বাণিজ্য মেলায় দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ইতিহাস, তাঁর বাড়িটিও একটি ইতিহাস। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই বাড়িটি স্বাধীন বাংলাদেশের সাক্ষী। এই বাড়ি থেকেই ডাক এসেছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এ বাড়ির একটি বাড়ি সাজতে চলেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। বাড়ি বললে অবশ্য ভুল হবে; এটি মূলত বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন। যেখানে স্থান পাবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন ছবিসহ অনেক কিছু।
ঘনিয়ে এসেছে সময়। আর কয়েকদিনের অপেক্ষা মাত্র। এরপরই পর্দা ওঠবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার। প্রতিবার নতুন বছরের শুরুতে মেলার শুরু হলেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে পেছানো হয়েছে দিনক্ষণ। আয়োজক কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, জানুয়ারির ২০ অথবা ২১ তারিখেই উদ্বোধন হতে চলেছে মেলাটি।
জানা গেছে, এবারের মেলায় প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের আদলে তৈরি বিভিন্ন স্থাপনার নকশা। সেই সঙ্গে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মেলাতে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে থাকছে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন, যা নির্মাণ হচ্ছে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে, যা রাজধানী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়ির আদলে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ৩০০ ফিট সংলগ্ন পূর্বাচলে আয়োজিত ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৮তম আসরের প্রস্তুতি কার্যক্রম সরেজমিনে এসব চিত্র দেখা যায়।
প্যাভিলিয়ন নির্মাণকাজে কর্মরত কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছেন তারা। দেখা যায়, কেউ বাঁশ-কাঠ কাটতে, কেউ ঝালাইয়ের কাজে, কেউবা আবার সিঁড়ি নির্মাণের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
বাণিজ্যমেলার মাঠ সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের পাশে অবস্থিত প্রধান গেটের দুই পাশে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে স্থাপনা। ঠিক তার পাশেই স্থান করে নিয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির আদলে তৈরি স্থাপনা। গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই থরে থরে সাজানো হচ্ছে মেলায় আগত বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন। কোনটার বাঁশ-কাঠের কাজ শেষ হয়েছে, নির্মাণ-শিল্পীদের ব্যস্ততা রয়েছে রংতুলির আঁচড়ের কাজে।
এবার কয়েক দফা সময় পরিবর্তন শেষে আগামী ২০ অথবা ২১ তারিখেই উদ্বোধন হতে চলেছে বাণিজ্যমেলা। রোববার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সচিব (উপসচিব) বিবেক সরকার বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বাণিজ্যমেলার শুরুটা মূলত নির্ভর করছে সরকারপ্রধানের ওপরে। তিনি বলেন, নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়েছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন আমরা দুই-একদিনের মধ্যে তারিখ নির্ধারণ করতে পারব। এখন পর্যন্ত আমরা সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি অথবা ২১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধন করার জন্য আমরা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মেলার মাঠের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। সরকার প্রধানের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের আদলে প্রধান গেটের কাজও চলছে।
দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়ে আসছে। আগে বছরগুলোতে রাজধানীর আগারগাঁও অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সংলগ্ন খোলা মাঠে এই মেলার আয়োজন হয়ে থাকলেও রাজধানীবাসীর যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা বিবেচনায় গত দুই বছর মেলাটি ৩০০ ফিট সংলগ্ন পূর্বাচলে আয়োজন করা হয়।
গেল বছর পূর্বাচলে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৭তম আসর। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৩৩১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্টুরেন্টের অংশগ্রহণে আয়োজন হয়েছিল মেলাটি যা ২০২২ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
মেলার ২৭তম আসরে ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল বলে মেলা শেষে জানিয়েছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান। এএইচএম আহসান বলছিলেন, ২৭তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এক মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। গত বছরের (২০২২ সালের) তুলনায় এবারের বাণিজ্য মেলায় বিক্রি ও রপ্তানি আদেশ উভয়ই বেড়েছে। এর মধ্যে বিক্রি বেড়েছে ২০ কোটি টাকার এবং রপ্তানি আদেশ বেড়েছে ১০০ কোটি টাকা। ২৬তম মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৮০ কোটি টাকা এবং রপ্তানি আদেশ ছিল ২০০ কোটি টাকার বেশি।