উত্তাল জাবি, মুখোমুখি অবস্থানে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীরা

  • জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জেরে 'তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার' স্লোগান দেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ৪ শিক্ষার্থীকে ডাইনিংয়ে নিয়ে জেরা ও মোবাইল ফোন চেক করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে৷

এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে আবাসিক হলটির প্রবেশপথ ঘেরাও করে বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া শহীদ তাজউদ্দীন হলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে৷ রবিবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটার সর্বশেষ তথ্যমতে, মুখোমুখি অবস্থানে আছে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷

রবিবার (১৪ জুলাই) রাত সাড়ে ১১ টায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে-এমন তথ্য পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় জমায়েত করে একটি প্রতিবাদী বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে রবীন্দ্রনাথ হলের সামনে আসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর হল প্রভোস্ট ও প্রক্টর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসলে শিক্ষার্থীরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়৷

পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে শহীদ তাজউদ্দীন হল অভিমুখে রওনা হয়ে সেখানে কিছুক্ষন অবস্থান নিয়ে ভিসির বাসভবন হয়ে ছাত্রী হল হয়ে পুনরায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সম্মুখে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় হল থেকে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে আন্দোলনকারীদের পথ রোধ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকে৷

এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি-রাজাকারের ঘাটি’, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না', 'শেরেবাংলার মাটি, রাজাকারের ঘাটি', 'চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার'-ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

সরেজমিনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের হলেও এমন স্লোগান দেওয়ার পরিকল্পনা করে আবাসিক হলটির ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা৷

এমন সময় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মো. সাঈফ খান ৪৯ ব্যাচের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে একটি ম্যাসেজ দিলে হলের নিচ তলার ১২৪ নং কক্ষ থেকে স্লোগান পুরো হলে ছড়িয়ে পড়ে৷

শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান দিতে শুরু করলে পলিটিকাল ব্লক থেকে ৪৮ ব্যাচের সিনিয়ররা এসে তাদের সবাইকে ডেকে ডাইনিংয়ে আসতে বলে। ১২৪ নং কক্ষ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের কাউসার আলম আরমান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আশিক ও ইংরেজি বিভাগের জাহিদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এ সময় ডাইনিং হলে উপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে জানা যায়, ডাইনিং হলে ডেকে আনার পর শিক্ষার্থীদের 'রাজাকার' স্লোগান দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হয়।

এ সময় 'শিবির' সন্দেহে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন নিয়ে ম্যাসেঞ্জারের ম্যাসেজ চেক করা হয়৷ এসময় দীর্ঘসময় পর্যন্ত ডাইনিং হল থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পান হলের শিক্ষার্থীরা৷

পরে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে ছাত্রলীগের নেতারা হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদারকে সেখানে নিয়ে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষমা প্রার্থনার জন্য চাপ দেওয়া হয়৷ এ সময় হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ কর্মীদের কাছে ক্ষমা চান। এরপর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে তাদের কোন প্রকার মারধর করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন তারা৷

এদিকে কয়েকজন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো রাজাকারের নাতিপুতিরা কোটা পাবে? দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা মর্মাহত হয়ে হলে হলে স্লোগান দিয়েছে। যেখানে আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন করে যাচ্ছি সেখানে প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে রাজাকারের বাচ্চা বলে আখ্যায়িত করেছেন, যা আমাদের জন্যে লজ্জার। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা হলে হলে স্লোগান দিয়েছে এ জন্য ছাত্রলীগ কোন শক্তিতে তাদের জেরা করে!’

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ‘রাত ১১টায় আমরা খবর পাই আমাদের কয়েকজন আন্দোলনকারী সহযোদ্ধাকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা খবর পেয়ে সহকর্মীদের উদ্ধার করতে এসেছি। কোটা আন্দোলন সারাদেশের শিক্ষার্থীদের একটি যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। এ আন্দোলনে অংশ নিয়ে কেউ যদি নির্যাতনের শিকার হয় তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে৷’

এ সময় সামগ্রিক ব্যাপারে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘হলের সামনে শিক্ষার্থীদের মিছিলের কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ আগে হলে এসেছি৷ তবে ঘটনা বিস্তারিত বুঝতে পারিনি। সম্ভবত কোনো স্লোগান দেয়াকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে৷ আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।’