তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা মেলে আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। এই গ্রামে প্রবেশ করে তালগাছগুলি দেখে মনে পড়ে যায় রবিঠাকুরের সেই ছড়া-

‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে…’

বলছি, বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে সেই গ্রামটি ‘তালপাখার গ্রাম’ নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গরমে তালপাতার পাখার বাতাসে শরীর জুড়িয়ে যায়। বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন। অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে, গ্রাম দুটি ‘পাখার গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

পাখার গ্রাম যোগীরভবন, আড়োলা, আতাইল পাড়া, ছবি- বার্তা২৪.কম

সম্প্রতি, গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামের একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে তৈরি হয়, ‘হাতলপাখা’ বা ‘ডাঁটপাখা’। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয়, ‘ঘোরানো পাখা’ বা ‘ঘুন্নী পাখা’ আর ‘পকেট পাখা’।

পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

গ্রামে প্রবেশ করেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং-তুলির আঁচড়ে ঘোরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রঙিন ঘোরানো পাখা বাঁধাই করছেন গোলজার। বাঁধাই হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

তৈরি হবে ২০ লাখ তালপাখা
বাড়ির উঠানে বসে ‘তালপাখা’ বাঁধাইয়ের কাজে ব্যস্ত কুলসুম বেগম। তালপাতার তৈরি হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে তালপাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় গ্রামের মানুষ ‘তালপাখা’ তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখা তৈরি কাজের পরিধিও।

তালপাখা তৈরিতে সময় পার করছেন গ্রামের নারীরা, ছবি- বার্তা২৪.কম

আড়োলা গ্রামের খোন্দকার জানান, দাদার আমল থেকে তারা তালের পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আঁচড় দিয়ে তালপাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন।

আকরাম আকন্দ জানান, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদেই এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে, গত বছর তিন গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বেড়ে গ্রাম থেকে ২০ লাখ পাখা তৈরি করে তা বিক্রি করা হবে।

তৈরি হয় পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা, ডাগুর পাখা
তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম দেওয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরি করতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং জিআই তার প্রয়োজন পড়ে। তৈরি হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন রঙের আঁচড় দিয়ে সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রঙ। ১০ টাকায় কেনা তালগাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয়, বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতা সংগ্রহ, পাখা তৈরি ও রঙের আঁচড়
বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ।

চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ লাগানো হয়। এটি শেষ হয়ে গেলে তা বিক্রয় উপযোগী হয়।

দেশের ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

এ বিষয়ে যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ জানান, প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ‘ডাগুর পাখা’ তৈরি করেন তিনি। এই পাখাগুলি বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়।

গত বছরের তুলনায় এবছর পাখার চাহিদা বেশি বলে উল্লেখ করে মামুনুর রশিদ বলেন, একটি তালপাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের খরচও বেড়ে গেছে।

অবসরে পাখা তৈরি করছেন গ্রামের নারীরা, ছবি- বার্তা২৪.কম


 

পাখা তৈরির বিষয়ে আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি করে হাতপাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন বছরের পর বছর ধরে। পাখা বিক্রি করে এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন সে টাকায়।

হাতপাখা তৈরির তিন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ‘পকেট পাখা’ ১১ টাকা, ‘ঘুরানী পাখা’ ২০ টাকা এবং ‘ডাগুর পাখা’ ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে-বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা প্রতি বছরই বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম বার্তা২৪.কমকে জানান।

শহর ও গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে ধনী, গরিব থেকে সব পরিবারেই হাতপাখার ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।

   

৩ বছর পর ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেল বাংলাদেশি কিশোর



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বিজিবি-পুলিশ ও বিএসএফ এর মধ্যস্থতায় প্রায় তিন বছর পর ভারত থেকে মায়ের কাছে ফিরলেন জামালপুরের বকশীগঞ্জের মানসিক প্রতিবন্ধী মঙ্গল মিয়া (১২)। সে উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের মোরারপাড়া গ্রামের আল ফারুকের ছেলে ।

শুক্রবার( ২৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে বকশীগঞ্জ থানার পুলিশ মঙ্গল মিয়াকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২ বছর সাত মাস আগে ভুলবশত উপজেলার ধানুয়া কামালপুর সীমান্ত এলাকায় ঘুরাঘুরি করার সময় ভারতের বিএসএফ তাকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু মঙ্গল মিয়ার পরিবার বিষয়টি না জানায় তাকে খোজাঁখুজি করতে থাকে। অবশেষে দুই মাস আগে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে খবর পায় নিখোঁজ কিশোর মঙ্গল মিয়া ভারতের কারাগারে বন্দি আছে।


পুলিশ নিখোঁজ কিশোরের ঠিকানা যাচাই বাছাই করে দুই দেশের পুলিশ, বিজিবি ও বিএসএফ এর মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু করেন।

দুই মাস পর শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) নাকুগাও চেক পোষ্ট এর ১১১৬ নং পিলার এলাকা দিয়ে ভারতের পুলিশ ও বিএসএফ এর সদস্যরা মঙ্গল মিয়াকে বাংলাদেশের বিজিবি ও পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।

এ সময় বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার ওবায়দুল ইসলাম, বকশীগঞ্জ থানার এস আই লাবলু আহমেদ, বিএসএফ এর ইন্সপেক্টর নিম সিম তনংচিন ও ভারতীয় পুলিশের ইন্সপেক্টর ওমর ফারুকসহ দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনি ও পুলিশ টিমের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আবদুল আহাদ খান বার্তা২৪.কম-কে জানান, পুলিশের একটি টিম মঙ্গল মিয়াকে উদ্ধারের পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসময় তার মা নেছিফুল বেগম, বড়ভাই রিয়াজুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

;

সাতক্ষীরায় বিষাক্ত কেমিক্যাল দেওয়া ৪শ কেজি আম জব্দ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করার প্রস্তুতিকালে ৪শ কেজি আম জব্দ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা বাজারের আজিজুল ইসলামের গুদাম থেকে এ আম জব্দ করা হয়।

তবে ওই সময়ে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবর পেয়ে আজিজুল ইসলাম সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজাহার আলী বলেন, বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে অপরিপক্ক কাঁচা আম পাকিয়ে তা বাজারজাত করা হবে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার সকালে উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা বাজারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় আজিজুল ইসলামের গুদাম থেকে ৪শ কেজি আম জব্দ করা হয়।

তিনি জানান, বালিয়াডাঙ্গা বাজারের আজিজুল ইসলামসহ আরো অসাধু ব্যবসায়ী প্রতি বছর অপরিপক্ক কাঁচা আম কেমিক্যাল দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিসহ সবার সামনে জব্দ করা আমগুলো গাড়ির চাকায় পিষ্ট করে বিনষ্ট করা হয়।

 

 

;

তীব্র গরমের সঙ্গে থাকছে অস্বস্তিভাবও



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ মানুষ। এমন অবস্থায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শনিবার (২৭ এপ্রিল) দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। তবে অপরিবর্তিত থাকবে রাতের তাপমাত্রা।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।

বজলুর রহমান জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলাসমূহের ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং টাঙ্গাইল, বগুড়া, বাগেরহাট, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলাসমূহের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

;

ডিএমপির ১০ থানায় কিশোর গ্যাং বেশি: ডিএমপি কমিশনার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, ঢাকার ৫০টি থানা এলাকার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ লক্ষ্য করা যায়।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি'র আয়োজনে 'কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে 'ছায়া সংসদ' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

তিনি বলেন, আজকের কিশোর আগামীদিনের যুবক। তারাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সী কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি 'কিশোর গ্যাং'।

আজকের কিশোর, তরুণরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এজন্য তাদেরকে নিয়ে 'কিশোর গ্যাং' শব্দ বলতে চাই না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, কিশোর গ্যাং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম করে থাকে পুলিশ। মসজিদে মসজিদে জুমার দিনে ওসিরা কিশোর গ্যাং বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হয়েছে। স্কুলে-স্কুলে গিয়েও পুলিশ সদস্যরা কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে আসল কাজ হবে পরিবার থেকে। পরিবার থেকে মা, বাবা বড় ভাই-বোন এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক।

মোবাইলের দুটি দিক উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, একটি নেতিবাচক অন্যটি ইতিবাচক। একটি মোবাইল একটি লাইব্রেরি, একটি জ্ঞান ভাণ্ডার। মোবাইলের পজিটিভ দিক শিক্ষার্থীরা যেন ব্যবহার করে সেই শিক্ষাটা অভিভাবকদের দিতে হবে।

খেলাধুলার জায়গার কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে খেলার মাঠের সংখ্যা কম। মাঠ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খেলাধুলার মাঠের বিষয়ে কাজ করতে পারে।

কিশোর গ্যাংয়ের গড ফাদারদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যারা কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা যারা রয়েছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অদ্ভুত অদ্ভুত নাম রয়েছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। যারা মদদদাতা বা গড ফাদার তারা ওইভাবে গড ফাদার নয়। তারা যে কিশোর অপরাধের জন্য গ্যাং তৈরি করেছে বিষয়টি এমন নয়। রাজনৈতিকভাবে কিছু লোক কিশোরদের নিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

টিকটকে অশ্লীল কন্টেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই নেতিবাচক। ইতিমধ্যে এমন টিকটকারদের আমাদের সাইবার টিম আইনের আওতায় এনেছে। পুলিশের সাইবার টিম বিটিআরসির কাছে বিভিন্ন কনটেন্টের তালিকা দেওয়া হয় নিয়মিত।

কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি আছে কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি নেই। অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে মামলা গ্রহণ করা হয় এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে কিশোর সংশোধানারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ পুলিশের কাজ নয়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় জনসাধারণের কাজ। জনগণ সোচ্ছার হলে কিশোর গ্যাং কালচার কমে যাবে।

কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত কাউন্সিলদের নাম পত্রিকায় এসেছে। এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, কাউন্সিলদের কিছু অনুসারী রয়েছে যাদের ১৮ বছরের উপরে বয়স। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে। সরাসরি কোনো কাউন্সিল কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছে এমন তথ্য আমরা পাইনি ।

কাউন্সিলদের সহযোগী রয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন তারা কিশোরদের নিয়ে চলাচল করেন। এসব কিশোরদের বেশিরভাগই ছিন্নমূল, যারা রাস্তায় কাজ করেন। বেশিরভাগ কিশোরদের বাবা নেই। মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে আইনের আওতায় পড়লে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক উপনেতা-পাতিনেতাদের বিভিন্ন সময় থানায় ডেকে শাসানোও হচ্ছে।

সমাজে ভদ্রলোকের সংখ্যা অনেক বেশি জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। ভদ্রলোক মনে করেন থানায় অভিযোগ দিতে গেলে বিপদে পড়বেন এজন্য সেই ভয়ে তিনি থানায় যান না। এটি সমাজের সবচেয়ে দুর্বলতা এবং নেতিবাচক দিক। যারা সমাজের ভালো মানুষ, শান্তিপ্রিয় মানুষ, তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হন তবে অনেক কঠিন কাজই সহজ হয়ে যায়। আমি সেটির আহ্বান জানাই। সমাজে ভালো মানুষ যারা তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতরা বেশিরভাগই নষ্ট রাজনীতির শিকার। অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা ও 'বড় ভাই'রা শিশু-কিশোরদের তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থে অর্থের বিনিময়ে অপরাধ করাচ্ছে। জমিজমা, ঘরবাড়ি দখল করাচ্ছে। আবার পুলিশ আটক করলে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনছে, প্রয়োজনে জামিনের ব্যবস্থাও করছে। ফলে এসব শিশু কিশোররা কিশোর গ্যাং কালচারে সম্পৃক্ত হয়ে বড় ভাইদের পক্ষে ভাড়ায় খাটছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সর্বস্তরে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ভয়েস রেইস করতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যের মদদদাতাদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জি এম তসলিম, সাংবাদিক জিয়া খান, সাংবাদিক অনিমেষ কর ও সাংবাদিক কাওসার সোহেলী।

;