আমার বাবাকে পাবো কই, আমার কলিজার পাখিগুলো কোথায় গেল?
আমার সন্তান কই। আর কি দেখতে পাব না। কোথায় ছিল সেদিন৷ আমার বাবাকে পাবো কই। আমার নাতনী ফাইজা কি আছে? দেখতে দেন আমাকে। কোথায় আগুন লাগছিলো। আমার কলিজার পাখি ৩টা কই?
গগন বিদায়ী বিলাপে বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজের সামনে এভাবেই কাঁদছিল কক্সবাজার উখিয়া মরিচ্চা পালং এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম। গত ২৯ মার্চ রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয় আবুল কাশেমের ছেলে শুল্ক কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা ও তাদের একমাত্র মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিরা।পরিবারের ৩ জন হারিয়ে এখন দিশেহারা আবুল কাশেম ও তার পরিবার।
রোববার (১০ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে গ্রিন কজি কটেজে প্রিয়জনদের নির্মম মৃত্যুর স্থান দেখতে আসেন শুল্ক কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিনের পরিবারের লোকজন। ভবনটির সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। আকুতি জানান দায়ী ব্যক্তির শাস্তির জন্য।
নিহত শুল্ক কর্মকর্তার বোন তছলিমা খাতুন বলেন, আমার ভাই ছিল আমাদের পরিবারের মধ্যমণি। সে আমাদের আগলে রাখত। কিন্তু এখন তো আর কেউ আমাদের ডাকবে না। সারাদিন ফোনের দিকে তাকায় থাকি ভাই বুঝি কল দিবে। মনে হয় এই বুঝি ভাই ডাকছে। কিন্তু ডাকে না। আমি চাই এই অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হোক। যারা যারা জড়িত তাদের শাস্তি হোক যাতে আর কোন মানুষের কোল খালি না হয়।
অশ্রুভেজা চোখে নিহত শুল্ক কর্মকর্তার মা রাজিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকে। ছুটির দিন ছিল তাই আমার কলিজা নাতনিকে নিয়ে আসছিলো। কে জানত এখানে এমন হবে। আমার সব ফাঁকা লাগে। আর কে আমাকে দাদি বলে ডাকবে। আর যে কেউ ডাকবে না।
এদিকে ছেলে, পুত্রবধূ ও প্রিয় নাতনিকে হারিয়ে চোখে পানিতে বুক ভিজছে আবুল কাশেমের। গ্রিন কজি কটেজের সামনে সবাইকে জড়িয়ে কাঁদছেন তিনি৷ নিহত সন্তানের মত কাউকে দেখলেই বুকে জড়িয়ে নিচ্ছেন তিনি। আকুতি জানাচ্ছেন দেখা করতে চান প্রধানমন্ত্রীর। স্বজনহারা শেখ হাসিনার সাথে ভাগাভাগি করতে চান তিনি।
উল্লেখ, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোদের গ্রিন কজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। ঘটনার পরের দিন বেশির ভাগের মরদেহ উদ্ধার হলেও মর্গে অজ্ঞাত কয়েকটি লাশের সাথে পড়েছিলো ফুটফুটে এক শিশুর লাশ। বুকের কাছে সাঁটানো কাগজে লেখা ছিল অজ্ঞাতনামা।
মাথায় ঝুঁটি বাঁধা, ধূসর রঙের হাফহাতা গেঞ্জি আর নীল পায়জামা পরা বিবর্ণ পুতুলের মত মরদেহটি ছিল ছিল আবুল কাশেমের নাতনী ফাইরুজ কাশেম জামিরার। বাবা মায়ের সাথে সেদিন অকালে প্রাণ দিয়েছিল কাশেম পরিবারের নিষ্পাপ শিশুটিও।