বাজেটে সুরক্ষার আশ্বাস ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি নেই: দেবপ্রিয়



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্ষমতা এবং যে রাজনীতির মাধ্যমে এই ক্ষমতা পরিচালিত হয় তার মধ্যে সমস্যা থাকায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের অনেক কিছুই পিছিয়ে পড়া মানুষের পক্ষে যায়নি বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, রাজস্ব প্রস্তাব, সংস্কারসহ সব কিছু সাধারণ মানুষের পক্ষে যাওয়ার কথা থাকলেও ক্ষমতা ও রাজনীতিতে সমস্যার কারণে সবকিছু বিশেষ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর পক্ষে চলে গেছে।

সোমবার (১০ জুন) সিপিডি ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ও বিরাজমান পরিস্থিতি: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্তি’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দেবপ্রিয় বলেন, পিছিয়ে পড়া মানুষদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে স্থিতিশীলতার নির্দেশনা, সুরক্ষার আশ্বাস এবং সংস্কারের কোন প্রতিশ্রুতি নেই।

বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনাসহ সরকারের নিজের প্রণয়ন করা বিভিন্ন নীতিমালার সঙ্গে এই বাজেটের বরাদ্দ ও আদর্শগত কোন মিল নেই বলে দাবি করেন দেবপ্রিয়।

বাজেট প্রণয়নে পেশাারিত্ব কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তথ্য উপাত্ত ও যুক্তি কৌশলের ব্যবহার কমেছে। এমনকি বাজেটের ভেতরে যে সমস্ত নীতি ও কৌশলের কথা বলা হয়েছে, এর সঙ্গেও বরাদ্দের মিল নেই বলে তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বড় ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রো ক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ কর ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নাই। আগামীতে কী করা হবে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনাও নাই।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ নগদ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ যেমন রাখা হয়েছে, গুলশান এলাকায় ফ্ল্যাট কিনে ২.৩৮ শতাংশ কর দিয়েও বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। বিনা প্রশ্নে অবৈধ টাকা বৈধ করার এই সুযোগ মেনে নেওয়া যায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বাজেটে অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের কথা বলা হয়েছে এর থেকে চমৎকার স্বপ্ন আর হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা বাস্তবায়নে কোনো দিক নির্দেশনা নেই।

দেশে অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ বাজেটে চিহ্নিত করা হয়নি উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে বের হয়ে যাওয়া হয়েছে।ব্যাংকিং সেক্টর, সুশাসন, বাজারে অনিয়ম, অর্থপাচার, দায় দেনার সমস্যা নিয়ে বাজেটে কোন আলোচনাই হয়নি বলেও তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় শিক্ষা ও অর্থনীতি অনুষনের ডিন অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মী, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাশরুর রিয়াজসহ অনেকেই আলোচনায় অংশ নেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভ্যন্তরীণভাবে দুর্নীতি সহায়ক শক্তির হাতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সংস্থাটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় যারা আছেন তাদের সিংহভাগ দুর্নীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে মোটামুটিভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত।

তাছাড়া সংস্থাটি বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে নিজেদের অপারেশনাল ক্যাপাসিটির পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংসদ, বিচার প্রক্রিয়া ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থারও দুর্নীতি দমনে সহায়ক ভূমিকা রাখার কথা রয়েছে।

গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সব প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিকভাবে দখলকৃত হয়ে যাওয়ায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

দিনাজপুরে আমবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ, নিহত ৪



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দিনাজপুরে আমবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে নাবিল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ২৬ জন।

শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল ৬টার দিকে দিনাজপুর-ফুলবাড়ী মহাসড়কের পাঁচবাড়ী বাজার চকরামপুর (দইসই) এলাকায় আরিয়ান পেট্রোল পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নাবিল পরিবহনের বাস ও দিনাজপুর থেকে ফুলবাড়ীর দিকে যাওয়া আমবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকচালক ও নাবিল পরিবহনের বাসের হেলপার ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত ২৮ জনের মধ্যে গুরুতর আহত এক শিশুসহ দুইজন দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ বিষয়ে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ হোসেন বলেন, ট্রাকের সঙ্গে নাবিল পরিবহন বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাকের ড্রাইভার ও বাসের হেলপারসহ চারজন নিহত ও ২৬ জন আহত।

তিনি বলেন, নিহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। রেকারের মাধ্যমে রাস্তা থেকে বাসটিকে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে এবং ট্রাকটিকে আরিয়ান পেট্রোল পাম্পের পাশে রাখা হয়েছে। বর্তমানে রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।

;

গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত চার উপজেলা, ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি



মাসুম বিল্লাহ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টির ফলে গাইবান্ধায় তিস্তা নদী ছাড়া সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে জেলার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ চার উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। এছাড়া তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার ৮০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার সকাল ছয়টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩১ সেন্টিমিটির বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৩৫ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে, জেলার করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর ২৮ সে.মি কমে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় ইতোমধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার (সরকারি হিসেবে) মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত গাইবান্ধার সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জে ৭টি, সাঘাটা উপজেলায় ৮টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পানবন্দি হয়ে পড়েছে। এই ২৪ ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৭ হাজার ৮২০টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৫০টি , সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটা উপজেলায় ৫ পাঁচ হাজা ১৭০টি ইউনিয়ন ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬ হাজার ৮০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। যদিও স্থানীয়দের দাবি বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

পানিবন্দি মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ০৬টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে, চার উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে ও বিদ্যালয়ের ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি বিদ্যালয়, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এছাড়াও সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পানিবন্দি এসব এলাকার মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি। এসব এলাকার চারদিকেই পানি থৈ থৈ করছে। নিম্নাঞ্চলের সাথে নদী তীরবর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে। শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে তারা ধীরে ধীরে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। পানিবন্দি মানুষদের নৌকা যোগে চলাচল করতে দেখা গেছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি এসব পরিবারগুলো। এসব এলাকার পাট, আউশ ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনে পাট, ভুট্টা, বাদাম, আউশক্ষেত সহ বিভিন্ন ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ সময় ফজলুপুর ইউনিয়নের মালেক মিয়া বলেন, গত তিনদিন থেকেই নদীতে পানি বাড়ছেই। পানিবন্দি হয়ে গবাদি পশু, শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে নানা সংকটে দিন যাচ্ছে আমাদের। বন্যায় পাট, ভুট্টা আউশ ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। টিউবয়েল পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট পড়েছি আমরা।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, বর্তমানে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। শুধু গজারিয়ায় নয় পানিবন্দি সকল এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট হয়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে জানান, চলমান বন্যায় ইতোমধ্যে চার উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাক-সবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যদি দ্রুত পানি নেমে যায় তাহলে সেসব ক্ষতির আশঙ্কা কম রয়েছে। আর যদি বন্যা স্থায়ী হয় কিংবা আরো বাড়ে তাহলে কী পরিমাণ ফসল নষ্ট হবে তা পরবর্তীতে জানা যাবে।

গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে মোবাইল ফোনে বলেন, জেলার বন্যা কবলিত চার উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারদিকেই থৈ থৈ পানি। এরমধ্যে কিছু স্কুলের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে এবং কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউই স্কুলে যেতে পারছে না। যার কারণে সেইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই বা পানি নেমে গেলেই পূর্বের ন্যায় সকল বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু হবে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, উজানের ঢলে অব্যহত পানি বৃদ্ধির ফলে ঘাঘট ও ব্রহ্মূত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরো কিছুটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্বিক পরিস্থিতির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

;

বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না বন্যার্তরা



কল্লোল রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
বন্যায় ঘর ডুবে গেলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নারাজ এই নারী।  ছবি: বার্তা২৪

বন্যায় ঘর ডুবে গেলেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নারাজ এই নারী। ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের তিনটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর অববাহিকা প্লাবিত হয়ে জেলার ৭ উপজেলার ৪১ টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৮২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারাও বন্যার কবলে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম বাড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। 

তবে, বন্যায় বাড়ি ডুবে গেলেও বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষদের যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছেনা। সংসারের শেষ সম্বলটুকু হারানো ও ভেসে যাওয়ার ভয়ে ডুবে থাকা বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও নারাজ পরিবারগুলো। চেষ্টা করছেন ভেসে থাকা টিনের চালা আকড়ে ধরে বাঁচার।

উলিপুরে বন্যার্ত এক খামারির বাড়িতে রাখা গবাদি পশু। 

জেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান শাখা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কুড়িগ্রামের প্রায় ৩২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৪০৪টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। কিন্তু সরকারি হিসেব মতে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি মাত্র আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু পরিবার থাকার কথা জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান শাখা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলোর চর আলোর পাঠশালা নামের ঐ আশ্রয়কেন্দ্রে ১২টি পরিবার ও কিছু গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রিত ঐ পরিবারগুলো নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়ে সেখানে উঠেছেন। অপরদিকে, বন্যায় কবলিত পরিবারগুলোর আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের কয়েকটি বন্যা কবলিত চরে সরেজমিনে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে না যেতে চাওয়ার ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করে বার্তা ২৪. কম। দেখা যায়, যাদের বাড়ি সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছে তারা নিকটবর্তী কোন উঁচু স্থানের আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এবং যাদের বাড়ির টিনের চালা সহ কিছুটা অংশ ভেসে আছে সেখানে কোনমতে কষ্ট করে দিন পার করছেন চরাঞ্চলের বাসীন্দারা। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন টিনের চালায়, কেউবা নৌকাতেই কাটাচ্ছেন দিনরাত।

উলিপুর উপজেলার বতুয়াতুলি মুসার চরের বাসীন্দা নূর জামাল মিয়া। দুজন শ্রমিক ডেকে এনে ঘরের ভেতর গলা পর্যন্ত ওঠা পানিতে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন জিনিসপত্র আরও উঁচুতে বেঁধে রাখছেন তিনি। পাশের উঁচু একটি টিলায় হাঁটু পানিতে গবাদিপশু গাদাগাদি করে রাখা। সারাদিন আঙিনায় বেঁধে রাখা নৌকায় বসে কাটছে তার দিন।

মুসার চর এলাকার বন্যা কবলিত এক বাসিন্দা। 

আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বাড়ির সব মালামাল নিয়ে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়। পানি বাড়লে জিনিসপত্র আরও উঁচুতে তুলতে হয়। বাড়িতে না থাকলে সব ভেসে যাবে। সেখানে গরু গুলোর যায়গা হবে কিনে কে জানে। মালামাল রক্ষা করতে আমাদের বাড়িতেই থাকতে হয়।

একই চরের বাসিন্দা ফাতেমা বেগমের কন্ঠেও একই ব্যাখ্যা। বাড়ির ৩ টি ঘরে বুক পর্যন্ত পানি ওঠার পর ৬টি গরুসহ ৫ জন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির একটি উঁচু টিলায় আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সেখানেই চলে রান্নার কাজ। তিনি বলছিলেন, খাওয়ার কষ্ট, টয়লেট যাওয়ার কষ্ট, থাকার কষ্ট। তারপরেও চোখের সামনে বাড়িটা আছে এটাই শান্তি। এগুলো ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে সবসময় টেনশন হবে। সেখানেও থাকার ব্যবস্থা কেমন সেটা নিয়েও চিন্তা হয়।

কুড়িগ্রামের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে দুই একটি করে পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন এবং মানুষের থেকে গবদি পশুর সংখ্যাই বেশি। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান জানিয়েছেন, উলিপুরের চর বাগুয়াতে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এর আশেপাশের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে গবাদিপশুর পাশাপাশি দু-একটি করে পরিবার উঠেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমরা সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় মোট ৪০৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। সেখানে মানুষদের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের আসার জন্য বারবার বলা হচ্ছে। সাধারণত চরম ঝুঁকি না মনে করলে লোকজন আসতে চায়না। তবে আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি।

এদিকে, সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১০৫ মে. টন চাল, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও নগদ ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় চিলমারী ও নুনখাওয়া পয়েন্টে এই ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার যথাক্রমে ৭১ সেন্টিমিটার ও ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি আগামী ৩ দিন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধির হার অব্যহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।

;

বন্ধুকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, গ্রেফতার ৫



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,ফেনী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনীতে অপহরণের একদিন পর বন্ধুর ভাড়া বাসা থেকে মোহাম্মদ রায়হান রানা (২২) নামে এক যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩ জুলাই) দিবাগত রাতে জেলার দাগনভূঞা পৌরসভার সাতবাড়িয়া জামে মসজিদ এলাকার লাতু মিয়ার কলোনী থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, রায়হানকে অপহরণ করে তার এক বন্ধুসহ তাদের একটি চক্র রায়হানের বাবার কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরবর্তীতে পুলিশের সহযোগিতায় তাকে বন্ধুর ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।

এ সময় অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছ পুলিশ। চক্রের অন্য সদস্যরা পালিয়ে যায়।

এর আগে অপহৃত যুবকের বাবা মো. বেলাল বাদী হয়ে দাগনভূঞা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। অপহৃত রায়হান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা গ্রামের মোহাম্মদ বেলালের ছেলে। তিনি চট্টগ্রামে মাছ ধরা ট্রলারে কাজ করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- জাহিদুল ইসলাম পিন্টু (৩৪), ফখরুল ইসলাম (৩৩), আল জাবের (২৫), আজমীর হোসেন হৃদয় (২৬) এবং টিটু দাশ (৩৩)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ছুটি কাটিয়ে গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে রামগতি থেকে চট্টগ্রামের কর্মস্থলে যোগ দিতে গাড়িতে উঠেন রায়হান। যাত্রাপথে রায়হান মুঠোফোনে ফেনীর দাগনভূঞার এক বন্ধুর সঙ্গে চট্টগ্রামে যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন।

ওই বন্ধু তাকে দাগনভূঞা নেমে ভাত খাওয়ার দাওয়াত দেন। তার কথা অনুযায়ী দুপুর ১টায় রায়হান দাগনভূঞা বড় মসজিদের সামনে বাস থেকে নেমে তার সাথে দেখা করেন। পরে ওই বন্ধু তাকে ভাত খাওয়ানোর জন্য সাতবাড়িয়া মসজিদের বিপরীতে নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে একটি কক্ষে আটকে ফেলেন।

ওই সময় কক্ষে অবস্থান করছিল অন্যান্য অপহরণকারীরাও। পরে রায়হানের মোবাইল ফোন থেকে তার বাবার সঙ্গে কথা বলে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা।

পরদিন (৩ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে তাদের কথামতো রায়হানের বাবা ও নিকটাত্মীয় শাহেনাজ দাগনভূঞার জিরো পয়েন্টে এসে পৌঁছালে এ সময় ওই এলাকায় টহলরত দাগনভূঞা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. আজমগীরকে দেখতে পেয়ে তার কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সহযোগিতা চান তারা। পরে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসিম বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

;