বাংলা ব্লকেড

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা ব্লকেড

বাংলা ব্লকেড

এক দফা দাবিতে সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৮ জুলাই) দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের স্থানে সড়ক অবরোধ করেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, এক দফা দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে চারপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা এই মোড় অবরোধ করেন।

বিজ্ঞাপন
শিক্ষার্থীদের ঢল স্লোগানে স্লোগানে মুখর নগরী

এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেওয়া শুরু করে আন্দোলনকারীরা। পরে তাদের এই অবস্থানে মিছিল সহকারে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে সড়কের দুইপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে গাছে ঝুলে থাকার ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তার গায়ের সাদা কাপড়ে 'মেধা থাকার পরও কোটা পদ্ধতি আমাকে বাঁচতে দেয়নি', ' তোর ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে মা'- লেখা রয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হন। এরপর একটি মিছিল নিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড়ে এসে অবরোধ করেন তারা। এর ফলে এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড এবং ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

ইডেন কলেজের ছাত্রীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। এতে ওই এলাকার আশেপাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

সাইন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ

এদিকে, ঢাকা-রাজশাহী রেলপথ অবরোধ করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ সংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচে রেলপথের ওপরে অবস্থান নেয় তারা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’, ‘সংগ্রাম না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’—এমন স্লোগানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যানার, পোস্টার প্রদর্শন করেন।

কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে দেড় ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটাপদ্ধতি সংস্কার করা না হওয়া পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন।

কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহালের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।

শাহবাগে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ

শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘিরে শাহবাগ এলাকায় পুলিশের সতর্ক অবস্থান দেখা গিয়েছে। শাহবাগ চত্বরের চারপাশে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪. কমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোন বাধা দেওয়া হবে না। তবে তারা যদি কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গত ৬ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম ঘোষণা দেন, রোববার বিকেল ৩টা থেকে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি পালিত হবে। শুধু শাহবাগ মোড় নয় ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল প্রতিটি পয়েন্টে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন।ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা জেলায়–জেলায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন। রোববার শিক্ষার্থীরা চার দফা বাদ দিয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন। তা হলো- সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যুনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে।

পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সড়কে শিক্ষার্থীরা

প্রসঙ্গত, ৫ জুন সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য আজ ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানি হয়, আপাতত আগের মতোই বহাল থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। তাই পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজও হচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলন।

উল্লেখ্য, এ সময় ঢাবির বিভিন্ন হল ও বিভাগ থেকে শত শত শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে আসে এবং 'কোটা না মেধা? মেধা মেধা',জেগেছে রে জেগেছে ছাত্র সমাজ জেগেছে, লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে, কোটা না মেধা মেধা মেধা, সারা বাংলায় খবর দে কোটা প্রথার কবর দে সহ শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগানে মুখরিত হয় ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকা।