কাঁদাল চোর, হাসি ফোটাল পুলিশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্প্রতি রংপুরে গরু চোর চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গেল এক সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১৫টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে চুরি যাওয়া ৯টি গরু উদ্ধার করেছে রংপুর সদর থানা পুলিশ।

শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠে গরুর মালিকদের হাতে উদ্ধার হওয়া গরু হস্তান্তর করেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান।

চুরি হওয়া গরু ফিরে পেয়ে মালিকদের চোখে মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। হাজীরহাট এলাকার ওহিদুল ইসলাম বলেন, ধন্যবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই। গরুটি চুরি হওয়ার পর অনেক দেখেছি। আজ সেই কান্না থামিয়ে মুখে হাসি ফোটাল পুলিশ ভাইয়েরা। আমি আনন্দিত গরু উদ্ধার হওয়াতে।

এসময় পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গত ২১ জানুয়ারি থেকে সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া নয়টি গরু উদ্ধার করে। এরমধ্যে শাহবাজপুরে লিটনের ইটভাটা থেকে ১টি গরু, শিবপুর সরকারপাড়া এলাকার রশিদুল চোরের বাড়ি থেকে ২টি ও বদরগঞ্জ উপজেলার বালাচড়া এলাকার রফিকুল চোরের বাড়ি থেকে ৬টি গরু উদ্ধার হয়। উপযুক্ত প্রমাণ, চোরদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে প্রকৃত মালিকদের হাতে গরুগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে।

হস্তান্তরকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে এলাহী, রংপুর সদর থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম, ওসি তদন্ত জাবেদ আলী, এসআই ওলিয়ার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

   

আনার হত্যা মামলার তদারক কর্মকর্তাসহ ২৩ পুলিশের বদলি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের কলকাতায় নিহত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যা মামলার তদন্তে বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে নেপালে অবস্থান করা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমানসহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি) পদ মর্যাদার ২৩ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।

কয়েক দিন আগে একই মামলার তদন্তের কাজে ভারতে গিয়েছেন এই কর্মকর্তা। রবিবার (২ জুন) পুলিশ সদর দফতর থেকে তাকে বদলি করা হয়।

শাহিদুর রহমানকে বরিশাল জেলা পুলিশের বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া বদলির আদেশ পাওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদের কর্মকর্তারা হলেন-ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আতিকুল ইসলামকে খুলনা জেলা পুলিশে, এপিবিএনের এ এইচ এম কামরুল ইসলামকে র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আরএমপি এডিসি ড. মো. রুহুল আমিন সরদারকে নোয়াখালীর পিটিসি, ডিএমপির এডিসি রাশেদ হাসানকে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ সার্কেলে, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই সার্কেলের মু. সাইফুল ইসলামকে রাঙ্গামাটি সদর সার্কেলে, মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের মো. আজমল হোসেনকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামার সার্কেলে, একই সার্কেলের মহসীন আল মুরাদকে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলে, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ হোসেনকে পাবনা সদর সার্কেল, রাঙ্গামাটি সদর সার্কেলের মো. জাহেদুল ইসলামকে রাঙ্গামাটি কাপ্তাই সার্কেলে বদলি করা হয়েছে।

বদলির আদেশ পাওয়া সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদের কর্মকর্তারা হলেন- রাজবাড়ীর পাংশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার সাহাকে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার, এসপিবিএনের মো. শাহীনকে রাজবাড়ী পাংশা সার্কেল, ঢাকার ১৩ এপিবি্এনের জান্নাতুল ফেরদৌসকে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি), সিআইডির লোপামুন্ডু মহাজনকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে ডিআইজির কার্যালয়ে, পুলিশ স্টাফ কলেজের মো. আসলাম সাগরকে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়, এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)’র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবিরকে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি), বরিশাল মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. শাহজাহানকে ডিএমপিতে, সিলেটের আরআরএফের মো. শামছুল আলম চৌধুরীকে ঢাকার পুলিশ টেলিকম সংস্থায়, এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) মো. আলী হোসেন খানকে ডিএমপিতে, সাতক্ষীরার তালা সার্কেলের মো. সাজ্জাদ হোসেন মোল্যাকে ডিএমপিতে, র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার হাম্মাদ হোসেনকে সিআইডিতে, কক্সবাজার ৮ এপিবিএনের রসুল আহমদ নিজামীকে র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার এবং র‌্যাবের মো. শামসুল আলম খানকে ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

একই আদেশে আগামী ৫ জুনের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ৬ তারিখ নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

;

খুলনায় চাহিদার চেয়ে বেশি ২১ হাজার পশু



ডিস্ট্রিক করেসপনডেন্ট বার্তা২৪.কম খুলনা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ১৭ জুন পবিত্র ঈদ-উল-আজহা বা কোররবানীর ঈদ। আর ঈদকে সামনে রেখে খুলনা জেলায় কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুতিতে ব্যস্ত স্থানীয় কৃষক এবং খামারীরা।

এ মৌসুমে খুলনা জেলায় কোরবানির পশু প্রয়োজন ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৩টি। এর বিপরীতে খুলনায় মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮শ’ পশু। যা চাহিদার চেয়ে ২১ হাজার ৮৩৫টি পশু বেশি। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় পাঠানো যাবে অতিরিক্ত পশু।

খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, খুলনা জেলায় এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮টি পশু। এর মধ্যে গরু ৬৬ হাজার ৯৫৭, ছাগল ৭৪ হাজার ৩৬৪, ভেঁড়া ১৪ হাজার ৮৩৪, মহিষ ৯৭, অন্যান্য ২৬।

অন্যদিকে, খুলনা জেলায় কোরবানির জন্য প্রয়োজন ৫৮ হাজার ৩৫৬টি গরু, ৬৪ হাজার ১৬০টি ছাগল, ১১ হাজার ৮৩২টি ভেঁড়া এবং ৯৫টি মহিষ।

আর খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিপ্ততর সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় প্রায় ১০ লাখ ৫ হাজার ৭৭০টি পশু কোরবানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর বিপরীতে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে এ বিভাগে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৫টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ২৭৮টি, সাতক্ষীরায় প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার ৬৫৯টি, বাগেরহাটে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার ৪১৩টি, যশোরে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬১৭টি, নড়াইলে প্রায় ৫২ হাজার ৫৪৭টি, মাগুরায় প্রায় ৭৮ হাজার ৫৯১টি, মেহেরপুরে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৮টি, চুয়াডাঙ্গায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪০২টি, কুষ্টিয়ায় প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯টি এবং ঝিনাইদহ জেলায় ২ লাখ ১৮ হাজার ৪৩১টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

এর আগে অর্থাৎ গতবছর কোরবানির ঈদে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১১ লাখ ৮২ হাজার ৯৯৮টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল। তখন চাহিদা ছিল প্রায় ৮লাখ ২৮ হাজার ৯৯৮টি পশু।

ডুমুরিয়ার শাহাপুর এলাকার গরু খামারী মোঃ জালাল গাজী জানান, ‘আরো আগে থেকে শাহপুর পশুর হাটে কোরবারিনর পশু আসতেছে। ক্রেতারা মনে করে কম দামে গরু কিনবে। কিন্তু আমরা যারা ছোট গরু কিনে ছয় থেকে ৮ মাস লালন পালন করে গুরু বিক্রি করি, আমরা বুঝতেছি। গবাদি পশুর খাবারের কি পরিমান দাম। সেই তুলনায় গরুর দাম হচ্ছে না। তারপরও সামান্য লাভে গরু বিক্রি করতে হবে।’

খুলনার আঠারো মাইল পশুর হাটের ব্যপারী মোঃ আলাউদ্দিন জানান, ‘শুনছি খুলনায় চাহিদার থেকে গরু বেশি আছে। তারপরও গরুর দাম বেশি। প্রতি হাটে আসছি। দু-একটা করে কিনছি। শহরে পশুর হাট হলে সেখানে বিক্রি করবো।’

খুলনা মহানগরীর ব্যবসায়ী শেখ ইমরান হোসেন যুবরাজ জানান, ‘কোরবানির সময় দেশের বিভিন্ন সময়ে পশুর হাট হয়। খুলনা বিভাগে সব থেকে বড় পশুর হাট হয় নগরীর জোড়াগেটে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) কোরবানির পশুর হাট। লোক মুখে শুনছি, আগামী ১০ বা ১১ তারিখ এ হাট শুরু হতে পারে। আমি নগরীর বাইরে কয়েকটি পশুর হাটে খোঁজ নিয়েছি। সব জায়গায় দাম একটু বেশি। তারপরওতো কিনতে হবে।’

খুলনা জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, ‘পশুকে কোনো ধরণের হরমোন বা ক্যামিলকেল না খাওয়ানোর জন্য আমরা খামারিদের পরামর্শ দিই। এ ছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সবসময় ছোট, বড় খামারীদেরকে তদারকি করে এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন।’

;

‘তিনটা বাচ্চার লাইগা থাকার ব্যবস্থা কইরা দেন’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম মোংলা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরের মেঝে। পড়ে আছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডবে বেঁচে যাওয়া বাঁশ, কাঠ ও গোলপাতার তৈরি ঝুপড়ি ঘরের কিছু অংশ। সহায় সম্বল হারিয়ে অর্থ সংকটে নতুন করে ঘর তৈরি করতে না পারায় সে ঘরেই তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে আঁকড়ে ধরে বসে আছেন অসহায় বাবা বাবুল শেখ।

ঝড়ের পাঁচ দিন পর সরকার থেকে পাওয়া ১০ কেজি চাল থেকে কিছু চাল অস্থায়ী ইটের তৈরি চুলায় রান্নার জন্য বসিয়েছেন বাবুলের স্ত্রী। ঝড়ের পর এই প্রথম চুলায় আগুন জ্বললো তাদের। ঝড় শেষে এই পাঁচ দিনে মোট দুই বেলা কে বা কারা এসে একবার খিচুড়ি ও একবার বিরিয়ানি দিয়ে গিয়েছিল। নিজেরা না খেয়ে গত দুই দিন ছেলে মেয়ের মুখে সে খাবার তুলে দিয়েছেন বাবুল ও তার স্ত্রী। আজ অনেক দিন পর হয়তো পেটপুরে ভাত খাবেন তারা।

এমনই চিত্র শেলা নদীর তীরে অবস্থিত জয়মনি'র প্রায় সব জেলে পরিবারের। ঝড়ের তান্ডবে সেখানকার প্রায় সবগুলো ঘরই ভেঙে গেছে, কোমড় সমান পানিতে ঘরের মেঝের সঙ্গে আসবাবপত্রও তলিয়ে গেছে। নদীতে মাছ ধরে, বনে ও মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি যে অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন তার সবকিছুই ভেসে গেছে নোনা জলে।

সুন্দরবন ঘেষা মোংলার জয়মনি ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সর্বশেষ সহায় সম্বল রক্ষা করতে ঝড়ের সময় বেশিরভাগ লোকজনই নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। কিন্তু ঝড়ের সঙ্গে পানি বাড়তে থাকায় চোখের সামনে ঘরের সবকিছু ভেসে যেতে দেখেও জীবন বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিতে চলে যেতে হয় স্থানীয়দের।

বার্তা২৪.কমের কথা হয় জয়মনি’র শেলা নদী তীরের বাসিন্দা মো. বাবুল শেখের সঙ্গে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডবের ভয়াবহতার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এর আগে বহুত বড় বড় ঝড় গেছে। কিন্তু, রিমালের মতো এমন তাণ্ডব আগে কহনো দেহি নাই। চোখের সামনে দেখলাম নদীর পানি বাড়তে বাড়তে ঘরে কোমর সমান পানি হইয়া গেল। ডরে ঘর থেইকা বাইরাইতেই দেহি ঘুমানোর খাটটা নদীতে ভাইসা যাইতাছে। সাঁতরাইয়া গিয়া খাটটা আনলাম। আর ঘরের বেড়াগুলা সব উইড়া গেল। টিকতে না পাইরা শেষ পর্যন্ত সাইক্লোন সেন্টারে চইলা গেলাম। পোলাপাইনসহ বউরে আগেই পাঠাইয়া দিছিলাম।'

'ঝড় থামনের পরে আইসা দেহি ঘরের চালঠা কোনওরহম আছে আর ঘরের বাহি বেবাক জিনিসপত্র চাইল, ডাইলসহ হাড়ি পাতিল, থালা-বাসন এমনকি গাত দেওনের জামা কাপড় সব নদীতে ভাইসা গেছে। নিজেগো তো কিছু নাই, মাইনষের তে চাইয়া চাইল, ডাইল আইনা যে বাইত্তে রাইন্ধা খামু তারও তো কোন উপায় নাই। সাইক্লোন সেন্টার থেইকা যে চিড়া মুড়ি দিয়েছিল হেডি-ই পোলাপাইনরে খাওয়াইছি। ছোট ছোট পোলাপাইনগুলারে তো আর না খাওয়াইয়া রাখতে পারুম না।'

ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণ সহযোগিতা পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বাবুল বলেন, 'দুইদিন না খাইয়া ছিলাম। এরপর কেডা জানি একদিন খিচুড়ি আরেকদিন একবেলা বিরিয়ানি দিয়া গেছিলো। হেইগুলা পোলাপাইনে দুই দিন খাইছে। আমি আর পোলাপাইনের মায় কোনরকম খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাইছি। আজকে মেম্বারসাব ডাইকা নিয়া ১০ কেজি চাইল দিসে। আজকে ৬ দিন পর চুলায় আগুল জ্বললো আমগো। এইডা খালি আমগো দুঃখের কথা না, এইহানের সবার একই অবস্থা।'

‘খাওন দাউন যেমন কথা, তিন পোলা-মাইয়া লইয়া নদীর উপরে বিছনা পাতি ছাড়া থাহনের এই কষ্ট কোনভাবেই আর সহ্য হইতাছে না। বাচ্চাগুলা রাইতে খুব ডরায়। পোলাপাইনগুলার দিকে চাইলে বুক ফাইটা কান্দন আহে। এই ঘরটা ঠিক করতে কম কইরা হইলেও ২০ হাজারের দরকার। আমার কাছে তো এক টাকাও নাই। এই পোলাপাইন তিনটারে লইয়া আমি কি করমু। আপনারা আমার পোলা মাইয়াগো থাকার একটু ব্যবস্থা কইরা দেন। সব ঠিক হইলে আমি কাম কইরা আপনাগো টাকা ফিরাইয়া দিমু। আল্লাহর দোহায় লাগে ছোট ছোট এই তিনটা বাচ্চারে আপনারা বাঁচান।’ চোখের পানি ঝড়িয়ে এভাবেই বাবুল শেখ তার আকুতির কথা বলছিলেন বার্তা২৪.কমের প্রতিনিধির কাছে।

নদী তীরের এই মানুষগুলো যে শুধু খাবারের কষ্ট করছে তা নয়, এখানকার মানুষ সবচাইতে বেশি কষ্ট করছেন সুপেয় পানির অভাবে। বৃষ্টির পানি এবং পুকুরের মিঠা পানি সংরক্ষণ করেই তাদের সুপেয় পানির অভাব পূরণ হয়। কিন্তু, ঝড়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার পাত্র এবং মিঠা পানির পুকুর নোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। যে কারণে, সুপেয় পানির অভাবে অনেকেই নদী এবং পুকুরের নোনা পানিই পান করছেন। এতে করে বাড়ছে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা।

আব্দুল গফফার শেখ নামের এক বাসিন্দা বলেন, 'ঘরবাড়ি সব নদীতে চইলা গেছে, আর নাই কিচ্ছু। সংসারে মালামাল কিছুই নেই, সব শেষ। আজকে মেম্বারের কাছ থেইকা ১০ কেজি চাইল পাইছি। এর আগে এক সন্ধ্যা খাইছি বা না খাইয়া রইছি। খাওন না খাইয়া থাকন যায়, কিন্তু পানি না খাইয়া আমরা কেমনে থাকি!। আমগো এইহানে পানির খুব অভাব। বৃষ্টির পানি জমাইয়া রাখছিলাম কিন্তু বন্যায় সব জমানো পানি ভাইসা গেছে। এই নোনা পানি খাইয়া-ই জীবন বাঁচাইতাছি। ঘরবাড়ি ঠিক করনের অর্থকরী নাই। ভাঙ্গা ঘরে বউ বাচ্চা লইয়া দিন কাটাইতাছি। এখন মনে হয় মইরা গেলেই বেশি ভালো হইত। এই কষ্ট আর সহ্য হয় না।’

স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও অন্যান্য সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে অত্র এলাকার জনপ্রতিনিধ ইউপি সদস্য নাজমুল হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমার ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৬৮০ জন। সে অনুযায়ী ত্রান আসে খুব সীমিত। যে কারণে আমি সবাইকে একসঙ্গে ত্রাণ দিতে পারছি না। ইতিমধ্যে সাড়ে সাতশ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বেসরকারি কোন সংস্থা এখনো পর্যন্ত আমার এই দুর্গম এলাকায় ত্রাণ বা অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে পৌঁছাতে পারেনি। আর ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যাপারে ইতিমধ্যে আমার ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। অনেকেই এসে ঘুরে দেখে গেছেন। আশা করি খুব শীঘ্রই তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

এদিকে মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে জয়মনিসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে একদিনের মধ্যেই ১০ কেজি করে চাল এবং অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছি। যা স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্যদের দ্বারা বিতরণ করা হচ্ছে। কেউ যদি এখনো পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে থাকে তা আমাদের জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। ক্ষতিগ্রস্তদের বাসস্থানের ব্যাপারে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

;

খোঁজা হচ্ছে আনার হত্যার হাতিয়ার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা এবং হাড় থেকে মাংস আলাদা করে টুকরো করার কাজে ব্যবহৃত হাতিয়ার খুনিরা কাদের কাছ থেকে কীভাবে পেয়েছিল, তার খোঁজে নেমেছে ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির কলকাতা ব্যুরো।

দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, আনারকে হত্যার সময় ব্যবহার করা সরঞ্জাম কলকাতা থেকেই সংগ্রহ করা হয় বলে জানতে পেরেছে সিআইডি।

এই হত্যা মামলার তদন্তে কাজ করা এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলেছে, দেহ টুকরা করার কাজে বিশেষ করে চাপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। খুনিরা এগুলো স্থানীয় (কলকাতা) দোকান থেকে কিনেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সন্দেহভাজন খুনিদের গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেসব স্থান (দোকান) শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।’

কলকাতার গোয়েন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা একজন কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি খুন করার পর আনারের দেহকে ৮০ টুকরা করে তাতে হলুদ মাখান। তারপর টুকরাগুলো নিউ টাউনের কাছে একটি খালে ও আরও কয়েকটি স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।

সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে পাওয়া আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে কয়েক কেজি মাংসের টুকরা এবং ফ্ল্যাট থেকে কিছু চুল পাওয়া গেছে। সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে।

উদ্ধার করা মাংসের টুকরার সঙ্গে এমপি আনারের সন্তানদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার প্রস্তুতি চলছে। এখন কলকাতায় যাওয়ার জন্য ভিসার অপেক্ষায় আছেন আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

আনার হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন ও তার অন্যান্য সহযোগীদের ধরতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে ঘুরে আসার পর ডিবির আরেকটি দল নেপাল গেছে।

সেখানে সন্দেহভাজন আসামি সিয়াম হোসেন আটকের খবর মিলেছে। এরপর হারুনের নেতৃত্বে শনিবার (১ জুন) কাঠমান্ডু যায় গোয়েন্দা দলটি।

শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, আনার হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনে ভারতের সিআইডি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করে কাজ শুরু করেছে।

স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) নামে এ দল একজন আইজির নেতৃত্বে তিনজন ডিআইজি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ১০-১২ জন কর্মকর্তা নিয়ে গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্ত দলটি দ্রুততার সঙ্গে প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রমাণ ও ফরেনসিক রিপোর্ট সংগ্রহের কাজটি নিশ্চিত করবে। প্রধান সন্দেহভাজন আখতারুজ্জামান শাহীনকে ধরতে ঢাকার পুলিশ ও ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করবে তারা।

ঢাকা ও কলকাতার পুলিশের ভাষ্য, আনার খুন হওয়ার পর ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে কাঠমান্ডু, সেখান থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শাহীন।

টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, তদন্তের জন্য সে দেশের সিআইডির বিশেষ তদন্ত দলটি শিগগির নেপালেও যাবে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন আনার।

এ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

ওই তিনজন হলেন: আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান।

যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ বলছে, আনার হত্যার হোতা তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন। আর খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল।

আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।

তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সি জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে হত্যার প্রায় দুই মাস আগে সন্দেহভাজনরা তাকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।

জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি সব কাজ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।

ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারাও জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন।

সঞ্জিভা গার্ডেনস নামের বিলাসবহুল ওই অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে গত মঙ্গলবার বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পরে তা ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়।

;