ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে শরীয়তপুরে ধান-সবজির ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা
চলছে আমন মৌসুম। সঙ্গে রয়েছে শীতকালীন সবজি। শরীয়তপুরে এরই মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ জমির ধান কেটেছেন কৃষক। বাকি ধানের বেশির ভাগই প্রায় পরিপক্ব। ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরো ধান ঘরে তোলার কথা। পাশাপাশি বোরো মৌসুমের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বীজতলা। তবে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে জেলায় বোরোর বীজতলা ও আমন ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি ও রবি মৌসুমের বিভিন্ন ফসলের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষিসংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর, জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট উপজেলাসহ প্রায় সব উপজেলার কৃষকদের আমন ধান জমিতে নুইয়ে পড়েছে। জমির ওপর উপড়ে পড়েছে গাছপালা। অতিবৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে ফসলি জমিতে।
নড়িয়া উপজেলার নশাসন এলাকার কৃষক হাকিম মিয়া বার্তা২৪-কে বলেন, ‘একটি বেসরকারি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বেশি লাভের আশায় পিঁয়াজ ও রসুন চাষ করেছিলাম। তিন চারদিন আগে চারা গজিয়েছে আমার জমিতে। সেই চারাগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। ভেসেও গেছে অনেকটা। কিস্তির টাকা শোধ করব কীভাবে এখন আমি? ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আমাকে পথে বসিয়ে দিয়ে গেল।’
জাজিরা উপজেলার কৃষক লুতফুর রহমান বার্তা২৪-কে বলেন, ‘ধানের পাশাপাশি রবি শস্য রোপণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আজকের পর আবাদ আরও পিছিয়ে যাবে। সময়মতো ফসল ফলাতে না পারলে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।’
শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষক আবুল কালাম বার্তা২৪-কে বলেন, ‘২০ শতকের বেশি জমির ধান বাতাসের কারণে নুইয়ে পড়েছে। কিছুদিন পরেই ধান কাটার কথা। কিন্তু শেষ মূহূর্তে এমন বিপর্যয় আশা করিনি। জানি না ফসলের কেমন ক্ষতি হবে, তবে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।’
জাজিরা উপজেলার আরেক কৃষক আলমাছ মোল্লা বার্তা২৪-কে বলেন, ‘পেঁয়াজের জমিটা উঁচু হওয়াতে পানি নেমে যাওয়াতে পিঁয়াজ গুলো বেঁচে গেছে। তবে রসুনে পানি বেঁধে যাওয়ায় রসুনগুলো পচে যাবে। আবার পাকা ধানগুলো সব কাটা হয় নাই কালের মধ্যে সব কেটে ফেলতে হবে। ক্ষতি সম্ভাবনা অনেক বেশি।’
এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অলি হালদার বার্তা২৪-কে জানান, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির ফলে কিছু কৃষক ক্ষয়ক্ষতি সম্মুখীন হবে। তবে আমরা সকাল থেকেই মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষি জমিতে ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা নির্ণয় করছি। আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশেই আছি। সব বিষয়ে তাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছি।’
শরীয়তপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বার্তা২৪-কে জানান, ‘জেলায় ১৪২৩৮ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ৬২ শতাংশ জমির এই ফসল কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্দিষ্ট না। তবে জমিতে জলাবদ্ধতা না হলে ফসলের খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না।’
তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা ঠিক এখনো বলা যাবে না। তবে জেলার বেশিরভাগ জমির এই ধান কাটা হয়ে গেছে। আর শিলা বৃষ্টি না হওয়ায় এই বৃষ্টিতে শুধু ধানের পাতায় পানি বাঝায় ধান নুয়ে পড়েছে। তাই যে সকল জমি একটু নিচু ওই সকল জমিতে পানি থাকার সম্ভাবনা থাকবে। জমি থেকে নালার মাধ্যমে পানি বের করে দিলে ধানের ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা কমে যাবে।’