরও ৩ থেকে ৪ দিন সময় নিয়েছে। ঠিকাদার ও মালিকপক্ষ শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের চাপ দিচ্ছে ১ লাখ টাকা নিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে। বাকি টাকা মামলা তুলে ফেলার পর দেওয়া হবে। তবে এতে স্বজনরা রাজি হননি।

তিন শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় মধ্যস্থতা করার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চিত্তরঞ্জন দাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়টি আমি শুনেছি। আমার কাছে কেউ আসেনি। বাড়ির মালিক বা ঠিকাদারকেও আমি চিনি না। এমনকি নিহত শ্রমিকদের পরিবারের কেউই আমার কাছে আসেনি। তাই মীমাংসার মধ্যস্থতার প্রশ্নই ওঠে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৪ হাজার ৭৫৮ জন শ্রমিক। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ২৪৮ জন শ্রমিক। ২০২৩ সালে বিভিন্ন পেশায় শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা ৭৪২ জন। যার মধ্যে নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা ১১৮ জন। আহত হয়েছেন ৬৫ জন। অর্থাৎ মোট শ্রমিকের মৃত্যুর ১৫ শতাংশ নির্মাণ শ্রমিক। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত শ্রমিক নিহতের তথ্যানুসারে ২০২২ সালে বিভিন্ন পেশার শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৩৪ জন। আহত হয়েছে এক হাজার ৩৭ জন। ২০২১ সালে নিহত হয়েছেন এক হাজার ৫৩ জন, আহত হয়েছেন ৫৯৪ জন। ২০২০ সালে নিহত হয়েছেন ৭২৯ জন ও আহত হয়েছেন ৪৩৩ জন। ২০১৯ সালে নিহত হয়েছেন ১২০০ জন, আহত হয়েছেন ৬৯৫ জন।

নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে ভবন থেকে পড়ে বা দুর্ঘটনায় নিহতের পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিকদের নির্যাতনে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। ২০২৩ সালে নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন নির্মাণ শ্রমিক।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বাইরেও বহু নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু ও আহতের ঘটনা ঘটে। যা স্থানীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবে এর সংবাদ কোনো মাধ্যমে প্রকাশিত হয় না। থেকে যায় আড়ালে। ফলে নাম মাত্র ক্ষতিপূরণ পেলেও পরিবারের প্রধান আয়ের মানুষটি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে অনেক পরিবার।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর বাড্ডার আফতাব নগরে একটি বহুতল ভবনের সাটারিংয়ের কাজ করতে গিয়ে মারা যান লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর জঙ্গরা গ্রামের আবু সাঈদের ছোট ছেলে মো. বায়েজিদ (২০)। নিজের আয় দিয়েই বয়স্ক বাবা মায়ের ভরণপোষণ করতেন বায়েজিদ। তার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করেনি পরিবার। মাত্র ২ লাখ টাকার বিনিময়ে আপস করে নেন তারা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহতের বড় ভাই শাহিন বলেন, কাজ করতে গিয়ে ছোট ভাইটা মারা যায়। আমরা মামলা করিনি। মামলা করলেই কি হবে। বাড়ির মালিক আমাদের বাড়িতে এসেছিল। বাবাকে দুই লাখ টাকা দিয়ে বলেছে এটা দিয়ে ব্যবসা করে খাইয়েন। তারা আর কোনো খোঁজ নেয়নি।

নির্মাণ শ্রমিকদের মৃত্যু ও পরবর্তীতে মীমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, শ্রমিক আইন দুর্বল হওয়ায় এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। বাংলাদেশের আইনে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ কম। ফলে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। কোনো শ্রমিকের অবহেলায় মৃত্যু হলে নামমাত্র শাস্তি ও দুই লাখ টাকা জরিমানা। ফলে শ্রমিকদের স্বজনরা মামলার দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে আপস করে।

শ্রমিকদের অধিকার আদায় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সুলতান উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, আমাদের বেশিরভাগ শ্রমিক গ্রামাঞ্চল থেকে আসা। ফলে তাদের হয়ে ইউনিয়নগুলো তেমন কাজ করে না। আর দু-একটি ঘটনায় কাজ করলেও সেটিও শহরকেন্দ্রিক। অধিকাংশ ঘটনায় পরিবার এগিয়ে আসে না। এর সুযোগ নিচ্ছেন ঠিকাদারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, কোনো দেশের কাজের ক্ষেত্র নিরাপদ করার দায়িত্ব সরকারের। তার জন্য শ্রম আইন রয়েছে। সেই আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিককে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে তাকে জানানো। প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান করা মালিকপক্ষের দায়িত্ব। মালিকপক্ষ দায়িত্ব পালন করছে কি না সেটিও দেখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো অধিকাংশ বড় বড় প্রতিষ্ঠান এটা গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। আর সরকারের এই শ্রমিকদের কাজের বিষয়গুলো যাদের দেখার দায়িত্ব তারাও ঠিকমতো পরিদর্শন করে না। তারা কিছু বড় প্রজেক্টে গেলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনে তারা যান না। অথচ এই সব ভবনেও বহু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

;

যশোরে বাথরুমের ফ্লাশট্যাংক থেকে ইয়াবা উদ্ধার, দুই বোন আটক



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম , যশোর
ইয়াবা পাচারে আটক দুই বোন / ছবি: বার্তা২৪

ইয়াবা পাচারে আটক দুই বোন / ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোরে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ দুইবোনকে আটক করেছে র‌্যাব-৬ যশোরের সদস্যরা। শনিবার (১জুন) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেন র‌্যাব-৬ যশোর সদস্যরা।

আটককৃতরা হলেন, বকচর কবরস্থান রোডের লুৎফর শেখের দুই মেয়ে ফরিদা বেগম ও বকচর মাঠপাড়ার ফাতেমা বেগম । দুই বোনের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৮শ’পিস ইয়াবা এবং মাদক বিক্রির এক লাখ ৪৮ হাজার ৮শ’টাকা উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে তারা জানতে পারেন বকচর কবরস্থান এলাকার একটি ফ্লাট বাড়িতে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা রয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে তার নেতৃত্বে একটি টিম ওই বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় বড় বোন ফরিদার বাড়ির কমোডের ফ্লাশ ট্যাংকের ভেতর থেকে ৯ হাজার ৮শ’পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। একইসাথে তার কাছ থেকে প্রায় দেড়লাখ টাকাও পাওয়া যায়।

উদ্ধারকৃত টাকা এবং বিপুল সংখ্যক ইয়াবা / ছবি: সংগৃহীত

পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার আপন ছোট বোন ফাতেমার কাছে ইয়াবার আরও একটি চালান রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে বকচর মাঠপাড়ায় ফাতেমার বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব। ফাতেমার খাটের নিচ থেকে আরও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব আরও জানায়, এই দুই বোনসহ তাদের একটি চক্র রয়েছে। তারা যশোর থেকে ইয়াবা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। নিজেরাই বোরকা পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে অভিনব কায়দায় ইয়াবা লুকিয়ে চলে যান দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তাদের সহযোগীদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‌্যাব যশোরের সদস্যরা।

;