বোয়িংয়ের প্লেনে আয় নয়, দায় বাড়ছে বিমানের



ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ড্রিমলাইনার

ড্রিমলাইনার

  • Font increase
  • Font Decrease

নতুন কেনা বোয়িং কোম্পানির উড়োজাহাজগুলো সঠিক ও উপযুক্ত রুটে ব্যবহার না করে সম্পদ ও অর্থের অপচয় করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এসব উড়োজাহাজ দিয়ে এয়ারলাইন্সের আয় বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে এতে দায় বাড়ছে বিমানের।

দূরপাল্লার রুটের অভাবেই বহরে থাকা বোয়িংগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আর এতে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নতুন নয়। ২০১১ সাল থেকে বিমানের বহরে প্রথম যুক্ত হয় বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর উড়োজাহাজ। এরপর বিমানের বহরে একে একে যুক্ত হয়েছে দুটি বোয়িং ৭৩৭, দুটি ড্রিমলাইনার ৭৮৭সহ মোটি ৮টি ব্র্যান্ড নিউ উড়োজাহাজ।

বিমান ২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি করে। এরইমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে আটটি উড়োজাহাজ। বাকি দুটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার চলতি বছরের সেপ্টেম্বর।

বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ কেনা হয়েছিল স্বল্প দূরত্বে যাত্রী পরিবহনের জন্য। মূলত ঢাকা-ব্যাংকক, ঢাকা-সিঙ্গাপুর, ঢাকা-কুয়ালালামপুরের মতো আঞ্চলিক রুটে চলবে বোয়িং ৭৩৭। এই দুটি বাদে সবগুলো উড়োজাহাজই কেনা হয়েছিল দূরপাল্লার রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য। বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর ও ড্রিমলাইনার টানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম। ঘণ্টায় ৬৫০ মাইল বেগে উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনারের উচ্চতা ৫৬ ফুট এবং এর পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট।

বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞদের মতে, দূরপাল্লার রুটে চলা প্রতিটি উড়োজাহাজকে গড়ে ১২ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করতে পারলেই এর যথাযথ ব্যবহার সম্ভব। কিন্তু বিমান একেকটি উড়োজাহাজকে গড়ে ৫ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করতে পারছে না শুধুমাত্র সঠিক রুট প্ল্যানিংয়ের অভাবে।

বিমানের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ২০১০ সালে বিমান যখন বোয়িংগুলো কেনার চুক্তি করে তখনই থেকে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ রুট প্ল্যানিং সম্পন্ন করা উচিত ছিল। অথচ দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টার ফ্লাইটও পরিচালনা করা হচ্ছে এসব উড়োজাহাজ দিয়ে। এতে দামি এই বোয়িংগুলোর সাইকেল নষ্ট হচ্ছে। দুই ঘণ্টার ফ্লাইটেও যেমন একটি সাইকেল নষ্ট হবে, আবার ১২ কিংবা ১৬ ঘণ্টার ফ্লাইটেও একটি সাইকেল নষ্ট হবে। এভাবে ১৫০০ সাইকেল নষ্ট হলে উড়োজাহাজের বড় ধরনের রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। আর এতে প্রয়োজন হয় কয়েক কোটি টাকা।

বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর এ আসন সংখ্যা ৪১৯ আর ড্রিমলাইনারে আসন ২৭১টি। অথচ এসব স্বল্প রুটের ফ্লাইটে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় উড়োজাহাজসমূহের পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। গত ১১ জানুয়ারি ড্রিমলাইনার ব্যাংকক থেকে মাত্র ৫৬ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করার উদাহরণও রয়েছে।  

অথচ ২০১১ সাল থেকে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭ দিয়ে এবং পরবর্তীতে যুক্ত হওয়া ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার দিয়ে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুরের মতো স্বল্প দূরত্বের ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।

এ নিয়ে বিমানের কর্মীদের মধ্যে যেমন ক্ষোভ রয়েছে তেমনি বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরাও দূরপাল্লার উড়োজাহাজের স্বল্প দূরত্বে পরিচালনার বিরোধীতা করে আসছেন। বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতার মুখে পড়লেও এখন পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি। যে কারণে এখনো স্বল্প দূরত্বের ফ্লাইটেই চলছে বোয়িং মডেলের উড়োজাহাজগুলো।

বিশেষজ্ঞরা মধ্য ও স্বল্প দূরত্বের রুটগুলোতে এসব উড়োজাহাজ না চালানোর পরামর্শ দেন তারা। বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কোনো রুট প্ল্যানিং না থাকায় যেখানে যে উড়োজাহাজ উপযুক্ত নয়, সেখানে তা দিয়ে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এতে বিমানের সম্পদের যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনি আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।  

এক সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-টোকিও, ঢাকা-নিউইয়র্ক,ঢাকা-প্যারিস, ঢাকা-ফ্রাঙ্কফুর্ট, ঢাকা-ম্যানচেস্টার, ঢাকা-রোমের মতো দূরপাল্লার ফ্লাইট পরিচালনা করতো। বিমান কর্তৃপক্ষ বলে আসছে এসব রুটে পুনরায় চালু করা হবে। আর এর মাধ্যমে এসব উড়োজাহাজের সঠিক ব্যবহার করবে বিমান।

এ প্রসঙ্গে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) শাকিল মেরাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ড্রিমলাইনার নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ও পরিকল্পনা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের পৃথিবীটা আরো বড় হবে ড্রিমলাইনারের ওপর ভর করে। ঢাকা-দোহা-ঢাকা, ঢাকা-কুয়েত-ঢাকা, ঢাকা-মদিনা-ঢাকা রুটসমূহ পরিচালনা করা হবে ড্রিমলাইনার দিয়ে। অচিরেই বিমান ঢাকা-গুয়াংজু-ঢাকা, ঢাকা-কলম্বো-ঢাকা ও ঢাকা-মালে-ঢাকা রুটে পাখা মেলবে। নতুন রুটসমূহ ড্রিমলাইনার দিয়ে পরিচালনা করা হবে।’

‘তৃতীয় ও চতুর্থ ড্রিমলাইনার বহরে যোগ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া দিল্লী, হংকং, রোম, ম্যানচেস্টার, টোকিং ফ্লাইট পুনরায় চালু করার পাশাপাশি মন্ট্রিয়ল, সিডনির মতো দূরপাল্লার নতুন রুটেও পাখা মেলবে বিমান,’ বলেন শাকিল মেরাজ।   

তিনি বলেন, নিউইয়র্ক রুট চালুর ব্যাপারে বিমানের প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু বেবিচক যদি বাংলাদেশকে ক্যাটাগরি-১ উন্নীত করতে না পারে সেক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার নেই।

   

সম্মাননা পেলেন পদকপ্রাপ্ত ১২ ব্যক্তি ১ প্রতিষ্ঠান 



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের ১২ গুণিজন ও এক প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউশন অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)'র মাল্টিপারপাস হলরুমে ঢাকাস্থ সাতক্ষীরা জেলা সমিতির আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী, গুণিজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাদেরকে এই এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

যাদেরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন- স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রথিতযশা শিশু বিশেষজ্ঞ ও সমাজ সেবক জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান, দেশের অন্যতম সেরা সঙ্গিতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও ধান বিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুল মজিদ। একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার শেখ লুৎফর রহমান, প্রথিতযশা চিত্রকর সৈয়দ জাহাঙ্গীর, কবি, সঙ্গীত রচিয়তা, নাট্যকর ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর, বরেণ্য ণ্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমিন, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক তোয়াব খান, কবি ও সাংবাদিক কাজী রোজী, অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রশিল্পী এবং বিজ্ঞাপিন নির্মাতা আফজাল হোসেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জল ঘোষাল এবং অভিনেতা ও আবৃতিকর জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে সমাজসেবায় উল্লেখ্য অবদানে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

সম্মাননায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন মিশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এএফএম গোলাম শরফুদ্দিন, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খান এবং প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক তোয়াব খানের পক্ষে মরোনত্তর সম্মননা গ্রহণ করেন শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ লুৎফর রহমানের পক্ষে সম্মননা গ্রহণ করেন কন্যা লতা রহমান, সিকান্দার আবু জাফর এবং সৈয়দ জাহাঙ্গীরের পক্ষে সম্মননা গ্রহণ করেন সাবেক সচিব ও সতক্ষীরা জেলা সমিতির উপদেষ্টা শেখ শাফি আহমেদ, কাজী রোজির পক্ষে মরোনত্তর সম্মননা গ্রহণ করেন কাজী মাহবুবা ও আফজাল হোসেনের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন মাত্রার প্রধান নির্বহী কর্মকর্তা খন্দকার আলমগীর।

এসময় অনুভূতি প্রকাশ করেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও ধান বিজ্ঞানী ড. মো. আব্দুল মজিদ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মনোরঞ্জল ঘোষাল এবং অভিনেতা ও আবৃতিকর জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।

সাতক্ষীরা জেলা সমিতি ঢাকার সভাপতি রফিকুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাসুদ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিথ ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা সমিতি ঢাকার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান, উপদেষ্টা মো. ফখরউদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের  চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহসহ সাতক্ষীরা আরোও অনেক গুণি ব্যক্তিবর্গ।

;

টাঙ্গাইলে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

টাঙ্গাইলে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

  • Font increase
  • Font Decrease

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মেহেদী হাসান মিশু (১৮) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন।

শনিবার (১৮ মে) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে, শুক্রবার (১৭ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া নামক এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন মিশু।

নিহত মেহেদী হাসান মিশু উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম মোল্লার ছেলে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রুবেল সরকার।

জানা যায়, মেহেদী হাসান শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেলযোগে গোবিন্দাসী এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কষ্টাপাড়া এলাকায় পৌঁছলে পেছন দিক থেকে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে যায় মেহেদী। এসময় আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে অবস্থা আরও অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান উল্লাহ্ বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর খবর জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি।

;

দেশের একমাত্র জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরটি যেনো এখন ভূতের বাড়ি!



রেদ্ওয়ান আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে ১২৫ শতক জায়গার ওপর নির্মিত দেশের একমাত্র ’জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর’। রক্ষণাবেক্ষণ, প্রচার-প্রচারণা ও দেখভালের অভাবে আজ এটির বেহালদশা। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা ভবনটির ভিতর থেকে দেখলে এটিকে ভূতের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বোঝার উপায় নেই, পুরো এশিয়া মহাদেশের দুইটি জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের মধ্যে এটি অন্যতম আন্তর্জাতিক চাহিদা সম্পন্ন একটি জাদুঘর। অথচ, এখানে রয়েছে চারটি বিদেশি জাতিগোষ্ঠীসহ ২৯টি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর জীবনধারা, ইতিহাস এবং জীবনযাত্রার উপকরণ প্রদর্শনী। রয়েছে বার্লিন প্রাচীরের কয়েকটি ভাঙা টুকরা, একটি গ্রন্থাগার ও চিত্রশালা।

শুক্রবার (১৭ মে) বিকেল ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটিতে রয়েছে বিদেশের চারটি জাতিগোষ্ঠীসহ বর্তমানে ২৯টি বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতি-গোষ্ঠীর জীবনধারা, ইতিহাস এবং জীবনযাত্রার উপকরণ প্রদর্শনী। চারটি গ্যালারিতে বিভক্ত জাদুঘরটির ১১টি কক্ষে এগুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে।

জাদুঘরে প্রবেশ করতেই প্রথমেই চোখে পড়বে হলঘর। হলঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রথম গ্যালারির প্রথম কক্ষটি বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ ও আলোকচিত্রের সাহায্যে সাজানো হয়েছে। কক্ষটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীর আলোকচিত্রসহ জাতীয় ফুল, ফল ও পশু-পাখির প্রতিকৃতি তৈরি করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

দ্বিতীয় কক্ষে ৪টি বিদেশি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে। এই কক্ষে চোখে পড়বে, মাঝখানে বাটিযুক্ত বড় আকৃতির কাঠের থালা, সহজে দুই ভাঁজ করা যায় এমন কাঠের নকশা খচিত জায়নামাজ, নকশাযুক্ত কাঠের সিন্দুক ও জানালা। এ কক্ষে আরও আছে পাঠানদের ব্যবহৃত তরবারি, বর্শা, তীর ও ধনুক। এছাড়া বাকি ৯টি কক্ষে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর পরিধেয় অলংকার প্রদর্শিত হচ্ছে।

নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর জীবনধারা

দুই নম্বর গ্যালারির ক কক্ষে প্রবেশ করলে একজন দর্শনার্থী দেখতে পাবেন, পাঙান, মণিপুরী, ওঁরাও জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার আলোকচিত্র, মান্দাই জনগোষ্ঠীর বাসগৃহ ও তাদের হস্তশিল্পজাত উপকরণ। খ নম্বর কক্ষে সাঁওতাল আর পলিয়া জনগোষ্ঠীর গ্রামীণ ও ঘরোয়া জীবনের প্রতিকৃতি দেখা যাবে। তাদের ব্যবহৃত গৃহস্থালী জিনিসপত্রও রয়েছে সেখানে।

তিন নম্বর গ্যালারির ক নম্বর কক্ষে মুরংদের গ্রাম্য জীবন এবং ব্যবহারের জন্য নিজেদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। খ এবং গ নম্বর কক্ষে ত্রিপুরাদের জীবন ধারার আলোকচিত্র রয়েছে। তাদের ব্যবহৃত টুপি, ঝুড়ি, কাপড়-চোপড়, বম জনগোষ্ঠীর চরকা, কম্বল, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর কাপড়-চোপড়, ত্রিপুরাদের বাজার ব্যবস্থার আলোকচিত্র দেখা যাবে।

চার নম্বর গ্যালারির ক নম্বর কক্ষে খুমিদের জীবন ধারা, চাকমাদের ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ, শিকারের অস্ত্র-শস্ত্র, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পোশাকপরিচ্ছদ দেখা যাবে। খ নম্বর কক্ষে আছে মারমাদের ঘরোয়া জীবনের আলোকচিত্র এবং ব্যবহৃত জিনিসপত্র।

তবে, এসব প্রদর্শনীর মাঝে-মাঝেই দেখা মিলেছে জাদুঘর ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থা। ছাদ চুইয়ে, দেয়াল বেয়ে গ্যালারিতে পানি পড়ছে। তাই সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করে রাখা বাক্সগুলো ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে, অযত্ন-অবহেলায় বিবর্ণ হয়ে পড়েছে জাদুঘরে সংরক্ষিত সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলো। খসে পড়ছে জাদুঘর ভবনটির দেয়ালের পলেস্তারা। দেখভালের জন্য নেই পর্যাপ্ত লোকবলও।

ছুটিরদিন হওয়া সত্ত্বেও দর্শনার্থী খরা দেখা গেছে দেশের পূর্বকোণে অবস্তিত এই জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরে। এদিন বিকেলে জাদুঘরের ১১টি কক্ষে দর্শনার্থী দেখা গেছে হাতে গোনা কয়েকজন।

উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়া তিন বান্ধবী আরজু, সিনথিয়া ও জোনাকি হালিশহর থেকে ঘুরতে এসেছে বাংলাদেশের একমাত্র জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরে। তিন বান্ধবী মিলে নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস-ঐতিহ্য, জীবনাচার ও বিভিন্ন নিদর্শনগুলো এক এক করে দেখছে। এসময় তাদের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের এই প্রতিনিধির।

তারা বলে, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরে এসে জানতে পারছি, বাংলাদেশের নৃতাত্ত্বিক ও আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা। প্রকৃতির সাথে সমন্বয় করে তারা কীভাবে এখনো টিকে আছে, তার নিদর্শন এখানে রয়েছে। এরমধ্যে আমাদের চোখ যাচ্ছে বারবার মনিপুরী, গারো, সাওতালদের বিভিন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ-অলংকারে। কেননা, তারা খুব সুন্দর সুন্দর পোশাক-অলংকার পরে।

জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সোম থেকে শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে, রোববার বন্ধ থাকে জাদুঘর। আর অন্যান্য দিন দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বিরতি থাকে। এখানে স্কুলশিক্ষার্থীরা জনপ্রতি ১০ টাকা, সাধারণ দর্শনার্থী ৩০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থী ২০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের দর্শনার্থীরা ৪০০ টাকা করে প্রবেশমূল্য দিয়ে পরিদর্শন করতে পারেন।

খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা

পাশে থাকা দোতলা বিশিষ্ট পুরোনো অফিস ভবনটিও বেহালদশা। ওই ভবনের ওপরতলার এক কোণে থাকা গ্রন্থাগারের অবস্থা আরও নাজুক। কক্ষটিতে কয়েকটি কাঠের ও স্টিলের আলমারিতে কিছু বই থাকলেও বসে পড়ার মতো ভালো পরিবেশ নেই। তাছাড়া, জাদুঘরে জায়গা স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত অধিকাংশ নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শন করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে, প্রায় তিন হাজার নিদর্শন গ্রন্থাগারের পাশের স্টোরে সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু সেখানেও যথেষ্ট অবহেলার ছাপ দেখা গেছে। ধুলাবালি জমে নষ্ট হওয়ার পথে এসব নিদর্শন।

জাদুঘরের প্রশাসনিক দফতর জানিয়েছে, গত মাসে (এপ্রিল) ১ হাজার ২৯৩ জন দর্শনার্থী পরিদর্শনে এসেছেন। বিদেশি ৯ জন এবং সার্কভুক্ত দেশের আরও ২ জন দর্শনার্থী এখানে এসেছেন। এতে এপ্রিল মাসে টিকেট বিক্রি হয়েছে ৪৪ হাজার ১৩০ টাকা। তবে, এই জাদুঘরের পেছনে সব মিলিয়ে প্রতিমাসে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা। এতে আয়ের চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় প্রায় কয়েকগুণ।

ফারুক আহমেদ নামের আরেকজন দর্শনার্থী বার্তা২৪.কমের কাছে খুলে দেন তার অভিযোগের বাক্স। তিনি বলেন, এখানে যে জাতিগোষ্ঠীর জীবনচরিত্র রয়েছে, তা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের উচিত রক্ষণাবেক্ষণে আরও যত্নবান হওয়া, সংগ্রহশালা বাড়ানো। তাছাড়া, এখানে দেখছি, এটা-সেটা ভেঙে আছে, ঠিক করা হচ্ছে না। ধুলাবালিতে আচ্ছন্ন সবকিছু। বৈদ্যুতিক তারের পাইপ পড়ে আছে। এতো গুরুত্বপূর্ণ এই জাদুঘরটিকে এরকম অযত্নে-অবহেলায় রাখলে অচিরেই আমরা জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের ইতিহাস-ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবো। যে নিদর্শনগুলো আছে, তা-ও ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইকবাল হোসেন নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, এখানে মাত্র ২৭টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংক্ষিপ্ত ধারণা আছে। অথচ, প্রায় ১০০টির মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে। প্রতিষ্ঠার এতো বছর পরেও সেগুলো এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি যা আছে সেগুলোর সংগ্রহশাল, স্থান, সংগ্রহকারী ইত্যাদির কোন তথ্যও নেই। যার কারণে দর্শনার্থীদের এসে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অথচ, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের নিয়ে জানাশোনার জন্য এটি এশিয়া মহাদেশে অন্যতম। এছাড়া, এই ডিজিটাল যুগে এসেও জাদুঘরের আধুনিকায়ন নেই। পর্যাপ্ত লাইট, ফ্যান বা আলো-বাতাস নেই। নেই আসবাবপত্রে নতুনত্ব।

হলঘরের উপরের দেয়ালে থাকা পাকিস্তান আমলের তৈলচিত্রগুলোর দিকে আঙুল ইশারা করে তিনি বলেন, এগুলো পাকিস্তান সময়ের। পলেস্তরা খসে পড়ায় এগুলো এখন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছু টাকা খরচ করে এগুলো আবার সুন্দর আর্ট করে চকচকা করতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এই ছবিগুলো আর পাওয়া যাবে না। নতুন করে তৈরিও সম্ভব না।

এসব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে জাদুঘরের উপ-পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমানের সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কমের। তিনি বলেন, এখানে নিদর্শন সংগ্রহ বাড়ানো ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তেমন কোন বাজেট নাই। টিকিটের টাকাও সরকারের রাজস্ব খাতে চলে যায়। গতবছর দেড় লাখ টাকা বাজেট পেয়েছি মাত্র। এতে কিছুই হয় না। লোকবলেরও সংকট আছে।

তিনি জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কেয়ার টেকারসহ ৩০ জনের পদ থাকলেও আছে কেবল ১৭ জন। যে টাকা বরাদ্দ আসে চাইলেই একজনকে রাখা যায় না। জাদুঘরের অনেক কিছু সংস্কার করা প্রয়োজন। সেজন্য দরকার পর্যাপ্ত অর্থ। কিন্তু ঢাকা থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না। এসব বিষয়ে আমি মহাপরিচালককে কয়েকবার বলেছি। কিন্তু, সাড়া নেই। তবুও আমরা সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব করার চেষ্টা করছি।

;

বেনাপোলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমার নাগরিকসহ আটক ৪



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোরের বেনাপোল সীমান্ত পথে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মিয়ানমারের এক নাগরিকসহ ৪ বাংলাদেশিকে আটক করেছে বিজিবি।

শনিবার (১৮ মে) সকাল ৯টায় বেনাপোল সীমান্তের ঘিবা মাঠ থেকে তাদের আটক করে বিজিবি।

আটককৃতরা হলেন, ঢাকার খিলগাও জুরবিটা এলাকার ধুপিচাদ মন্ডলের ছেলে কৃষ্ট ধর মন্ডল (৫০), মুন্সিগঞ্জ সদরের সন্দুয়া গ্রামের শ্রী সুধীর চন্দ্র বৈরাগীর মেয়ে আশা রানী বাছার (৪০), নড়াইলের পেড়লি গ্রামের খোকা শেখের মেয়ে মোছা. শিউলী খাতুন ও মিয়ানমার নাগরিক মো. হোসেন।

ঘিবা বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার হাবিলদার আব্দুস সামাদ জানান, আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছিলেন এবং মিয়ানমার নাগরিক ভারতে ভাল কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে মামলা দিয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

;