চট্টগ্রামে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে ২ বাসে আগুন, দগ্ধ চালক-সহকারী

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় রিল্যাক্স পরিবহনের একটি স্লিপার কোচের বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসের চালক ও সহকারী দগ্ধ হয়েছেন। এসময় দুর্বৃত্তরা একাধিক গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। রোববার (৩ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০ টার দিকে নগরীর দামপাড়া বাস কাউন্টার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন- বাসচালক মো. তারেক, হেলপার মো. নাজমুল ও সুপারভাইজার আব্দুর রহিম। এদের মধ্যে চালকের শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়, একইসাথে হাতের একটি অংশ দগ্ধ হয় সহকারীর। ভাঙা গ্লাসে ওই বাসের সুপারভাইজারের হাত জখম হয়।

বিজ্ঞাপন

এর মাত্র ১৫ মিনিট আগে নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকায় একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-সহকারী পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক জানান, রাস্তায় একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সংবাদ পেয়ে রাত ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়।

রাত পৌনে ১১টার দিকে দামপাড়া বাস কাউন্টার এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, বাস কাউন্টারের সামনে রাস্তায় কয়েকটি স্থানে গাড়ির ভাঙা কাঁচের গুঁড়ো পড়ে আছে। একাদিকে মশালে ব্যবহৃত পুড়া কাপড়ের পোটলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রিল্যাক্স পরিবহনের বাসটির ভেতরে চালকের পাশে থাকা জানালার কাঁচের ভাঙা অংশ পরিস্কার করছে বাসের কর্মীরা৷ এর পাশে সোদিয়া পরিবহনের একটি বাসের সামনের গ্লাস দুর্বৃত্তের ছুঁড়া ঢিলে ফেটে আছে৷ রিল্যাক্স বাসে আগুনের ক্ষত না থাকলে অন্য চালক ও সহকারী নিয়ে যথা সময়ে যাত্রী নিয়ে ১১ টায় বাসটি ঢাকার উদ্দেশ্যে কাউন্টার ত্যাগ করে।

বিজ্ঞাপন

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কয়েকজন লোক হঠাৎ মশাল নিয়ে এসে বাস ভাঙচুর করে মশালের আগুন নিক্ষেপ করে। তা গিয়ে চালক ও হেলপারের গায়ে লাগে। তাৎক্ষণিক লোকজন নিজেদের চেষ্টায় আগুনি নিভিয়ে ফেলে। পরে চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক চালকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা রেফার করে দেয়। 

রিল্যাক্স পরিবহনের বাসের মালিক শিহাব উদ্দিন চৌধুরীর হতাহতের পরিচয় নিশ্চিত করে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমাদের গাড়িটা যাত্রী উঠানোর জন্য রাস্তার পাশে পার্কি অবস্থা ছিল৷ দক্ষিণ দিক থেকে হঠাৎ ৪ থেকে ৫ জন লোক এসে প্রথম ওইখানে থাকা একটি অটোরিকশার গ্লাস ভাঙছে, পরে একটি সৌদিয়া বাসের গ্লাস ভাঙে। এরপর আমার রিল্যাক্স গাড়ির গ্লাস ভেঙে ভেতরে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় আমার বাসে ভেরতে চালক আর সহকারী ছিল। তাদের মধ্যে চালকের শরীরে আগুন ধরে যায়৷ এতে তার শরীরে বিভিন্ন অংশে পুড়ে যায়। আমার চালকের খুবই অবস্থা খারাপ। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে ঢাকার বার্ণ হাসপাতালে রেফার করে দিছে ডাক্তার। একই স্থানে থাকা সেন্টমার্টিন পরিবহনের একটি বাসে উপরেও আগুন দেয়। এসময় হেলপারের হাতের একাংশ পুড়ে যায়, আহত হয় বাসের সুপারভাইজারও আব্দুর রহিম। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খুলশী থানায় গেছেন, এ বিষয়ে মামলা করা হবে।'

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে অভিযোগ করে এ পরিবহন মালিক বলেন, 'এর আগেও কুমিল্লা ও কক্সবাজারে আমাদের দুটির গাগির গ্লাস ভেঙেছে দুর্বৃত্তরা। এই এলাকাটা হলো দামপাড়া পুলিশ সাইন্স। পুলিশ লাইন্সের সামনেও আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। আর আমাদের সরকার ও মালিক সমিতি বলছে গাড়ি চালানোর জন্য। কিন্তু আমরা তাদের আদেশ মানতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি।'

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রুবেল হাওলাদার বলেন, 'আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি৷ কিছু লোক মহাশ নিয়ে এসে বাসে আগুন দেয়৷ এতে ওই বাসের চালক ও হেলপার দগ্ধ হয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

এ সময় আরও দুটি গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেন ওসি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামি জোনের সহকারী কমিশনার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির চালক তার আসনে ছিলেন৷ তার পাশে থাকা ছোট্ট জানালাটিও খোলা ছিল। রাত পৌনে দশটার দিকে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি মোটরসাইকেল থেকে চালকের আসনের পাশে থাকা জানালা দিয়ে আগুনযুক্ত কিছু একটা বাসে ছুঁড়ে মারে। এতে চালক কিছুটা দগ্ধ হলেও এসময় ক্ষতি হয়নি। আগুন ছড়াতে পারেনি।’

এর আগে, রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরীর আকবরশাহ থানা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই বিষয়ে সিএমপির পশ্চিম জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি-পশ্চিম) শেখ সাব্বির হোসেন বলেন, ‘ওই বাসের ভেতরের দিকে কেউ আগুন দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এতে কেউ দগ্ধ না হলেও বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ এনেছে।’

এসব ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত ও আটক করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে জানান বাহিনীটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।