কৃষিজমির মাটি যেন হরিলুটের বাতাসা
![ছবি: সংগৃহীত](https://imaginary.barta24.com/resize?width=800&height=450&format=webp&quality=85&path=uploads/news/2024/Mar/13/1710312771608.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাংগা ইউনিয়নের কৃষি জমির মাটি যেন হরিলুটের বাতাসা। নির্বিচারে কাটা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। ফলে গভীর গর্তে পরিণত হচ্ছে এসব জমি। স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। এসকল জমির কৃষকরা যেন অরাজকতার কাছে জিম্মি হয়ে আছে।
সম্প্রতি ডাংগা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ভেকু দিয়ে রোপণকৃত কৃষিজমি থেকে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে মাটি। আর এসব মাটি যাচ্ছে স্থানীয় ইটভাটায়।
এসব মাটি কিভাবে কাটা হচ্ছে জানতে চাইলে কৃষকরা জানান, এক প্রকার জোর করেই স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের নেতৃত্বে ধানের জমিতে ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কোন কোন কৃষককে এক প্রকার জিম্মি করেই নিয়ে যাচ্ছে এসব ফসলি জমির মাটি। বাধা দিতে গেলেই হামলা, মামলা আর মারধরের শিকার হতে হয়।
কৃষকরা আরও জানান, নামমাত্র মূল্য দিয়ে তিন ফুট গর্ত করার কথা বলে দশ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিচ্ছে। মাটি এমনভাবে কাটা হয় যাতে করে পাশের জমিও ভেঙে যায়। আর এভাবেই পাশের জমিও মাটি কাটার জন্য দখলে নেয় তারা। আবার অনেক কৃষককে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকায় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। কৃষিজমি রক্ষায় এসব ভূমি খেকো বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না স্থানীয় প্রশাসন।
ডাংগা ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, ডাংগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাদিম মাহমুদের নেতৃত্বে তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম হিরণ ও আরিফ মিয়া কৃষিজমিতে ভেকু বসিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ এসব মাটি জোর পূর্বকভাবেই কেটে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বোরহান মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, জয়নগর গ্রামে তার ৪ বিঘা তিন ফসলি জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নিয়ে যাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতা নাদিম, তার ভাই শফিকুল ইসলাম হিরণ ও আরিফ মিয়া। তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় একাধিকবার বাধা দিয়েও কোনো ফল হয়নি। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুফল পাওয়া যায়নি। একই অভিযোগ করেন শরিফ মিয়া নামে আরেক কৃষক। তিনি জানান, স্থানীয় নেতারা শুধু কৃষিজমির মাটিই কেটে নিচ্ছে, তা নয়। এই নেতারা মসজিদের জন্য দানকৃত জমির মাটিও কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
তার নেতৃত্বে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করে ছাত্রলীগ নেতা নাদিম মাহমুদ মোবাইল ফোনে জানায়, কোনো কৃষকের কৃষি জমির মাটি কাটা হচ্ছে না। তাদের নিজস্ব জমি থেকেই মাটি কাটা হচ্ছে বলে তার দাবি।
ডাংগা ইউপি চেয়ারম্যান সাবের উল হাই জানান, উপজেলা পর্যায়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার জানালেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ফলে একদিকে ফসলি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে তিন ফসলি জমিও পুকুরে পরিণত হচ্ছে। কৃষকের জমি বাঁচাতে হলে ইটভাটা আগে বন্ধ করতে হবে। তাহলেই এই জমি রক্ষা করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, নতুন করে ইটভাটা তৈরি বা নবায়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও পলাশে এটি মানা হচ্ছে না। কৃষি বিভাগের মতামত ছাড়াই অদৃশ্য শক্তির মাধ্যমে এসব ইটভাটা তৈরি ও নবায়ন হচ্ছে। এর ফলেই কৃষি জমিগুলো থেকে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে করে দিন দিন কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মক হুমকিতে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, কৃষকের জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। কৃষকরা মামলা করলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।