গৃহকর্মী প্রীতির মৃত্যু নিয়ে রহস্য
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের অষ্টম তলার ফ্ল্যাট থেকে নিচে পড়ে গৃহকর্মী প্রীতি উড়ানের (১৫) মৃত্যুর ঘটনায় ধোঁয়াশা কাটছে না। বেলকনি থেকে পড়ে প্রীতির মৃত্যু, নাকি হত্যাকাণ্ড এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
তবে স্থানীয়রা একে পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি করছেন। কারণ একই কায়দায় গত ছয় মাস আগেও ওই বাসা থেকে আরেক গৃহকর্মী পড়ে গিয়েছিল। ওই গৃহকর্মী প্রাণে বেঁচে গেলেও এবার রক্ষা হয়নি গৃহকর্মী প্রীতির।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, গৃহকর্মী প্রীতি উড়ান যখন বাসার নিচে পড়েছিল তখন শরীরে জামা থাকলেও পরনে পায়জামা ছিল না। এতে তাদের সন্দেহ প্রীতির সঙ্গে খারাপ কিছু করা হয়েছিল। যা আড়াল করতেই পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে। তাই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখার।
নিহত গৃহকর্মী প্রীতি উড়ান মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামের লুকেশ উড়ান ও নওমিতা উড়ান দম্পতির মেয়ে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাদের বুক ভরা আর্তনাদে এলাকা ভারী হয়ে উঠেছে। তারা বলেন, আমাদের মেয়েকে দিনের পর দিন নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। প্রীতির সঙ্গে এমন কোনো কাজ করা হয়েছে, যার জন্য তাকে মেরে ফেলেছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোড এলাকায় বহুতল ভবনের অষ্টম তলা থেকে ফেলে প্রীতিকে হত্যার অভিযোগ উঠে। এই ঘটনায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক (৬৫), তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার (৪৭) নামে নিহত প্রীতির বাবা লুকেশ ওরাং বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন।মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ করা হয়েছে।
এ মামলায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
আসামিদের পক্ষে আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন মো. সুলতান সোহাগ উদ্দিনের আদালত রিমান্ড ও জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন।
রিমান্ড শুনানিতে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে বিচারক বলেন, বাসাটা তো মৃত্যকূপ বানিয়ে রেখেছেন, জাস্ট মৃত্যুকূপ। আপনাদের ছেলে-মেয়ের সাথেও এমনটা ঘটতে পারতো। রিপিটেডলি ঘটনা, এর দায় এড়াতে পারেন না।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৬ আগস্টও একই ধরনের ঘটনা ঘটে আশফাকুল হকের বাসার। সেবার ৯ বছরের এক শিশু গৃহকর্মী লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ এনে আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া হক ও শিল্পী নামের আরেক নারীকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। সেই মামলা এখনও চলছে।