বিদ্যালয়ের বারান্দায় যেতে পারেনি ২৪ লাখ শিশু
দেশে বর্তমানে পাঁচ থেকে ১৭ বছরের শিশু রয়েছে তিন কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। যার মধ্যে ২৪ লাখ এক হাজার ১৪৬ জন শিশু কখনো বিদ্যালয়ের বারান্দায় যেতে পারেনি। এদের মধ্যে ১৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩৮ জন ছেলে ও ১০ লাখ পাঁচ হাজার ৮০৮ জন মেয়ে শিশু রয়েছে। এদিকে, মোট শিশুর মধ্যে শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে ৩৫ লাখ ৪০ হাজার জন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২২ শিশু শ্রম জরিপের এই তথ্য ওঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহযোগিতায় বিবিএস তার নিজস্ব প্যাটার্নে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
জরিপে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের একটি জাতীয় প্রাক্কলন মূল্যায়ন করে। ২০২২ সালে জরিপ পরিচালনা করলেও চলতি মাসের ১৪ তারিখ প্রকাশ করে বিবিএস।
বিবিএসের জরিপে জানানো হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যয় বহুল হওয়ায় ও অর্থ সংকটের কারণে ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিশু শ্রমে নিয়োজিত থাকায় তারা কখনো বিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। তবে ছেলে-মেয়ে শিশুর মধ্যে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ৩৩ দশমিক ২ শতাংশ ছেলে শিশু বিদ্যালয়ে যেতে বড় বাধার কারণ শিক্ষাব্যবস্থার খরচ বহন করা। আর ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ে শিশু পরিবারের বাড়ির কাজে সাহায্য বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিবিএস।
শিক্ষাবিদদের মতে, দেশে এখনো প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষার মান গড়ে তুলতে পারিনি। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য এলাকাভিত্তিক গবেষণার ঘাটতি রয়েছে। সংকট কাটাতে সমস্যা চিহ্নিত করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
জরিপে দেখা যায়, দেশে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৬৩৪ জন। যাদের মধ্যে ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৩৯ জন ছেলে শিশু আর মেয়ে শিশু রয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৫ জন।
দেশের বড় একটা অংশের শিশু বিদ্যালয়ের বারান্দায় যেতে না পারার বিষয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ মনজুর আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্র মিলে হয়তো সংখ্যাটা বলা হয়েছে, ফলে বোঝা যাচ্ছে বড় একটা শিশুর সংখ্যা স্কুলে যাচ্ছে না। যে শিশুরা যাচ্ছে তাদের বড় একটি সংখ্যা আবার ঝরে যাচ্ছে। আবার যারা যাচ্ছে তারা কতটুকু মানসম্মত শিক্ষা পাচ্ছে তাও আমাদের দেখা উচিত। প্রাথমিক শিক্ষা যে ধরনের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে তা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত নয়। শিক্ষার মান ও অবকাঠামোগত ত্রুটির জন্য আমার এখনো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি। সেখানে পর্যাপ্ত শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে তেমনি লাইব্রেরি ও খেলাধুলার নূন্যতম পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারারও একটা বড় কারণ।
তিনি আরও বলেন, হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার না থাকার কারণে অনেক শিশু এখন শিক্ষার বাইরে রয়েছে। শিক্ষার বাইরে থাকা শিশুর সঠিক সংখ্যা বের করতে হলে এলাকাভিত্তিক গবেষণার দরকার। এই সংকট সমাধানে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে সকলের জন্য শিক্ষা সরকারের যে অঙ্গীকার তা আমরা সফল করতে পারবো না।