দুই বছরেও শেষ হলো না শালিখা খনন, চলছে দুর্নীতি
কপোতাক্ষ নদের পাশ কেটে বয়ে চলেছে শালিখা নদী। দখল আর দূষণে প্রায় শেষ হওয়ার পথে খরস্রোতা এই নদীটি। এক সময় এই নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছিলো অনেক স্থাপনা, হাট-বাজার, গ্রাম ও শহর। সেই নদীর নাব্যতা ফেরাতে সরকারিভাবে এটি পুনরায় খননের উদ্যোগ নেয়াও হয়েছে। তবে উদ্যোগ নিয়েও ২-৩ বছরেও সেই নদী খনন শেষ হলো না। চলছে নদী খননের নামে অনিয়ম দুর্নীতি। নদী খননের নামে নদী কেটে খালে রুপান্তরিত করা হচ্ছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, ‘নদী খননের নামে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। যেখানে নদী ১ বছরের মধ্যে খননের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে ২ থেকে ৩ বছরেও নদী খনন শেষ হয় না। নদী খননের কথা বলে আমাদের তিন মৌসুমের ফসলসহ কৃষি, মাছ চাষ, আমন ধান, ইরি ধান সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। পুরো ১ বছর আমরা মাছ চাষ থেকে বিরত। নদীতে জল না থাকায় আমরা মাছে অনেক টাকা ক্ষতি সম্মুখীন হয়ে পড়েছি।’
স্থানীয়দের দাবি, ‘অনিয়ম দুর্নীতি না করে অতিদ্রুত নদী খনন করে কৃষিকাজ করতে সহযোগিতা করা হোক। তবে এখান থেকে একটু ওখান থেকে একটু না কেটে ভালোভাবে খননকাজ পরিচালনা করা হোক। কিন্তু এভাবে কাজ চললে সরকারি অর্থ অপচয় তো হবেই; কাজের কাজও কিছু হবে না।’
কলাগাছি ও দরমুড়াগাছা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা বার্তা২৪.কম'কে জানান, যেভাবে শালিখা নদী পুনরায় খনন করা হচ্ছে তা জনসাধারণের কোনো উপকারে আসবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন ইচ্ছে মতো নদী খনন করছেন। এখান থেকে একটু ওখান থেকে একটু একটু করে কেটেও শেষ করছেন না নদী খননের কাজ। ঠিকমতো এখনও কোনো জায়গায় ভালোভাবে কাজ করে নি।
তারা আর ও বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, নদী কেটে খাল বানানো হচ্ছে। এক্সভেটর মেশিন দিয়ে জমাট পলিমাটি নদীর পাড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে ওই মাটি ধুয়ে নদী ফের ভরাট হয়ে যাবে।’
নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির নেতা অধ্যক্ষ আশেক ই-এলাহী জানান, শুধু শালিখা নদীই নয়; জেলার সব নদী ও খাল পুনঃখননে অনিয়ম করা হচ্ছে। ফলে সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে পুনঃখনন করছে তা পূরণ হবে না। কেবল কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে। কিন্তু জনগণের কোনো কাজে আসবে না।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবকটি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখননের প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এর আওতায় যত নদী আছে সব ওই কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ২০ জুন কাজ শেষ করার কথা। কার্যাদেশ দেয়া হয় গত বছরের অক্টোবরে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈয়দ ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আলামিন সিকদার বার্তা২৪.কম কে জানান, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন অনুযায়ী খননকাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে ঠিকাদারদের কিছু করার নেই। এলাকার লোকজন পক্ষে-বিপক্ষে অভিযোগ বা কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খননকাজে কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না। এরই মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া শারমিন বার্তা২৪.কম'কে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের শিডিউল ও ডিজাইন অনুযায়ী পুনঃখনন করতে হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’