ফেব্রুয়ারি এলেই বাতি জ্বলে ‘সালামনগরে’

  • মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ আবদুস সালাম। শহীদ আবদুস সালামের গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষ্মণপুর (বর্তমানে সালামনগর) গ্রামে। গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় সারা বছর কেউ এখানে আসেন না। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাস এলেই মানুষের আনাগোনা বাড়ে, বছরের অন্যান্য সময় থাকে নিষ্প্রাণ। ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ভাষা শহীদ সালামের স্মরণে সালামনগরে তৈরি করা হয়েছে সালাম স্মৃতি জাদুঘর। ২১ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে নানা কর্মযজ্ঞে প্রাণ ফিরে আসে ‘ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে’। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় গ্রন্থাগার ও জাদুঘর পরিষ্কার ও সাজসজ্জার কাজ।

বিজ্ঞাপন

জাদুঘরে ভিতরে রয়েছে পাঠাগার। পাঠাগার থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় পাঠকের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। পাঠাগারটিতে ১১টি আলমারি, ৩ হাজার বই, আর ছয়টি টেবিল সঙ্গে কিছু চেয়ার রয়েছে। এছাড়াও জাদুঘরে শহীদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই যার কারণে জাদুঘরে তেমন দর্শনার্থী নেই। গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে একজন গ্রন্থাগারিক ও একজন তত্ত্বাবধায়ক আছেন।

অন্যদিকে, লক্ষ্মণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে এবং ভাষা শহীদ সালামনগর গ্রামে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভাষা শহীদ সালাম মেমোরিয়াল কলেজ । তবে ভাষা শহীদ সালামের বাড়ি ফেনী জেলা সকলে জানলেও ঠিকভাবে জানে না ফেনীর কোথায় তার ঠিকানা। যার কারণে সালামের স্মরণে তৈরি জাদুঘর, পাঠাগার জনশূন্য।

এলাকার বাসিন্দারা জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসে সালামনগরে গুরুত্ব বেড়ে যায়। বছরের অন্য দিনগুলোতে মানুষের তেমন আনাগোনা থাকে না। এছাড়াও পাঠাগারে পাঠকের দেখা নেই বললেই চলে।

ভাষা শহিদ আবদুস সালামের বাড়ির পাশের প্রতিবেশী রেদওয়ান কবির বলেন, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগে এলাকার রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন হলেও স্মৃতি জাদুঘরে শহিদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কিছুই নেই। ফলে, দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। গ্রন্থাগারে কিছু বই রয়েছে, তবে সেগুলো অনেক পুরাতন।

ফেনী শহরে ভাষা শহীদ সালাম স্টেডিয়ামের নামে একটি স্টেডিয়াম ও একটি কমিউনিটি সেন্টারের নামকরণ করা হয়। স্টেডিয়াম ও কমিউনিটি সেন্টার থাকলেও সালামের নামে ফেনীতে নেই কোনো গ্রন্থাগার, নেই গবেষণাগার ও বিনোদন কেন্দ্র। ফেনীতে সালামের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রন্থাগার, গবেষণাগার ও বিনোদন কেন্দ্র থাকলে মানুষ ভাষা শহীদ সালামকে স্মরণে রাখতে পারবে এবং শহীদ সালাম সর্ম্পকে জানতে পারবে বলে জানিয়েছে ফেনীর সুশীল সমাজ।

দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, বছরের ১১ মাস ‘ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম গ্রন্থাগার ও জাদুঘর’ নিষ্প্রাণ থাকে। এই গ্রন্থাগারটিতে যাতে সপ্তাহে বা মাসে একবার হলেও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আনা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

তিনি বলেন, গ্রন্থাগারের পাশে ফেনী ছোট নদীর পাড়ে কিছু জায়গা রয়েছে। সেই জায়গা অধিগ্রহণ করে বিনোদন স্পট হিসেবে একটি শিশুপার্ক করা যায় কি না, সে বিষয়ে পৌরসভার সঙ্গে আলোচনার কথা জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ভাষা শহিদ আবদুস সালামের জন্ম ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঁঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের রাস্তায় ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করে ছাত্র-জনতা বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিল করেন। আবদুস সালাম সেই মিছিলে অংশ নেন। মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে আবদুস সালাম আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় দেড় মাস পর ১৯৫২ সালের ৭ এপ্রিল মারা যান তিনি। পরে তার নামানুসারে লক্ষণপুর গ্রামের নাম রাখা হয় ‘সালামনগর’।