অসহযোগ আন্দোলনেও স্বল্প দূরত্বে চলবে রেল
দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতের ঘটনা ও কারফিউ জারিতে বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। দীর্ঘ ১৪ দিন বন্ধের পর শুরু হয় স্বল্প দূরত্বে রেল চলাচল। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তবে এই অসহযোগ আন্দোলনেও শিডিউল মেনে স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ।
শনিবার (৩ আগস্ট) কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বার্তা ২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আনোয়ার হোসেন বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও আমাদের শিডিউল মেনে স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলাচল করবে।
এর আগে টানা ১৪ দিন বন্ধের পর গত বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) থেকে স্বল্প দূরত্বের রেল চলাচল শুরু হয়। তার আগে গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রেল মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ট্রেন চালু করার বিষয়ে এক সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত।
সরদার সাহাদাত বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে কারফিউ শিথিলের সময় স্বল্প দূরপাল্লার ট্রেন সীমিত আকারে চলবে। এলাকাগুলো হলো—ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-জয়দেবপুর।
তিনি বলেন, এখনই আন্তঃনগর ট্রেন চলবে না। কারফিউয়ের কারণে আন্তঃনগর সময়মতো চলাচল করতে পারবে না। তবে পরিস্থিতি ঠিক হলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে।
এদিকে সরকারি চাকুরিতে স্থায়িভাবে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। দফায় দফায় অবস্থান কর্মসূচি শেষে রোববার (৬ জুলাই) থেকে শুরু হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি। রবি ও সোমবার টানা কর্মসূচি পালনের পর মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবারের কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা। বুধবারের কর্মসূচি শেষ করে বৃহস্পতিবার কর্মসূচি ঘোষণা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতৃবৃন্দরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক দফা দাবিতে সারা দেশে পালিত হয় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি।
‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলা ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে বুধবার (১৭ জুলাই) কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা দেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ওপর পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করছি।
এ অবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বৃহস্পতি বার (১৮ জুলাই) ঢাকাসহ সারা দেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। একই সঙ্গে মোতায়েন করা হয় র্যাব পুলিশ সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর সদস্যদের।
তবে গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীদের ডাকা 'কমপ্লিট শাটডাউন' ঘিরে সৃষ্টি হয় সহিংসতা। রণক্ষেত্রে রূপ নেয় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় চালানো হয় হামলা। আগুন দেয়া হয় সরকারি গাড়ি, পুলিশ বক্সসহ সরকারি ভবনে। ভাঙচুর করা হয় নগরবাসীর যাতায়াতের দ্রতগামী যান মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনেও।
একই দিনে একই সঙ্গে রাজধানীর নাখালপাড়া রেলগেট এলাকায় কোট আন্দোলনকারীরা রেললাইনের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করলে জননিরাপত্তার স্বার্থে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এ ঘটনায় সহিংসতা ঘিরে আহত হয়ে প্রাণ হারান গণমাধ্যমকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকরী বাহিনীর সদস্য, পথচারী, কর্মজীবী মানুষসহ আন্দোলনকারীরাও।
প্রসঙ্গত, ৫ জুন সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানি হয়, আপাতত আগের মতোই বহাল থাকছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। তাই পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পালিত হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন।