‘চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ যদি মনে করে সীমান্ত থেকে এসে চট্টগ্রামের এক ইঞ্চি মাটিতে হাত দেবে, তাদের কারও চোখ ও হাত থাকবে না’ এমন মন্তব্য করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ‘চট্টগ্রামের উন্নয়নে এবি পার্টির পাঁচ প্রস্তাব’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ এবং আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কোনো আপোস হবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় যদি উলটাতে হয়, আমরা উলটাবো। কিন্তু স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপোস মেনে নেওয়া হবে না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে অনেক কিছুই অমীমাংসিত উল্লেখ করে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, আমাদের স্বাধীনতার প্রশ্নে অনেক কিছুই মীমাংসিত না। আমাদের ৫৩ বছর ধরে বলা হয়েছে অনেক কিছুই মীমাংসিত। না, অনেক কিছুই মীমাংসিত না। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে প্রত্যেক জেনারেশনকে তার মতো করে বুঝতে হয়। তার মতো করে বুঝে নিতে হয় কে আমার শত্রু, কে আমার মিত্র।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে ফুয়াদ বলেন, প্রত্যেকবার ১৬ ডিসেম্বর আসলে আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়, আমি (ভারত) তোমার দেশ স্বাধীন করে দিয়েছি। এটা আমার আত্মমর্যাদার সঙ্গে যায় না। আমিও লড়াই করেছি। আমার হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। আপনি আমাকে সাহায্য করেছেন সেজন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। ভারতের সেসব অফিসারদের বাংলাদেশ রাষ্ট্র পুরষ্কার দিয়েছে, স্বীকৃতও দিয়েছে। কতদিন ধরে ঋণ শোধ করলে, আমার ঋণ শোধ হবে। কতবার বললে পরে আমার কৃতজ্ঞতা শোধ হবে।
রাষ্ট্র উন্নয়নের মডেল একটা লুটপাটের মডেল দিয়ে তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের যে বিশাল ফ্লাইওভার (এলিভেটডের এক্সপ্রেসওয়ে)। এটার ওপর দিয়ে আসার সময় একটা এক্সিট দেখলাম না। এত বড় ফ্লাইওভারে মিনিমাম ১০টা এক্সিট দেওয়ার কথা ছিল। চট্টগ্রামের লোকেরা বলে একজন ব্যক্তির জন্য টানেল করা হয়েছে যেন সে বাড়ি থেকে এয়ারপোর্টে যেতে পারে। আরেকজন ব্যক্তির জন্য ফ্লাইওভার করা হয়েছে তার বাসা থেকে যেন এয়ারপোর্টে যেত পারে। একটা রাষ্ট্র তার উন্নয়নের মডেল তৈরি করেছে একটা লুটপাটের মডেল দিয়ে। তাহলে কিভাবে এটা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের সাথে যায়? কারণ কথা ছিল রিপাবলিক করার। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা টাকা-পয়সা যে আপনি খরচ করবেন এটা মানুষের জন্য হতে হবে।
সিডিএ’র প্ল্যান কোথায়- প্রশ্ন রেখে এবি পার্টির এ নেতা বলেন, সিডিএ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে দেখি। চট্টগ্রামে বন্যা তো দেখিনি। সেই চট্টগ্রামে এখন প্রতিবছর অসম্ভব রকমের ঘাপলা মারা বন্যা হয়। এমনকি আপনাদের সাবেক মেয়রের বাসার নিচতলা নাকি ডুবে গেছে। তাহলে আপনি কি প্ল্যান করলেন? বন্যা হচ্ছে কেন? আপনাদের এখানে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুধুমাত্র দিন-তারিখ কারেকশন করতে গিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। এসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে এই টাকাগুলো খেয়ে ফেলেছে। তাহলে সিডিএ’র প্ল্যান কোথায়? এখানে তো উন্নয়ন নয়, শুধু ভোগান্তি দেখতে পাচ্ছি। কারণ আমি যে রিপাবলিক মডেলের রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলাম এটার সাথে যায় না। যে উন্নয়ন প্রকল্প করলে মাসের পর মাস মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকে সেই প্রকল্পে কোনো ইনসাফ নাই।
চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র করলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, সীমান্ত থেকে এসে যারা চট্টগ্রামের এক ইঞ্চি মাটিতে হাত দেবে তাদের কারো চোখ থাকবে না, হাতও থাকবে না। জুলাই-আগস্টের পরিবর্তনের পরে এই কলকাতা নিয়ে যাওয়া, চিকেন নেকের গল্প মনে করিয়ে দেওয়া, ফেনী নদীর ওপারে কেটে চট্টগ্রাম আলাদা করে নিয়ে যাবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ঝামেলা চলছে...। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অংশ যেকোনো মূল্যে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আত্মমর্যাদা এবং জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে কোনো কম্প্রোমাইজ হবে না। সেজন্য দেশের প্রত্যেকটা পরতে পরতে যদি রিভাইজ করতে হয় আমরা করবো।
দেশে নতুন জেনারেশনের রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ধর্ম এবং মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সম্মান এবং মর্যাদার বিষয়। এটাকে আমরা বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখবো। আমাদের রাজনীতির ভিত্তি হবে নাগরিক অধিকার। আমরা রাষ্ট্রটিকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই। প্রথম রিপাবলিকের আকাঙ্খা ব্যর্থ হয়েছে। যে মিথ্যা সাবকবলা দলিল করে আমার রাষ্ট্রটাকে ফ্যাসিবাদে তার নিজের নামে কিনে-বেচে দিয়েছে; সেই জায়গাতে আমরা বোধ করছি একটা নতুন জেনারেশন পলিটিক্স দরকার। যে কারণে জুলাই অভ্যুত্থানের নায়করা দ্বিতীয় রিপাবলিকের কথা বলছে। এবি পার্টির রাজনীতি হচ্ছে সেবা ও সমস্যা সমাধানের রাজনীতি। যেটা আমরা ইউরোপে দেখে এসেছি।
দেশে রিপাবলিক বন্দোবস্ত করা হয়নি জানিয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ডেঙ্গু মশায় প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। কেন রাষ্ট্র সিম্পল ডেঙ্গু মশা ডিল করতে পারছে না? এটা নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোতে বিতর্ক হওয়া দরকার। এটা কিভাবে রোধ করা দরকার তার কোনো আলোচনা এখানে নেই। টানেল করতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। টানেলের প্রতিদিনের পরিচালন ব্যয় প্রায় ৩৭ লাখ টাকা। আয় হয় ১০ লাখ টাকারও কম। আমি যে পরিমাণ গাড়ি দেখলাম, আপনি সারাদিন টোল তুললেও লাখ টাকা ক্রস করার সুযোগ নেই। তাহলে আপনি একটা প্রজেক্ট করেছেন রাষ্ট্রের টাকা দিয়ে এটা কি বেনিফিট দিচ্ছে? ব্রিটেনে থাকার সময় একটা বাগান করলেও স্থানীয় প্রশাসনকে বলতে হয় এটা করলে কত টাকা ট্যাক্স পাবে, কতজন লোকের চাকরির ব্যবস্থা হবে। অতএব আপনার একটা পরিবেশগত, রাজস্ব, কমিউনিটি এবং রাজনৈতিক এসেসমেন্ট থাকবে। সেটার বন্দবস্ত নেই।
উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে নাগরিকরা জড়িত করার দাবি জানিয়ে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, আমার রাষ্ট্রটা যে একটা রাজবংশে পরিণত হয়েছে, কিছু ব্যক্তি, কিছু পরিবারের লীলা খেলায় পরিণত হয়েছে; এই রাষ্ট্রের বদলা চাই আমরা। একটা বন্দোবস্ত চাই আমরা। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের এসেসমেন্ট হতে হবে। কোনো প্রকল্পে নাগরিকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দেশের বাইরে ফায়ার সার্ভিসের অফিস বন্ধ করতেও প্রস্তাবনার ব্যাপারে টাউনহল মিটিং হয়। বাংলাদেশের টোটাল উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে নাগরিকরা জড়িত নয়। মানুষ এবং নাগরিক অধিকার এই প্রত্যেকটা কাজের কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে। এটাই নতুন প্রজন্মের রাজনীতি।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম নগরের আহ্বায়ক অ্যাডোভোকেট গোলাম ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক ছিদ্দিকুর রহমান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ আবুল কাশেম, অর্থ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম প্রমুখ।