ভাঙন রোধে নিজেদের অর্থেই বস্তা ফেলছেন স্থানীয়রা

  • সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নারী, পুরুষ, শিশু একসাথে নদীতে বস্তা ফেলার কাজ করছে। ছবি: বার্তা ২৪

নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নারী, পুরুষ, শিশু একসাথে নদীতে বস্তা ফেলার কাজ করছে। ছবি: বার্তা ২৪

নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেদের অর্থ দিয়ে নিজেরাই বালু ভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলছেন নদী ভাঙনের শিকার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ৬নং ফেরি ঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বার পাড়ার বাসিন্দারা।

৬ নম্বর ঘাটে ভাঙন কবলিত ভুক্তভোগী নারী, পুরুষ ও শিশুরা বালু মাথায় করে নিয়ে নদীর পাশে প্লাষ্টিকের পাতলা বস্তায় ভরে তারা ভাঙনরোধে কাজ করছেন। এসময় তারা বিভিন্ন ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

সাত্তার মেম্বার পাড়ায় ভাঙন স্থানে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব মো. ছিদ্দিক পাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'সরকারি লোকজন তো কোনো ব্যবস্থাই নিলোই না, এহন আমরা নিজেরাই বালু ও প্লাষ্টিকের বস্তা কিনে তাতে বালু ভরে ভাঙন স্থানে ফেলতেছি। মনের শান্তি মেটাতেই এ কাজ করছি। তাছাড়া তো আমাগেরে আর কোন উপায় নাই।'

তিনি আরও বলেন, 'ভাঙন ঠেকাতে আমরা বস্তা ফেলেতেছি না, খালি নদীর ঢেউ যেন একটু কম লাগে সেজন্য আমরা ভাঙন কবলিত স্থানে এলাকাবাসীরা মিলে আপাতত আড়াই'শ বস্থা ফেলছি। আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।'

এসময় ৬ নম্বর ঘাটের মুদি দোকানদার বারেক মৃধা বলেন, 'গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ মিটারের উপরে বসতভিটা নদীগর্ভে গেছে। সরকারি কর্মকর্তারা যদি আগেই কিছু জিও ব্যাগ ফেলতো তাহলে আজ আমার দোকানডা ভাঙনের কবলে পড়তো না। সব আমাদের কপাল, কি আর বলবো। এজন্য নিজেরাই টাকা দিয়ে পাতলা বস্তায় বালু ভরে ফেলতেছি।'

ভুক্তভোগী সরোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, 'চেয়ারম্যান, মেম্বারা শুধু ভোটের সময় এসে প্রতিশ্রুতি দেয়, আর কোন খবর থাহেনা। এবার ভাঙন দেহার জন সবাই আসতেছে কিন্তু কোন পদক্ষেপ নাই।'

ভুক্তভোগী আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু নদী আমার স্বপ্ন নিয়ে গেছে। সরকার শুকনো সময় কুনু বস্তা ফেলেনা, বন্যা আসলি সব ভেঙে গাঙ্গে নিয়ে যায়। আমার ঘর পর্যন্ত ভাঙ্গা চলি আইছে। এহন কই যাই, কি করমু চিন্তায় পড়ছি।'

বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, 'দৌলতদিয়ায় যে ৭টি ঘাট রয়েছে তার আশেপাশে ভাঙন দেখা দিলে সেটা আমরা জিওব্যাগ দিয়ে রক্ষা করতে চেষ্টা করি। তাছাড়া প্রতিবছরে তীব্র ভাঙনে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে থাকে। ঘাট রক্ষায় যে কাজগুলো লাগবে সেটাই বিআইডব্লিউটিএ করে থাকে। আমরা ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। ভাঙন কবলিত স্থান, ঘাট রক্ষার জন্য কিছু করতে হলে আমরা তা করব।'

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, '৬ নম্বর ঘাটের সাত্তার মেম্বার পাড়া যে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেটার ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’