অপদ্রব্য পুশকৃত ৬৬০ কেজি বাগদা চিংড়ি জব্দ, ব্যবসায়ীকে জরিমানা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে পৃথক তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়ে চিংড়ি মাছে অপদ্রব্য পুশ করার সময় ৬৬০ কেজি বাগদা চিংড়ি জব্দ করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় এক ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার জরিমানা করা হয়।

শনিবার (১১ মে) উপজেলার চাপড়া গ্রামে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এ দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। জব্দকৃত চিংড়িগুলো পরে আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. পলাশ আহমেদ জানান, আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চাপড়া গ্রামের তিনটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় দক্ষিণ চাপড়া গ্রামের ইশার আলী গাজীর ছেলে আব্দুল মালেকের বাড়ির বেডরুম থেকে সরঞ্জামাদিসহ জেলি পুশকৃত ১০০ কেজি চিংড়ি জব্দ করা হয়। এ অপরাধে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের জেল প্রদান করা হয়। এরপর একই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন সরদারের ছেলে মোহাম্মদ আলী সরদারের দোতলা বিল্ডিং এর নীচতলার তালাবদ্ধ বেডরুমের ভিতর থেকে ৫০০ কেজি জেলি পুশকৃত বাগদা চিংড়ি, সিরিঞ্জ ও জেলি জব্দ করা হয়। এছাড়া মৃত আফিল উদ্দিন সরদারের ছেলে আলতাফ হোসেন সরদারের বাড়ি থেকে ৬০ কেজি অপদ্রব্য পুশকৃত বাগদা চিংড়ি ও পুশিং সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়। জব্দকৃত চিংড়িগুলো পরে উপজেলা পরিষদ চত্বর মাঠে আগুনে পুড়িয়ে মাটি চাপা দেয়া হয়।

তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে আশাশুনি থানায় মামলা রুজুর বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সত্যজিৎ মজুমদার, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, পুলিশের এসআই আব্বাস আলীসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

   

'ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে না পারলে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করা কঠিন'



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন (বাপসা) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিস্ট এনভায়রনমেন্ট ফোরামের (সিইউবিএফ) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো
সেমিনার। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সুলতান আহমেদ হলে 'করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা, অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যার প্রফেসর ড. শেখ বখতেয়ার উদ্দিন।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি ও আইএইচআরসি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট এম এ হাশেম রাজু বলেন, রাসায়নিক ও কীটনাশক অত্যধিক ব্যবহারের কারণে আজকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বিষাক্ততায় পরিপূর্ণ। বাংলাদেশের জনশক্তি এদেশের সম্পদ। কিন্তু এক শ্রেণির কালোবাজারি, চোরাকারবারি লুটেরা গোষ্টীর খাদ্য দূষণের মাধ্যমে জনশক্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের চারপাশের মাটি, পানি, বায়ু ও প্রাকৃতিক শক্তির উৎসগুলোকে করছে বিষাক্ত।

সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিস্ট এনভায়রনমেন্ট ফোরামের সভাপতি বাপসার মহাসচিব পরিবেশবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম এ গফুর। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, কর্ণফুলী নদী গবেষক, রসায়নবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মো. ইদ্রিস আলী।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পরিবেশ বাদী ও গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর আসে যায়, কিন্তু পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারকে আজ পর্যন্ত কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে দেখিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে অধিকাংশ নদী-নালা, জলাশয়, পাহাড় দখলে দূষণে বিপর্যস্ত। মুঘল আমলে অক্সিজেনের আধার হিসেবে যেসব পাহাড়, মাটি, বন জঙ্গল, নদ-নদী ছিল তা আজ ভূমিদস্যু ও মাফিয়াদের দখলে আক্রান্ত। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্মসহ আমাদের অস্তিত্ব অচিরেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে অবতীর্ণ হবে। আজ পৃথিবীর জলবায়ু, বায়ু দূষণ, জীব বৈচিত্র্য, পশু পাখি প্রভৃতি রক্ষায় পৃথিবী জুড়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে না পারলে ভবিষ্যতে পরিবেশ এবং প্রতিবেশ রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলমত নির্বিশেষে ভূমি পুনরুদ্ধার, মরুকরণ এবং খরা পরিস্থিতি সহ সকল ধরনের দূষণ রুখবার এখনই সময়।

বাপসার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণফুলী নদী গবেষক প্রফেসর ড. মো. ইদ্রিস আলী বলেন, 'দূষণের কোনো সীমারেখা নাই। এক জায়গা কোনোকিছু দূষিত হলে তা অন্য জায়গায় প্রভাব পড়তে পারে। শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণের কারণে মায়ের গর্ভের অনাগত শিশুটিও জটিল অনিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি মারনরোগ ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন যদি আমরা নিজেরা দেশ ও জাতি সচেতন না হই, তাহলে আগামী প্রজন্মের নিকট আমাদের জবাবদিহিতা করতে হবে। কোন দেশে আমরা বসবাস করছি যেখানে আইন আছে, সংবিধান আছে- কিন্তু প্রয়োগ নেই। এজন্যই কি দেশ স্বাধীন করেছিলাম?

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বোটানিস্ট এনভায়রনমেন্ট ফোরামের সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের মহাসচিব পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম. এ গফুর বলেন, আজ দেশের ১৮ কোটি মানুষকে একটি সবুজ ছাতার নিচে নিয়ে এসে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জরুরি ভিত্তিতে একজনে ২টি করে গাছ লাগিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রকে সবুজায়ন করতে পারলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।

সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন পরিবেশবাদী শারুদ নিজাম, ফরিদ উদ্দিন, পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর সুচারু বিকাশ বড়ুয়া, প্রফেসর আজিজুল হক, পরিবেশবিদ প্রফেসর হামিদুল হোসেন সিদ্দিকী, জালাল উদ্দিন আকবর, প্রফেসর শাহী আলম, মিসেস মাহবুবা চৌধুরী, হোমসিকা দত্ত, প্রফেসর ড. পার্থপ্রতীম ধর, প্রফেসর ড. মহিউদ্দিন, প্রফেসর প্রদীপ বড়ুয়া, আবু তৈয়ব, সাধন কুমার দত্ত, মো. সাইফুল করিম, সাফায়েত উল্লাহ, বাপসার কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু, যুগ্ম মহাসচিব জসিম উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন ভূঁইয়া, দপ্তর সম্পাদক মো. মইনউদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহসভাপতি এস এম কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসাইন, সদস্য তাহেরা আক্তার শারমিন, তারিক চৌধুরী, তৌহিদুল করিম, ইঞ্জিনিয়ার আবু তৈয়ব, চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মো. জানে আলম, পরিবেশ সংগঠক ফৌজুল কবির ফজলু, সদস্য ফারহানা আফরোজ খানম, জহির উদ্দিন, শহীদুল ইসলাম শহীদ, মনোয়ার হোসেন, লোকমান হাকিম, মো. আরশে আজিম আরিফ প্রমুখ।

;

রাজশাহীতে ঝড়ে গাছ পড়ে ২ জনের মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজশাহীর বাঘায় ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও নয় জন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে বাঘা উপজেলার রাজার মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন, মো. জালাল উদ্দিন (৪০) ও জাকির হোসেন (৩৫)। তাদের বাড়ি বাঘা উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামে। তবে আহতদের পরিচয় জানা যায়নি।

এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বাঘা উপজেলায় আজ রাতে ঝড় হয়। এতে রাজার মোড় এলাকায় একটি পুরোনো বড় গাছ উপড়ে পড়ে। এতে দুজনের মৃত্যু হয়। কয়েকজন গাছের নিচে চাপা পড়লেও পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয়রা উদ্ধার কাজে যোগ দেন।

;

১ দশক পর পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রাত পোহালেই বুধবার (৫ জুন) ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৪র্থ ধাপে ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা ছাগলনাইয়া উপজেলার পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১৩৩ দশমিক ৪৯ বর্গমাইলের এ উপজেলায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ করা হবে।দুটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সকলেই নতুন প্রার্থী হওয়ায় দীর্ঘ ১ দশক পর পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ।

এবারের নির্বাচনে উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ে নতুন কাউকেই বেছে নিতে হবে ভোটারদের।কারন এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থীর সকলেই নতুন মুখ। বিগত ১০ বছর যাবত এ উপজেলার রাজনীতিতে একক আধিপত্য ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের।

এবার তিনি নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিগত ১০ বছর যাবত উপজেলা পরিষদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তবে এরমধ্যে উচ্চ আদালতের রায় দেন বিগত ৫ বছর যাবত অবৈধ চেয়ারম্যান ছিলেন সোহেল চৌধুরী। সাধারণ মানুষ বলছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় ছাগলনাইয়া উপজেলার রাজনীতি ও ১০ বছর জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন হতে যাচ্ছে।

১০ বছর পর নতুন কাউকে বেছে নেয়ার সুযোগ আসাতে ছাগলনাইয়া উপজেলার সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছে তাদের ভাবনা। তারা বলছেন, নতুন জনপ্রতিনিধি আসলে এলাকার পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ থাকে। উন্নয়ন কাজগুলো বাস্তবায়িত হয়।

ছাগলনাইয়া উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের বাসিন্দা অহিদুন নবী বলেন, বিগত ১০ বছরে উপজেলা চেয়ারম্যান কোনদিন খোঁজ নিতেও আসেনি। কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসলেও এলাকার সাধারণ মানুষদের সাথে তার জনসম্পৃক্ততা ছিল কম। ফলে সরকার নানামুখী উন্নয়ন করলেও এখনও অনেক কিছু অনুন্নত রয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন নতুন কাউকে নির্বাচিত করার সুযোগ এসেছে। পরিবর্তন হলে ভালো হবে।

উপজেলার আরেকজন বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, জনপ্রতিনিধি জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ না রাখলে সে এলাকায় উন্নয়ন সাধিত হয়না। এলাকার মানুষ এমন মানুষকে দেখতে চায় যারা জনগণের রাজনীতি করবে। সুখে দুখে পাশে থাকবে। বিগত ১০ বছর যাবত সে সুযোগ থেকে ছাগলনাইয়াবাসী বঞ্চিত ছিল, এখন তারা নতুন কাউকে মসনদে বসানোর সুযোগ পেয়েছে, এবার হইত ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

নতুনপ্রার্থীদের ভোটদিতে মুখিয়ে আছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ। ভোট উৎসবমুখর হবে উল্লেখ করে ফয়সাল মাহমুদ নামে একজন বলেন, ছাগলনাইয়াবাসী ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটদিতে মুখিয়ে আছে। অন্যান্য উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও ছাগলনাইয়া মানুষ যেহেতু পরিবর্তনের পক্ষে সেক্ষেত্রে মানুষ উল্লেখযোগ্য হারে ভোটকেন্দ্রে যাবে।

ছাগলনাইয়াতে পরিবর্তনের পক্ষে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতারা৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা বলেন, এতদিন অনেকে ভয়ে মুখ খুলেনি। এখন সকলে পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করছে। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণায় লক্ষ্য করা গেছে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতা মাঠে সরব ছিলেন। তাও চেয়েছেন ছাগলনাইয়াতে পরিবর্তন আসুক।

ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিতে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান মজুমদার জানান, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে মুখিয়ে আছে।মানুষ পরিবর্তন চায়। আমরা ভোটারদের কাছে গিয়েছি, আগেও তাদের পাশে ছিলাম আগামীতেও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি। জাতীয় নির্বাচনেয় ন্যায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বার্তা২৪ ডটকমকে জানান, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উপজেলার ৫৪ টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ১৬ টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়েছে। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাবাবিক রাখতে র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি আনসার সদস্যদের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে। এরমধ্যে ৩ প্লাটুন বিজিবি, ১ প্লাটুন ব্যাটেলিয়ন আনসার, পুলিশের ১১ টি মোবাইল টিম কাজ করবে।

উল্লেখ্য, ছাগলনাইয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ছাগলনাইয়া উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৭ হাজার ৬৪৯ জন এবং নারী ভোটার ৮১ হাজার ৩৫১ জন। এ উপজেলায় ৩য় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ১ জন। উপজেলার ৫ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার ৫৪ টি ভোটকেন্দ্রের ৪২৫ টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

;

যে ছেলের জন্য মৃত্যুযন্ত্রণা সইতে হয়েছিল সেই মাকে ‘উপহার’ দিল ৪৬ কোপ



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২৩ বছর আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মো. ওমর ফারুককে জন্ম দিয়েছিলেন রিনা আক্তার চন্দনা। ছেলেকে জন্মদানের আগে-পরে এই নারীকে সইতে হয়েছিল মৃত্যুযন্ত্রণা। অস্ত্রোপচারের সেলাইয়ে সংক্রমণ হওয়ায় দেড়মাস হাসপাতালের বিছানায় থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেই যাত্রায় বেঁচে ফিরলেও আর কোনোদিন মা হওয়া হয়নি তাঁর। কেননা ওই সময়ে নানা ওষুধ সেবনের কারণে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন এই গৃহবধূ। যে সন্তানকে জন্ম দিতে গিয়ে এত এত ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করেছিলেন সেই ছেলেটাই কিনা মাকে খুন করলেন অজস্র ব্যথা-কষ্ট ‘উপহার’ দিয়ে।

একটা-দুটা নয়, মা রিনা আক্তারের যে শরীরে একদিন একটু একটু করে বেড়ে ওঠেছিলেন সেই শরীরে দায়ের ৪৫টি কোপ বসিয়েছেন ফারুক। ঘটনাটি রোববার (২ জুন) দিবাগত রাত ১০টার। ওইদিন ওমর মাদক কেনার জন্য মায়ের কাছে টাকা চান। মা টাকা না দেওয়ায় ঘরে থাকা দা দিয়ে মায়ের শরীরে উপর্যুপরি আঘাত করে ওমর। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৪৭ বছরের ওই নারী। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে ওমরকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

নিজের মাকে কেউ এমনভাবে হত্যা করতে পারেন-প্রশ্ন তুলেছেন সবাই। তাঁরা বলছেন, এতটা নৃশংসও হতে পারে মানুষ? অবশ্য মাকে এভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়ার পরও কোনো অনুশোচনাই ছিল না ওমরের। সোমবার (৩ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) মর্গে পড়ে রিনা আক্তার চন্দনার শরীরে কোপের এত এত দাগ দেখে ডোমও যেখানে যখন আৎকে উঠছেন বারবার, পুলিশ হেফাজতে থাকা ওমর তখন ফুরফুরে মেজাজে খাচ্ছিলেন দুপুরের খাবার।

ছেলেকে জন্ম দিতে গিয়ে স্ত্রীকে কী যে যন্ত্রণা সইতে হয়েছিল সেটি তুলে ধরছিলেন আকতার হোসেন। সব হারিয়ে নিঃস্ব এই অটোরিকশা চালকের চোখের পর্দায় যেন বারবার ভেসে আসছিল সেই ভুলতে না পারা দৃশ্য, হাসপাতালকে বাড়ি বানিয়ে ফেলা, স্ত্রীর কত শত যন্ত্রণা-কষ্ট সব সব।

আকতার হোসেন বলেন, রিনা আক্তার আমার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। একমাত্র মেয়েকে রেখে প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আত্মীয়স্বজনেরা আমাকে বেশ চাপ দেন আবার বিয়ে করতে। কিন্তু মেয়ের দিকে তাকিয়ে আমি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিই। পরে সবার চাপে মেয়ে বড় হলেই বিয়ে করার ইচ্ছের কথা জানাই। প্রায় ২৫ বছর আগে রিনাকে বিয়ে করি। বিয়ের দুই বছরের মাথায় আমার মেয়েটি কুকুরের কামড়ে মারা যায়। কুকুর কামড়ালে আমরা না বুঝে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে কবিরাজের কাছে নিয়ে যাই। টিকা না দেওয়ায় জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মেয়েটি মারা গিয়েছিল। এরপর রিনার গর্ভে আমার ছেলে ওমরের জন্ম হয়।’

ওমরকে জন্ম দিতে গিয়ে রিনাকে অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করার সেই মুহূর্তুগুলো তুলে ধরেন আকতার। বলেন, ‘সংক্রমণ আর নানা ওষুধ সেবনের কারণে রিনা সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে পড়েন। সেজন্য আমরা দুজন এই ছেলেকে নিয়েই জীবন পার করতে চেয়েছিলাম। তাঁকে ঘিরেই আমাদের সব স্বপ্ন ছিল। কিন্তু এখন আমার সব শেষ। স্ত্রীকে হারালাম। এখন মাকে খুনের ঘটনায় ছেলে জেলে গেল। আমার আর কেউ রইল না।’

যদিওবা একমাত্র ছেলে ওমরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার কম চেষ্টা করেননি মা-বাবা। আকতার দিনভর গাড়ি চালালেও কখনো ছেলেকে কষ্ট করতে দেননি। করোনার আগে পাহাড়তলী রেলওয়ে স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন ওমর। এরপর ভাটিয়ারীর একটি কলেজে ছেলেকে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু কলেজে যাওয়ার কথা বলে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হলেও তিনি কলেজে যেতেন না। পড়ে যান ‘খারাপ’ বন্ধুদের চক্করে। ২০২১ সালের দিকে শুরু হলো নেশায় পড়া। টের পাওয়ার পর মা-বাবা বহু চেষ্টা করেছেন ফেরাতে। কিন্তু পারেননি। বাবা বাসায় না থাকলেই মাকে চাপ দিতেন মাদক কিনতে টাকা দিতে। টাকা না পেলেই মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করত ওমর। তবুও ছেলে একদিন ভালো হয়ে যাবে, নেশামুক্ত হবে-সেই আশায় সব সহ্য করে যাচ্ছিলেন মা-বাবা।

ঘটনার দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠলে মা-বাবা ওমর ফারুককে নানাভাবে বোঝান। বলেন, এভাবে জীবন চলে না বলেও সান্ত্বনা দেন। মা-বাবার সেই অনুরোধ কানেই নেননি ওমর। রাতে এসে পুনরায় মাকে টাকার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। টাকা দেবেন না বলতেই বটি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মায়ের ওপর।

মাকে খুন করার পর পালিয়ে যাচ্ছিল ওমর। ঘটনাচক্রে তখন খুলশীর পাঞ্জাবি লেনের পুলিশ বিট মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন আকতার। তখন দেখতে পান বটি হাতে এক তরুণ দৌড়াচ্ছে আর পেছন থেকে তাঁকে ধাওয়া দিচ্ছেন মানুষজন। কৌতুহল হয়ে গাড়ি থেকে নামতেই যেন আকাশ থেকে পড়েন আকতার। দেখতে পান যে প্রাণপণ দৌড়ছে সে তারই ছেলে ওমর। কাছে গিয়ে কি হয়েছে জানতে চাইতেই স্থানীয়রা বলেন মাকে খুন করে পালাচ্ছে ওমর। পরে আকতার দৌড়ে বাসায় গিয়ে দেখেন ঘরে পড়ে আছে স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত দেহ।

সেই দৃশ্য তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আকতার হোসেনকে। বললেন, ‘ছেলেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে কতই না চেষ্টা করলাম। পারলাম না। রিনা মা হিসেবে যেমন দুর্দান্ত ছিলেন, তেমনি স্ত্রী হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। এরকম মাকে কেউ খুনতে পারে?’

রিনার শরীরে ছেলের ৪৬ কোপ:

ছিন্নভিন্ন হওয়া মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় এত এত আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ সদস্যরাও হয়ে পড়েন বেদনাহত। রিনা আক্তারের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন পাহাড়তলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদন করতে গিয়ে গুণে দেখি এই মায়ের দেহে ৪৬টি কোপের চিহ্ন। এমন ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমরাই কাতর হয়ে পড়েছি। নিজের গর্ভধারিণী মাকে কেউ এত নৃশংসভাবে খুন করতে পারেন ? কোনো শত্রুকেও তো মানুষ এত কষ্ট দিয়ে মারতে পারেন না।’

চমেক হাসপাতালের মর্গে রিনা আক্তারের ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কাটার দায়িত্ব সামলেছেন ডোম কদম আলী। এই কদম আলীর ঝুলিতে বহু লাশ কাটার অভিজ্ঞতা। কয়েকশ লাশ কাটা সেই ডোমও রিনার শরীরে এত এত কোপ দেখে কষ্ট পেয়েছেন। বলেন, ‘এই নারীর দেহ এতটাই ক্ষতবিক্ষত ছিল তাঁর শরীরের দিকে তাকানোই যাচ্ছিল না। শুনেছি ছেলেই তাঁকে কুপিয়ে খুন করেছে। মাকে কেউ এভাবে কোপাতে পারে ভাবতেই পারছি না। খুনের উদ্দেশে যে কোপানো হয়েছে তা বোঝা যায় মায়ের মাথার দিকে তাকালে। মাথাতেই সবচেয়ে বেশি আঘাত করা হয়েছে।’

মাকে খুনের ঘটনায় বাবার করা মামলায় ওমর ফারুক এখন জেলে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমাম হোসেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘কারও মনে এমন নৃশংসতা একদিনে তৈরি হয় না। এই ছেলে মাকে খুন করার পর্যায়ে চলে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে সে নেশার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এটাকে আমরা বলি- ‘হলিস্টিক এপ্রোচ’। এই সময়ে মানুষ যখন নেশার জন্য যখন উদগ্রীব হয়ে পড়ে তখন কে মা, কে বাবা সেটি বুঝবে না। যেই তাঁকে বাধা দেবে তাঁকে মনে হবে শত্রু। তাঁদের হয় কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শাস্তি দিতে হবে, না হয় নিরাময়কেন্দ্রে নিয়ে সংশোধন করতে হবে।’

বাংলাদেশের প্রতিটি অলি-গলিতে মাদক ছড়িয়ে পড়েছে জানিয়ে ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মাদক যতদিন বন্ধ হবে না, ততদিন এগুলোও চলতে থাকে। মাদক বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে চরম বিপর্যয়ে পড়তে হতে পারে।’

সন্তানের হাতে স্ত্রী খুন। সেই খুনের ঘটনায় জেলে যাওয়া ছেলে শাস্তির অপেক্ষায়। ফলে আপন বলতে আর কেউ রইল না আকতার হোসেনের। চোখে জল আর মনে একরাশ হতাশা নিয়ে তাই আকতার বললেন, ‘মাদকাসক্ত ছেলে নিজেকে ডোবাল, আমার সবও শেষ করল। ছেলের ফাঁসি হোক। তবে আরও বেশি খুশি হতাম যদি ক্রসফায়ার দিতো।’

আকতার হোসেনের কণ্ঠে যেন একদিকে প্রিয় স্ত্রীকে হারানোর অবর্ণনীয় বেদনা, অন্যদিকে তারও অধিক প্রিয় ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করতে না পারার দুঃখ-আফসোস!

;