অকেজো বাঁকখালী নদীর রাবার ড্যাম: বোরো মওসুম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

  • আবদু রশিদ মানিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অকেজো বাঁকখালী নদীর রাবার ড্যাম: বোরো মওসুম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

অকেজো বাঁকখালী নদীর রাবার ড্যাম: বোরো মওসুম নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

শেষের দিকে চলে এসেছে আমন মওসুম। অগ্রহায়ণে পাকা ধান ঘরে তোলার পরপরই শুরু হবে বোরো মৌসুম। কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ নির্ভর করে বাঁকখালী নদীর রাবার ড্যামের পানি সেচ ব্যবস্থাপনার ওপর। বেশ কয়েক বছর যাবত বাঁকখালী নদীর  ওপর নির্মিত রাবার ড্যামটি অকেজো পড়ে আছে। ফলে বোরো মৌসুমে চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গেলো বছরও মৌসুমের শেষ লগ্নে এসে অনেক তড়িঘড়ি করে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার কারণে শেষ মুহূর্তে এসে চাষাবাদ হলেও বর্তমানে বাঁধটি কেটে দেওয়া হয়েছে।

বাঁকখালী নদীতে পানি ধরে রেখে দুই উপজেলায় চাষাবাদ করে আসছে প্রায় ২০ হাজার কৃষক। স্থায়ী বাঁধ না হওয়ায় আগামী বোরো মৌসুম অনেকটা শংকার মধ্যে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার সর্বপ্রথম বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যামটি শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রেখে রামু এবং কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ করে আসছে। বাঁকখালী নদীর উপর ঝিলংজার চান্দের পাড়ার ডেমটি ১৯৯২ সালে নির্মিত হলেও দীর্ঘদিন যাবত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি ছিল। ব্যবস্থাপনা কমিটি দুই উপজেলায় কৃষকদের নিয়ে সমবায়ের ভিত্তিতে একটি সমিতি করলেও বেশ কয়েক বছর যাবত ব্যবস্থাপনা কমিটিই বন্ধ রয়েছে। ফলে কয়েক বছর যাবত পানি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। বিগত তিন বছর যাবত বাঁকখালি নদীর ওপর অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে তারা কৃষকদের শেষ ব্যবস্থা করে আসছে। তবে বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই স্থায়ীভাবে বাঁধটি নির্মাণ করা না হলে আগামী বোরো মৌসুমে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনরায় স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা না হলে পুরো মৌসুম অনাবাদি থেকে যাবে বলে মনে করেন পিএম খালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ। আসন্ন মৌসুমে যথাসময়ে চাষাবাদের জন্য ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বাঁধ নির্মাণের আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংসদ সদস্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে বাঁধ নির্মাণে তিনি লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন সদর উপজেলার পিএমখালি, ঝিলংজা, চাকমারকুল, মিঠাছড়ি, রাজারকুল ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ করা হয় বাঁকখালী নদীর পানি ব্যবস্থাপনার উপর। যেহেতু বাকখালী নদীর উপর নির্মিত বাঁধটি কেটে দেওয়া হয়েছে আমন মৌসুমের জন্য সেহেতু আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পুনরায় যদি বাঁধ নির্মাণ করা না হয় পুরো মৌসুম অনাবাদি থেকে যাবে। চাষবিহীন হয়ে পড়বে পনের হাজার একর চাষযোগ্য জমি।

শহীদুল্লাহ জানান, "যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ করা না হলে মৌসুমটাই শঙ্কার মধ্যে পড়বে। কৃষকদের স্বার্থে যথাসময়ে বাঁকখালী নদীর ওপর রাবার ড্যামের পাশে স্থায়ী বাধ যেন নির্মাণ করা হয়। লিখিত আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন গত ৩/৪ বছর যাবত রাবার ড্যামটি নষ্ট হওয়ার কারণে অস্থায়ী বাধ দিয়ে দুই উপজেলার কৃষকরা চাষাবাদ করে আসছে। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যৌথভাবে গত বছর মৌসুমের শেষ দিকে এসে অস্থায়ীবাধ নির্মাণ করলেও এই বছর শুরুতেই বাঁধটি নির্মাণ করা জরুরি। সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে রাবারডেমটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে স্থায়ীভাবে চালু করা। বছর বছর অস্থায়ীবাধ নির্মাণ করার কারণে সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হলেও বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে"।

সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের কৃষক সিরাজ উল্লাহ জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই যদি বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা করা না হয় আগামী মৌসুমে চাষাবাদ চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। ক্ষতির মুখে পড়বে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ। রামু এবং সদর উপজেলার অধিকাংশ বাকঁখালী নদীর চরে সবুজ শাকসবজি চাষাবাদ করা হয়। শাকসবজি চাষাবাদ নির্ভর করে বাকখালী নদীর পানি ব্যবস্থাপনার ওপর। যথাসময়ে পানি না পেলে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হুমকির মুখে পড়বে।

রামু এবং সদর উপজেলার ২০ হাজার কৃষকের কথা চিন্তা করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাঁকখালী নদীর রাবার ড্যাম অংশে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ করা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উৎকণ্ঠিত কৃষকরা।