শেষ কবে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে জানেন না বনশ্রীবাসী

  • জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে

মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন জোবায়ের হোসেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) খিলগাঁও এলাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে দীর্ঘদিন ধরে বৃদ্ধ মা ও দুই ভাই নিয়ে বসবাস তার। বর্ষা শুরু হওয়ার পর এডিসবাহী ডেঙ্গু আক্রান্তের আতঙ্কে কাটছে দিন। তার অভিযোগ, সিটি করপোরেশন এখানে শেষ কবে মশার ওষুধ দিয়েছে জানেন না তিনি।

জোবায়ের হোসেন মত একই অভিযোগ এই এলাকায় বসবাস করা নাগরিকদের। তারা বলছে, গত বছর দক্ষিণ বনশ্রীর প্রতিটি বাসাতে কেউ না কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। সিটি করপোরেশন কখনো নিয়মিত এখানে ওষুধ ছিটায়নি । মাসে এক, দু'বার দিয়েছে হয়তো। গত বছর থেকে দেশে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রামণ ও মৃত্যু নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে এই এলাকার বাসিন্দাদের।

বিজ্ঞাপন

তবে এই অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে লাইভ মনিটরিং দেখছি খিলগাঁও ও বনশ্রী এলাকায় ওষুধ ছিটানো হয়েছে। আমরা ৭৫টি ওয়ার্ডের মশক ওষুধ দেওয়ার কার্যক্রম নগর ভবনের কন্ট্রোল রুম থেকে দেখি। মশক নিধনের কার্যক্রমে যারা জড়িত তাদের ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩২০ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশনের মধ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ে এগিয়ে আছে দক্ষিণ সিটি। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে দক্ষিণ সিটিতে ১৪শ ৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যুবরণ করেছে ৩০ এর অধিক।

বিজ্ঞাপন

সিটির বাসিন্দাদের ডেঙ্গুর ভয়াল থাবাকে বাঁচাতে নতুন অর্থবছরে মশক নিধনে বাজেট ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় এক কোটি টাকা কম।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত, রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা মশক নিধনে খরচ করলেও কার্যত কোন সমাধান হচ্ছে না। জনসাধারণের সচেতনতার ঘাটতি আছে বলে মনে করেন তারা। তবে মশক নিধনে সিটি করপোরেশন গাফিলতি আছে অনেক।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন মালিহা আফরিন। পরিবারসহ দক্ষিণ বনশ্রীর কে ব্লক ২০ নম্বর রোডে বসবাস করেন তিনি। মশার ওষুধ কবে দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি স্মরণ করতে পারছেন না শেষ কবে সিটি করপোরেশনের লোকজনেরা ওষুধ ছিটিয়েছে।

বেসরকারি চাকরিজীবী জোবায়ের হোসেন ও মালিহার আফরিনের অভিযোগের বিষয়ে ডিএসসিসির ২ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর আনিসুর রহমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন বার্তা২৪.কমের এই প্রতিবেদক । কিন্ত তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।

খিলগাঁও এলাকার দক্ষিণ বনশ্রীতে আবাসিক এলাকা হওয়ায় এলাকারবাসীর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও প্রতিবছর কোরবানির ঈদে হাট বসানো হয়। হাটের ময়লা সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয় না বলে দাবি করেন এলাকাবাসী। ফলে হাট পরবর্তী সময়ে এলাকাটিতে মশার উৎপাত বেড়ে যায় কয়েকগুণ। সেই সাথে বর্ষায় অতিবৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকায় এডিস মশার লার্ভা বৃদ্ধি পায়। এসময় সিটি করপোরেশন মশক নিধনের কার্যকর কোন ভূমিকা রাখে না বলে জানান এলাকাবাসী।

এবিষয়ে ডিএসসিসি ২ নম্বর অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিদিন সকালে লার্ভি সাইড ওষুধ, বিকেলে ফগিং মেশিন দিয়ে ধোঁয়া দিয়ে থাকি। আমাদের প্রত্যকটি ওয়ার্ডে মশক নিধন কর্মী রয়েছে। তারা বাই রোটেশেন করে প্রতিটি এলাকায় তিনদিন চারদিন পর পর ওষুধ দিয়ে থাকে।

বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতি ওয়ার্ডে বাইসাইকেল করে ওষুধ ছিটানো হয় সেই রিপোর্ট আমার কাছে আসে। আমি জানি না কেন এটা হয়েছে, কোন গ্যাপ হওয়ার কথা না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি গাফিলতি থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব মতে গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ মানুষ। তারমধ্যে রাজধানী ঢাকায় আক্রন্ত হয়েছে ৫০ হাজার। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৯শ জনের। ঢাকায় মৃত্যু হয়েছে ১২শ জনের। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে রাজধানীতে সবচেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে।