জল্লাদ শাহজাহানের দাফন সম্পন্ন

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নরসিংদী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: জল্লাদ শাহজাহান এর জানাজা নামাজ

ছবি: জল্লাদ শাহজাহান এর জানাজা নামাজ

দেশের আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান এর জানাজা নামাজ শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তার নিজ এলাকা নরসিংদীর পলাশ উপজেলার পারুলিয়া ফুটবল খেলার মাঠে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। জানাজার নামাজ শেষে ইছাখালীস্থ পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জানাজা নামাজে পলাশ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কারি উল্লাহ সরকার, পলাশ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক জাকির হোসেন মৃধা, গজারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শাহজাহানের স্বজন আলমগীর সহ প্রায় ৫ শতাধিক মুসল্লী জানাজা নামাজে অংশ নেন। নামাজের পূর্বে শাহজাহানের ভাগনে মোঃ নজরুল ইসলাম তার মামার জন্য দোয়া কামনা করেন এবং সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এছাড়া শাহজাহানের জীবদ্দশায় কারো সাথে কোন দেনা পাওনা থাকলে তা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় স্থানীয়দের মুসল্লী ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভীর এড়াতে শাহজাহানের মরদেহ কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

জানাজা নামাজের পূর্বে ভাগ্নে নজরুল ইসলাম ছাড়াও মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে কথা বলেন, কারিউল্লাহ সরকার, জাকির হোসেন মৃধা, আমান উল্লাহ ভুইয়া হিরন ও আলমগীর।

এসময় বক্তারা বলেন, ছাত্র জীবনে শাহজাহান একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন যার ফলে তিনি কিছুদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরী করেন। পরবর্তীতে তার জীবনে আর সুখ সইলো না। মামলার বেড়াজালে জেলে যেতে হল।

বিজ্ঞাপন

জেলে গিয়ে এক পর্যায়ে সাঁজার মেয়াদ কমাতে ফাঁসি দেয়ার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ মানবতাবিরোধী মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামীসহ দেশের আলোচিত বেশ কয়েকটি মামলার ফাঁসির রায় কার্যকর করে জল্লাদ হিসেবে দেশব্যাপী আলোচনা আসেন। দীর্ঘ ৩৪ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন মুক্তি লাভ করেন। জেল থেকে মুক্তি লাভের পর তার জন্মভূমি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে স্বজনদের সাথে দেখা করতে আসেন। এরপর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন শাহজাহান। জেল থেকে মুক্তি লাভের পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক বছরের ব্যবধানে তিন চার বার বাড়িতে আসেন শাহজাহান কিন্তু আশেপাশের লোকদের সাথে তেমন সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখেননি।

শাহজাহানের মৃত্যুতে এলাকাবাসীর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া না থাকলেও জীবনের শেষ বেলায় জানাজার নামাজে শরিক হয়ে সহানুভূতি দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা।

উল্লেখ্য: শাজাহান মুক্তি লাভের পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। সর্বশেষ সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সেখানে গত সোমবার ভোর সাড়ে তিনটায় তিনি বুকের ব্যথা অনুভব করেন। এ সময় বাড়ির মালিক তাকে চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে ভর্তি করেন। ভর্তি করার সাড়ে তিন ঘণ্টার মাথায় চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ময়না তদন্ত ছাড়াই মরদেহ প্রহনের জন্য প্রস্তুত হয় স্বজনরা। কিন্তু এতে বাঁধ সাদে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ। এদিকে শাহজাহানের মরদেহ ঢাকা থেকে এনে রাত দশটায় জানাজা শেষে দাফনের ঘোষণা দেওয়া হয় এলাকায়। হাসপাতালের চিকিৎসক ও থানা পুলিশের বাধার কারণে সোমবার মরদহে আনা সম্ভব হয়নি। যার ফলে দাফন কাজ করা যায়নি। পরদিন মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় শাহজাহানের মরদের ময়নাতদন্তের কাজ সম্পন্ন করেন কর্তৃপক্ষ এবং হ্বেলা সাড়ে ১২ টায় মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। বেলা দুইটা গড়িয়ে এলে শাজাহানের মরদেহ নিজ বাড়িতে আনা হয়। একটা সময় দেশের আলোচিত এক ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া শাহজাহানকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে উঠে আসেন তার স্বজন ও আশপাশ লোকজন।
বিকেলে জানাযা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার ভগ্নিপতির কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়।

দাফন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর শাহজাহানের প্রতিবেশী ভাগ্নে এস এম আলমগীর গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং দোয়া কামনা করেন।