বিপ্লবের মায়ের প্রশ্ন, পরিবারের হাল ধরবে কে?
আমার ছেলে পড়াশোনার পাশাপাশি মিলে চাকরি করতো। সকালে নাশতার জন্য আমার থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বাজারে যায় সে। এরপর লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। এখন পরিবারের হাল ধরবে কে? কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বিপ্লব হাসান (১৯) এর বিষয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন তার মা বিলকিস বেগম।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের চূড়ালি গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে বিপ্লব হাসান (১৯)। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে বিপ্লব সবার বড়। সে স্থানীয় মোজাফফর আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। দুই বোনের মধ্যে একজন অষ্টম ও আরেকজন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে বিপ্লব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওইদিনই হাসপাতাল থেকে বিপ্লবের মরদেহ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বিপ্লবের বাবা বাবুল মিয়া একটি ওয়ার্কশপ চালাতেন। কয়েক বছর আগে তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ যোগানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষাণী মিলে চাকরি নেন বিপ্লব।
গত ২০ জুলাই কৃষাণী মিলে দুপুরের শিফটে বিপ্লবের ডিউটি ছিল। ওইদিন সকালে নাশতা করার জন্য মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বাড়ির সামনে কলতাপাড়া বাজারে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর কোটা আন্দোলন ঘিরে কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিপ্লব হাসান।
সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিপ্লবের বাড়িতে সুনশান নিরবতা। বাড়ির সামনেই ছেলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন তার বাবা-মা। স্বজনরা জানান, বিপ্লবদের সম্বল বলতে দুই শতাংশ জমি ঘর-ভিটেটাই। অভাবের সংসারে ছেলেটা চাকরি করে কিছু হাসি ফুটিয়েছিল। এখন তো তাদের সব শেষ হয়ে গেল।
বিপ্লবের মা বিলকিস বেগম বলেন, সংঘাতের খবর পেয়ে সড়কে গিয়ে দেখি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের কাছে ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বাজারের দোকানের পেছন দিয়ে ছেলের কাছে যেতে যেতে ও চোখের আড়াল হয়ে যায়। একটু পরেই দেখি গাড়ি দিয়ে গুলিবিদ্ধ বিপ্লবকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছেলে অপরাধ করলে তার বিচার করতো। কিন্ত গুলি করে মেরে ফেললো কেন?। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই।
বিপ্লবের বাবা বলেন, ঘটনার দিন সিলেট ছিলাম। আগের রাতে বিপ্লব ফোন করে বলে বাবা দেশের পরিস্থতি ভালো না, তুমি নিরাপদে থেকো। আমাকে নিরাপদে থাকার কথা বলে বিপ্লব পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলো। বিপ্লবের মরদেহ মাথা, ঘাড় ও পেটে গুলির ছিদ্র ছিল। আমি এই ঘটনায় মামলা করবো না, মামলা করলেই কি আর ছেলে ফিরে আসবে?