কুয়াকাটার সৈকতে অসংখ্য মৃত জেলিফিশ, ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

গত কয়েকদিন ধরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে দেখা মিলছে অসংখ্য মৃত জেলিফিশের। সাগরের কোথাও জাল ফেলা যাচ্ছে না। জাল ফেললেই উঠে আসছে জেলিফিশ। জেলিফিশের আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় ১ থেকে ২ মাস ধরে মাছের আকাল চলছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছেন জেলেরা।

মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটারের একাধিক পয়েন্টে (জিরো পয়েন্ট, লেম্বুর চর, গঙ্গামতির চর, তিন মোহনা, ঝাউবন) জোয়ারের পানির সঙ্গে অসংখ্য মরা জেলিফিশ ভেসে এসে সৈকতে পড়ে আছে। এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে গোটা সৈকতে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে স্থানীয়সহ ঘুরতে আসা পর্যটকদের।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সুব্রত কুমার বালা বলেন, জেলিফিশের নাম শুনেছি, কিন্তু কখনো দেখিনি আজকেই প্রথম দেখলাম এটা দেখতে অনেক সুন্দর, কিন্তু এগুলো দ্রুত সৈকত থেকে সরানো উচিত। নাহলে পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে সৈকতের পরিবেশ দূষিত হবে। 

উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, জেলিফিশের মাথা, হৃদপিণ্ড, লেজ, মেরুদণ্ড বা হাত-পা বলে কিছু নেই। এটি সমুদ্রের এক আজব প্রাণী। প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের এ প্রাণীকে বিজ্ঞানীরা ‘ডাইনোসর যুগের প্রাণী’ হিসেবে বিবেচনা করেন। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এবং মার্চ মাসের শুরুতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উপকূলে বিপুল পরিমাণ সাদা জেলিফিশের দেখা মেলে। এবারও সৈকতে ভেসে এসেছে অসংখ্য জেলিফিশ। এগুলোর মধ্যে কোনোটা আকারে ছোট, কোনোটা বড়। দেখতে অনেকটা অক্টোপাসের মতো। 

সৈকতের ঝাউবন এলাকার জেলে সোহেল মিজি জানান, ১ মাস ধরে জেলিফিশের উৎপাত বাড়তে শুরু করে। প্রথম দিকে কম থাকলেও এখন পরিমাণটা অনেক বেশি। সাগরে গেলে কোনো মাছ পাচ্ছি না, জেলিফিশের কারণে। পুরো জাল আটকে থাকে নোনায় (জেলিফিশে)। আমাদের জাল, রশি নষ্ট করে ফেলে তাই জাল তুলে নিয়ে আসছি জেলিফিশ কমলে আবার জাল দেব।’


জেলিফিশের প্রভাবে ক্ষতির বিষয় জানতে চাইলে গঙ্গামতি এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী এবং জেলে জলিল ঘরামি বার্তা২৪.কে বলেন, আমার বদলা (নৌকায় কাজ করা কর্মচারী) এবং তৈল খরচসহ প্রায় প্রতিদিন আমার ২০০০০ হাজার খরচ। কিন্তুু সাগরে নোনা (জেলিফিশের) পরিমাণ এতটাই যে মাছতো পেলামই না বরং নোনায় (জেলিফিশে) আটকে আমার আটটি চিংড়ি জাল নষ্ট হয়ে গেছে। এক একটা জাল তৈরিতে খরচ ২১-২২ হাজার টাকা। মাছ ধরতে না পারায় এবং জাল ছিঁড়ে যাওয়ায় আমিসহ হাজার হাজার জেলে কয়েক কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে।

উপকূলের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিশের ইকোফিশ-২ বাংলাদেশ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘সমুদ্রের গভীরে অক্সিজেন হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলিফিশের দেখা মিলছে ৷ এগুলো স্পর্শ করলে শরীর চুলকায়, এমনকি ঘা হয়ে যেতে পারে। বিশেষ কোষের কামড়ে মানুষ মারাও যেতে পারে। তাই কাঠ বা লোহা দিয়ে তুলে এ মাছগুলো বালুতে পুঁতে ফেলা উচিত।

তিনি আরও বলেন, জেলিফিশ ভেসে আসায় জেলেদের অর্থনৈতিক লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। তবে সামাজিক ইকোসিস্টেম রক্ষার জন্য সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হবে দেশ ও জাতিকে।’

কলাপাড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বার্তা২৪.কমকে জানান, স্থানীয় জেলেদের কাছে জেলিফিশ সাগরের ‘নোনা’ হিসেবে পরিচিত। জেলিফিশ কাছিমের প্রধান খাদ্য। কাছিম কমে গেলে জেলিফিশের আধিক্য স্বাভাবিক বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক সাগর-মহাসাগরে ‘জেলিফিশ ব্লুম’ বা উচ্চ প্রজনন জেলেদের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে জেলেদের জালে মাছের পরিবর্তে হাজার হাজার জেলিফিশ আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। বাজারমূল্য না থাকায় জেলেরা এসব মৃত জেলিফিশ সাগরে ফেলে দেয়।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি, পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, উপকূলীয় উন্নয়ন এবং অতিরিক্ত মাছ ধরার কারণেও জেলিফিশ ব্লুমের জন্য দায়ী।