দিনে ৫০০ লিটার ‘শরবতে মহব্বত’ বিক্রি করেন লাল মিয়া

  • সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ কসেপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রেতাদের হাতে শরবত তুলে দিয়ে টাকা নিচ্ছেন লাল মিয়া।

ক্রেতাদের হাতে শরবত তুলে দিয়ে টাকা নিচ্ছেন লাল মিয়া।

বরফ, গরুর দুধ, চিনি, তরমুজ, রুহ আফজা, তার সঙ্গে কয়েক ধরনের বাদামের গুঁড়া। সবকিছু বরফ পানিতে গুলিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে গেল শরবত। বিশেষ এই শরবতের নাম দিয়েছেন ‘শরবতে মহব্বত’।

পাশের দেশ ভারতে বহু আগে থেকে পরিচিতি রয়েছে এই শরবতের। খেতে দারুণ স্বাধের এই শবরত বানিয়ে ১৬ বছর ধরে বিক্রি করছেন চট্টগ্রামের লাল মিয়া নামের এক ব্যক্তি। পুরো বছরজুড়ে লাল মিয়া শরবত বিক্রি করলেও রমজানে এর চাহিদা বেড়ে যায়। দিনভর রোজা রেখে তৃপ্তি মেটাতে এখানে ছুটে আসেন তরুণ থেকে বৃদ্ধরা। এই শরবতের এমনই চাহিদা, প্রতিদিন বিক্রি হয় অন্তত ৫০০ লিটার।

বিজ্ঞাপন
ইফতারের আগ মুহূর্তে শরবতের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। ছবি: বার্তা২৪.কম

লাল মিয়া দুই ধরনের শরবত বানান। তোকমা, রুহ আফজা, দুধ, চিনি, ফল দিয়ে তৈরি করা হয় এক ধরনের শরবত। যার লিটার প্রতি ১৪০ টাকা। গ্লাসে করে খাওয়ারও সুযোগ আছে। সেজন্য প্রতি গ্লাসের পেছনে ক্রেতাদের গুণতে হয় ৩০ টাকা। আবার কাজু-পেস্তাসহ কয়েক ধরনের বাদামের সঙ্গে মধু ও দুধ মিশিয়ে তৈরি করা হয় আরেকটি বিশেষ শরবত। এটির প্রতি লিটার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি গ্লাসের দাম রাখা হচ্ছে ৪০ টাকা।

বছরের অন্যান্য সময়ে বিকেল ৩টা থেকে শুরু করে এই শরবত বিক্রি চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে রোজায় বিক্রি হয় রাত ২টা পর্যন্ত। রোজায় ইফতারে আগে এই শরবতের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন ক্রেতারা। দূর দূরান্ত থেকে এসে নিয়ে যায় অনেকে। একইভাবে ইফতারের পরও শরবত খেতে ছুটে আসেন অনেকেই।

বিজ্ঞাপন
সারি সারি বোতলে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে 'শরবতে মহব্বত'। ছবি: বার্তা২৪.কম

বড় কোনো দোকান কিংবা সুপার শপে নয়। বিশেষ এই শরবত বিক্রি করা হয় শহরের লাভ লেন মসজিদের সামনের রাস্তার এক কোণায়। মূলত লাল মিয়ার শরবত বিক্রির পেশা বংশ পরম্পরা থেকে। তার দাদা ভারতের বিহারে থাকাকালীন তৈরির প্রক্রিয়া শিখেছেন। সেই থেকেই বাবার হাত ধরে রপ্ত করেছেন শরবত বানানো ও বিক্রির প্রক্রিয়া। এখন লাল মিয়া থেকে সেই শরবত বানানোর প্রক্রিয়া শিখে নিচ্ছেন ছেলে ইয়াছিন। বাবা-ছেলে কয়েকজন কর্মচারীর সহযোগিতায় বিক্রি করে আসছেন এই শরবত।


জানতে চাইলে শরবতে মহব্বত কীভাবে এল সেটি জানালেন লাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘এক সময় বাবা এই শরবত বানিয়ে বিক্রি করেছিলেন। তার কাছ থেকে শিখে আমি বিক্রি করতেছি। আর আমার বাবা শিখেছিলেন দাদা থেকে। ভারতের কোচবিহারে আমার দাদার জিরা খেত ছিল। আমার দাদাই ওখান থেকে শিখেছিলেন। পরে যখন ভারত পাকিস্তান ভাগ হয়, তখন তারা বাংলাদেশে চলে আসেন। আমার দাদা থেকে এই শরবত বানানো শিখেন আমার বাবা। তিনি গাজীপুরে এই শরবত বিক্রি করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পরও আমি বংশ পরম্পরায় এটি ধরে রেখেছি। এখন আমি বিক্রি করছি। আমার ছেলেও শিখেছে আমার থেকে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে সেও এটিকে পেশা হিসেবে নেবে।’

এই শরবতের জন্য শহর এবং শহরের বাইরে থেকেও অনেকে ছুটে আসেন। এমনই একজন অক্সিজেন থেকে আসা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে এই শবরত খাই। বাসার জন্যও নিয়ে যায়। রোজায় ইফতারের খাওয়ার জন্য এখান থেকে প্রায় শবরত নিয়ে যায়। রোজা ছাড়াও বিকেলে এখানে প্রায় শরবত খেতে আসা হয়। লাল মিয়া ভাইয়ের শরবতে আলাদ স্বাদ, খাওয়ার পর মুখে লেগে থাকে।‘