তাবলিগ জামাতের মারকাজ কাকরাইল মসজিদে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীদের সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২৪ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ৬ শাখার উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদে মাওলানা সাদপন্থীদের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
আরও বলা হয়, কাকরাইল মসজিদে শবগুজারি (রাত্রিযাপন) ও অন্যান্য কার্যক্রম চলাকালে শান্তি-শৃঙ্খলার যাতে কোনো রকম অবনতি না ঘটে সে মর্মে এই আদেশে জারি করা হয়েছে।
আদেশে ২৭ ডিসেম্বর (শুক্রবার) তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ (শুরায়ী নেজাম) মাওলানা জুবায়ের সাহেবের অনুসারীদের কোনোরকম বড় জমায়েত থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে মাওলানা সাদ গ্রুপের অনুসারীদের ২৭ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদে শবগুজারি (রাত্রিযাপন) সহ সব তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে, তাবলিগ জামাতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইল মসজিদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরায়ী নেজামের অনুসারীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কাকরাইল ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের দুটি অংশ ‘শুরায়ী নেজাম’ ও ‘সাদপন্থীদের’ মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর টঙ্গীর তুরাগ তীরে অবস্থিত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সাদপন্থীদের হামলায় শুরায়ী নেজামের অন্তত চারজন নিহত ও কয়েক শ অনুসারী আহত হন।
নিজ, স্ত্রী, সন্তান ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমানকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ১০টায় তার স্থাবর সম্পদের ইনকাম ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্সসহ সব কাগজপত্র নিয়ে তাকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক আলমগীর হোসেনের স্বাক্ষরিত চিঠি সাবেক মেয়র বরাবর আসে।
দুদকের দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কালিয়াকৈরে পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নিজের নামে, স্ত্রী সন্তান, ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নামে, বাড়ি, দোকানপাট, মার্কেট, জমি, প্লট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পদের উৎস কোথায় তার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বর্ণিত অভিযোগ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
অভিযোগপত্রে এও বলা হয়, অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য দেয়ার লক্ষ্যে আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় দুদক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকায় হাজির হতে হবে। নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।
প্রসঙ্গত, কালিয়াকৈর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন বিগত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রী ও গাজীপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য আকম মোজাম্মেলের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার ছত্রছায়ায় বছরের পর বছর কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র পদে বহাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জমি প্লট ক্রয় করেছেন।
এছাড়াও গত পৌরসভার নির্বাচনে সাবেক আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে ফের পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। নাম প্রকাশ না করে একাধিক ব্যক্তি বলেন, কালিয়াকৈর পৌরসভার ভেতর সবচেয়ে বড় বড় জমি, প্লটের ব্যবসায় মুজিবুর রহমানের শেয়ার রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় মূল্যবান জমি ক্রয় করে বহুতল ভবণ নির্মানসহ অসংখ্য মার্কেট, দোকানপাট করেছেন তিনি। সম্প্রতি তার এমন অবৈধ সম্পদের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠে এসেছে।
নির্বাচন বিতর্কিতকারীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। অতীতে যারাই নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তার জন্য সুপারিশ করবে সংস্কার কমিশন।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত নির্বাচন ব্যবস্থা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বদিউল আলম এসব কথা বলেন।
ইভিএম যেহেতু মেশিন সেখানে কারিগরি ত্রুটি থাকে। তাই নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে ইভিএম মেশিন আর ব্যবহার করা হবে না বলে জানান তিনি।
বদিউল আলম বলেন, অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা কতগুলো সুপারিশ করবো। আমাদের কাজ হলো সকলের মতামত শোনা। সকলের মতামতের ভিত্তিতে সুপারিশগুলো করা। যার ভিত্তিতে আমরা আশা করতে পারি যে নির্বাচন ব্যবস্থাটা পরিশোধিত হবে। যার ফলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম হবে।
বিগত সময়ের নির্বাচনগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারাই নির্বাচনি অপরাধ করেছে, নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে, নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে কিংবা কারচুপিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। কারণ, অন্যায় করে যদি কেউ পার পেয়ে যায় তাহলে অন্যায়ে আরও উৎসাহী হয়।
বাংলাদেশ সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বুধবার দিবাগত রাত ১টার পরে। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট ছুটে আসে সচিবালয়ে। তখন সচিবালয় ৭ নম্বর ভবনের সামনেই আগুন নেভানোর তৎপরতা ফায়ার ফাইটারদের। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও তথ্য বাঁচানোই মূল লক্ষ্য ছিল তাদের।
দাউ দাউ করে জ্বলন্ত আগুন নেভানোর জন্য সড়কের উপর দিয়ে পানির পাইপ টেনে নিয়ে যাচ্ছিল ফায়ার সার্ভিস সদস্য মো. সোহানুর জামান নয়ন। এ সময় আকস্মিক একটি ট্রাক ধাক্কা দেয় দেয় তাকে। নিমিষেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। শুরু হয় রক্তক্ষরণ। দ্রুত হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হৃদয় বিদারক এই ঘটনা রাতের অন্ধকারের। একদিকে ভয়াবহ আগুনের দৃশ্য অন্য দিকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষায় তখনও ততটা গুরুত্ব পায়নি নয়ন হারানোর খবর। তবে ভোরের সূর্য উঠার সাথে সাথেই দৃশ্যত পায় নয়নের দেশ প্রেমের চিহ্ন।
রোদের তাপে সড়কের গায়ে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত কিছুটা নরম হয়েছে। তাতেই দগদগে রক্ত চিৎকার করে জানাচ্ছে নয়নের দেশ প্রেমের আর্তনাদ। পাশেই লাল হেলমেট পড়ে আছে। নয়নের মাথার সেই হেলমেটই জানান দিচ্ছে তার দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের। আর এই লাল হেলমেটই হয়ত মনে করাবে নিহত নয়নের দেশ প্রেম।
২০০০ সালে মিঠাপুকুরের আট-পনিয়া গ্রামে জন্ম নেয় সোহানুর জামান নয়ন। পরিবারে বাবা মা, ছোট বোন ও স্ত্রী আছে তার। ২০২২ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন এই টগবগে যুবক। নয়নের মূল কর্মস্থল সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশন হলেও পরবর্তীতে তাকে সংযুক্ত করা হয় তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে। কর্ম জীবনে দায়িত্ব ও নিষ্ঠার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন বহুবার।
সহকর্মীর মরদেহ রেখেই আগুন নেভানোর যুদ্ধ চলমান রাখে ফায়ার সার্ভিসের অন্য সদস্যরা। ৬ ঘণ্টার অভিযানে নিয়ন্ত্রণে আসে সচিবালয়ের আগুন। আগুন নেভানো শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ফায়ার ফাইটার নয়নের প্রথম জানা অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গ বাজারের অবস্থিত ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে। এর পর নয়নের নিজ এলাকা রংপুরে পাঠানো হবে তার মরদেহ।
ঢাকায় নয়নের মরদেহ গ্রহণের জন্য চাচাতো ভাই এসেছেন। তবে তার নিজ জন্মভূমিতে হারানোর বেদনায় কাতরাচ্ছেন তার পরিবার। স্ত্রীর বেদনাসিক্ত মন কতটা সইবে সরকার ও স্বামীর সহকর্মীদের শান্তনায় তা অনুমেয় নয়। তবে ভাই হারানোর আর্তনাদেন কাঁদা বোন ও সন্তানের লাশের বোঝা কেমনে সইবে বাবা আক্তারুজ্জামান??