প্রতীকে ‘না’ আওয়ামী লীগের, উপজেলায় প্রার্থী সমর্থনের দাবি এমপিদের

  • রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়েছে দুই ধাপের নির্বাচনী তফসিল। আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে প্রতীক না দিলেও নির্দিষ্ট প্রার্থীদের সমর্থনের কথা কেন্দ্রকে জানাচ্ছেন স্থানীয় নেতাকর্মীসহ এমপিরা।

গত শনি ও রোববার গুলিস্তানের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রংপুর বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাকর্মীদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতবিনিময় সভায় এ প্রস্তাব রাখেন তারা।

বিজ্ঞাপন

আগামী ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চারটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদের এই নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে দুই ধাপে মোট ৩১৩টি উপজেলার জন্য তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলার নির্বাচন হবে ৮ মে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলায় নির্বাচন হবে ২১ মে। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপে নির্বাচন হবে ২৯ মে ও ৫ জুন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে গত শনিবার ও রোববার রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি উন্মুক্ত পরিবেশে সবাই সবার পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার কথা জানালেও উপস্থিত নেতাকর্মীরা সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রতীক না দিলেও দল থেকে যেন একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হয় সে দাবি জানান।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৩০ মার্চ) রংপুর বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি এমপি, আমি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করব, আমার একজন থাকবে তাকে জেতানোর জন্য গোটা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করব, এটা হতে পারবে না। যে উদ্দেশ্যে এই নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যটা কোনো অবস্থাতেই ব্যাহত করা যাবে না।

সভার শুরুতে দলটির সাধারণ সম্পাদকের এমন মনোভাবের বিপরীতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া না হলেও যেন একজনকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয় এমন প্রস্তাব রাখেন দলটির সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা। এর পরের দিন রোববার হওয়া চট্টগ্রাম বিভাগের বৈঠকেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই মত পোষণ করেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। বৈঠকগুলোতে তৃণমূল নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি একক প্রার্থী দেওয়া না হয়, তাহলে তৃণমূলে বিভেদ বাড়বে। আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়ে যাবে, ফলে সুবিধা নিতে পারে জামায়াতসহ অন্যান্য দল।

'উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সবাই মাথা ঘামাবে' মন্তব্য করে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সালাম বলেন, বলা হচ্ছে এমপি-মন্ত্রী বা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপজেলা নির্বাচনে মাথা ঘামাবেন না। মাথা ঘামানোটা দৃশ্যমান না, দেখা যায় না। সবাই মাথা ঘামাবে। সেটা থাকুক। আগেও উপজেলা নির্বাচন হতো দলীয় প্রতীক ছাড়া, কিন্তু সেখানে দল একজনকে সমর্থন করত। তাহলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা থাকে। এখন যদি একটা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে পাঁচ-সাতজন দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে এমপি একজনকে সমর্থন করবেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা আলাদা-আলাদাভাবে সমর্থন করবেন। এতে সংগঠন আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

উপজেলা পরিষদের নির্বাচন প্রতীকবিহীন হবে এবং সুষ্ঠু হবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করব না, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে; এটা আমরা চাই, মানুষ চায়। গণমানুষের দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য প্রতীক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। জনপ্রিয় যে সে নির্বাচিত হয়ে আসবে। জনপ্রিয়তা যাচাই হোক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক, সুন্দর নির্বাচন হোক আমরা চাই।

যারা নির্বাচিত হবেন তাদের আমরা অভিনন্দন জানাব উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি কোন একজন ভাল লোককে ভোট দিতে চায়, তারা যদি ভোট দেওয়ার জন্য সহমত পোষণ করে, তাহলে এখানে কোন বাধা নেই। কিন্তু আমি আমার ভাইকে-ছেলেকে বানানোর জন্য অথবা এমপি তার ছেলে, শ্যালক, সম্বন্ধী, ভগ্নীপতিকে বানানোর জন্য যে স্বজনপ্রীতি করে প্রভাব বিস্তার করবে এটা আমরা করতে দিতে চাই না। দলের ভেতরে অনৈক্য সৃষ্টির জন্য কেউ যদি কিছু করতে চায় আমরা সেটা করতে দেব না।

প্রতীক ছাড়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বার্তা২৪.কমকে বলেন, এতে বিভক্তি সৃষ্টি হবে না। যে জনপ্রিয় সে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবে। এই উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারে যারা দৌড়াদৌড়ি করতেছে, পকেটের লোক বানাইয়া (চেয়ারম্যান) কেউ যদি নিজের দখলদারিত্ব কায়েম করতে চায় সে ব্যর্থ হবে। তার ব্যর্থতার মধ্য দিয়েই নির্বাচনের সফলতা কায়েম হবে।