মোংলা ইপিজেডে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বাগেরহাট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বাগেরহাটের মোংলা ইপিজেডে ভিআইপি নামক ভারতীয় কোম্পানির মালিকানাধীন একটি ব্যাগ তৈরির কারখানার প্রায় দেড় সহস্রাধিক শ্রমিককে ঈদের আগে হঠাৎ করে ছাঁটাই করা হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার (২৫ মার্চ) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শ্রমিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

শ্রমিকরা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদ ও শ্রম আইন অনুযায়ী তাদের পাওনা পরিশোধের দাবিতে সকাল ৯টার পর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ইপিজেডের গেট ও ভিআইপি ফ্যাক্টরি এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালনসহ দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। এ সময় বিক্ষুব্ধ নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা ফ্যাক্টরি এলাকায় ঢিল, ইট পাটকেল নিক্ষেপসহ ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশের সাথে শ্রমিকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ এসে লাঠি চার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে।


কারখানা কর্তৃপক্ষের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, মোংলা ইপিজেডের অভ্যন্তরে লাগেজ (ব্যাগ) উৎপাদনকারী ভারতীয় কোম্পানির মালিকানাধীন ‘ভিআইপি’ নামক প্রতিষ্ঠানে গত কয়েক মাস ধরে লোকসান চলছিল। এতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ এক বছর চাকরিরত ১ হাজার ৭শ’ ৭৭ জন শ্রমিককে শ্রম আইন অনুযায়ী ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সোমবার সকাল ৯টার দিকে ছাঁটাইকৃত এসব শ্রমিকদের চলতি মার্চ মাসের বেতন ও ঈদুল ফিতরের বোনাসের টাকা দেয়া শুরু করলে শ্রমিকরা হট্রোগোল পাকাতে শুরু করে। এসময় শ্রমিকরা বাড়তি আরো তিন মাসের বেতন ও ঈদুল আযহার বোনাসের টাকা প্রদানের দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। শত শত নারী পুরুষ শ্রমিক ইপিজেডের প্রধান গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকে।


এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে মারমুখী হয়ে ইপিজেডের গেটের ভিতরে কারখানা এলাকায় প্রবেশ করে ঢিল ও ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। শ্রমিকরা মারমুখী হয়ে এসময় কারখানায় ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এসময় ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মী ও পুলিশের সাথে শ্রমিকদের কয়েক দফা সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপসহ লাঠিচার্জ করে বিকেল ৩টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কয়েকজন শ্রমিক ও ইপিজেডের কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, শ্রম আইন মেনে অগ্রিম বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধ করে শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছে। তার পরও কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক বিনা উসকানিতে ফ্যাক্টরিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ ব্যাপারে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে শ্রমিকরা জানান, প্রায় ৪ হাজার শ্রমিককে জোর করে কাগজে সই নিয়ে চাকরি থেকে অবৈধভাবে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। ছাঁটাইয়ের আগে তিনটা বেসিক (তিন মাসের বেতন) ও দুইটা বোনাস পরিশোধের কথা থাকলেও মালিকপক্ষ তা না করে ছাঁটাই করলে শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ জানায়। এতে বেপজা এর সিকিউরিটি সদস্যরা শ্রমিকদের মারধর করে প্রায় ১শ লোককে আহত করেছে।

মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বেপরোয়া হয়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকজন শ্রমিককে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। পরিস্থিতি আনতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করা হয়।

বাগেরহাট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. রাসেলুর রহমান বলেন, ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিবেশ এখন শান্ত আছে।