অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘দেশের অনকে জায়গায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। এগুলো ধর্মীয় কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে। তবে এরমানে এই নয় যে, রাজনৈতিক কারণে সংঘাত, হামলা, ভাঙচুর করা যাবে। তবে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে একটু বেশি নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সেটা আমরা চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ধর্ম ভিত্তিক যেসব দল আছে তারাও তাদের (সংখ্যালঘুদের) নিরাপত্তা দিতে চেষ্টা করেছে। আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে, প্রত্যেকটা হত্যা বা সংঘাতের দলমত না দেখে সঠিক বিচার করা ‘
বিজ্ঞাপন
রোববার (১১ আগস্ট) বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা সভা করেন।
অন্যান্য দেশের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে আমাদের কাজ। স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায়ে রাখাই আমাদের নীতি। আমরা চাই সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হোক। যাতে দুই পক্ষ লাভবান হতে পারি। আমরা চাইনা শুধু আমরাই লাভবান হবো, অন্যরা লাভবান হবে না।’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আমাদের কাজ হলো প্যারামিটার ঠিক করে দেওয়ার। পরবর্তীতে যারা আসবে তারা বাকি কাজ করবে। আসলে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, চাইলেই যেমন সেবা দিতে চাই, তা পারিনা।’
মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনের সময় কিছু দেশে আমাদের প্রবাসীরা আটক হয়েছে। তারা হয়তো স্থানীয় আইনের ব্যত্যয় করেছে। হয়তো তাদের আবেগের জন্যই আইনের কথা ভুলে গিয়েছে। তবে এরজন্য তো ওইসব দেশকেও দোষারোপ করতে পারিনা। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, তাদের যেন শাস্তি পেতে না হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে সবচেয়ে কম বেতন পায়। এটাও আমাদের দোষের জন্যই। আমাদেরকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে, যেন আমাদের শ্রমিকরা ভালো বেতন পায়।’
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয়। আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এই ভবনটি বছরখানেক আগেই উদ্বোধন করেন দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের বছর পেরোতেই এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এই কার্যালয়টি।
উদ্বোধনের পর থেকেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতিতে কার্যালয়টি সরগরম থাকতো দিন রাত ২৪ ঘণ্টায়। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে জনরোষে পড়ে এই ভবনটি। উত্তেজিত জনতা সেদিন কার্যালয়টি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেই।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কার্যালয়টির বর্তমান অবস্থা দেখতে গেলে এমনই চিত্র পাওয়া যায়। যদিও বাহির থেকে গেইট দুটি আটকে রাখা হয়েছে তারপরও বাহির থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো উত্তেজিত জনতার কতটা আক্রোশের মুখে পড়েছিলো এই ভবনটি। ভাঙচুর ও আগুনের লেলিহান শিখায় কঙ্কালসার হয়ে পরেছে ভবনটির কাঠামো।
এদিন দেখা যায়, কার্যালয়টির মূল ফটক অক্ষত থাকলেও কর্মীদের প্রবেশের জন্য যে ফটকটি নির্ধারিত ছিলো সেটির কোন অস্তিত্ব নেই। ফলে ককশিট ও বাঁশ দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে ফটকটি। এক সময়ের ব্যস্ততম এই কার্যালয় এখন জনমানবহীন।
দলের মন্ত্রী-এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আসা যাবার পথ নির্বিঘ্ন রাখার জন্য কার্যালয়ের সামনের রাস্তাটি সবসময় ফাঁকা করে রাখা হতো। থাকতো পুলিশ সহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। তবে এসবই এখন অতীত।
সড়কটি এখন ট্রাক মালিকদের দখলে। ফুটপাত দখল করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন দোকানপাট। কার্যালয়টিতে প্রবেশের মত স্থানও আর অবশিষ্ট নেই। আওয়ামী লীগের এমন আকষ্মিক পতনে মানুষ তার নিজস্ব প্রয়োজনে অতীতের খাতায় ফেলে দিচ্ছে তাদের যত সৌর্য-বীর্য।
কার্যালয়টির মূল ফটকের পাশ ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকান। এরকমই একটি সদ্য গড়ে উঠা চায়ের দোকানে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। বার্তা২৪.কম কে তিনি বলেন, 'এই রাস্তাটা সবসময় নেতাকর্মীরা দখল করে রাখতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপাচাপিতে দাঁড়ানোটাও ছিলো দুরুহ। এখন এখানেই চায়ের দোকানে গড়ে উঠেছে, সেখানে বসে চা খাচ্ছি।'
এই যে দোকান দিচ্ছেন, সামনে এতো ট্রাক দাড় করিয়ে রাখছে কেউ কিছু বলছে না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বার্তা২৪.কম কে বলেন, 'এইখানে তো আর আগের মত নেতাকর্মীর আসে না। পুলিশও এইদিকে আসে না। রাস্তাটা খালিই থাকে তাই ট্রাক এখানে এনে রেখে দেয়। আমিও দোকান দিছি। এখনো কোন সমস্যা হয়নি।'
এর আগে গত ৬ আগস্ট কার্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙচুর করে নিয়ে যায় চেয়ার টেবিলসহ গুরুত্বপূর্ণ সব আসবাবপত্র। পরে আগুন লাগিয়ে দিলে পুড়ে যায় সব কিছু। সে পোড়া ধ্বংসস্তূপ খুঁজে কিছু মানুষ বের করছেন লোহা ও অন্যান্য ধাতপ পদার্থ।
স্টিলের স্ট্রাকচারের উপর নির্মিত এই আধুনিক স্থাপত্যের ভবনটি আগুনের তান্ডবে কঙ্কালসার দাঁড়িয়ে আছে। পুড়ে গেছে দ্বিতীয় তলার সেমিনার হলের স্টেজও। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে রক্ষা পায়নি একমাত্র লিফটটিও। পুড়ে যাওয়া এসব জিনিস ভেঙে লোহাসহ ধাতপ অংশটুকু ভেঙে নিচ্ছিলেন টোকাইরা।
এর আগে, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। তার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে পরে এসব স্থাপনা।
এদিন, দুপুরের পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ধানমন্ডি ৩ নম্বরে দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, তেজগাঁও ঢাকা জেলা কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
আহতরা হলেন, ঢাকা কলেজের মশিউর রহমান (১৭), আব্দুল্লাহ (১৮), তৌহিদুর রহমান তানভীর (১৭), বাদল (১৭), সামির (১৫), তাহমিদ সালেহ (২১), আব্দুল্লাহ (১৮), আরিফ (১৯), শামীম (১৭), বখতিয়ার (১৮), মো শামীম (১৭), নিশাত (১৬), হুজাইফা (২৩), ইয়াসিন (১৮) ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী উসাইব (১৮)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, আজ ঢাকা কলেজের নবীন বরণের অনুষ্ঠান ছিল। নবীন বরণ অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীরা বের হলে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কলেজের ভেতরে ঢুকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিকে আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ক্যাম্পাসে এসে ভাঙচুর করে এবং আমাদের কলেজের বিলবোর্ড খুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, ঢাকা কলেজে আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন। আহতরা অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। আরও অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গাজীপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মালবাহী ট্রাকের চাপায় পোশাক কারখানার দুই শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিক ও জনগণ ট্রাকটিতে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক স্বাভাবিক হয়। শুরু হয় যানবাহন চলাচল।
এর আগে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে জেলার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলাধীন হরিণহাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ওই স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে স্টারলিং নামে ওই কারখানায় দুপুরের বিরতি দিলে শ্রমিকরা খাবার খেতে বের হন। এসময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পার হবার সময় উত্তরবঙ্গগামী মালবাহী একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে শ্রমিকদের চাপা দেয়। এতে মূহুর্তেই ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হয়। গুরুত্বর আহত হয় আরও ৩ জন। আহতদের মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে কারখানার অন্যান্য শ্রমিক ও স্থানীয়রা ট্রাকটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। উত্তপ্ত পরিস্থিতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনা সদস্যরা গিয়ে তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কালিদাস পাহালিয়া নদীর (সিলোনিয়া নদী) তীরবর্তী এলাকা নদী ভাঙনের মাত্রা তীব্রতর হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মনে ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা প্রবল হয়েছে।
ইতোমধ্যে ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে বেশ কয়েক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে এসেছেন। স্থানীয় আরও ৩ শতাধিক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, নবাবপুরের ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ড রয়েছে কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরবর্তী অংশে। নদীর এ তীব্র ভাঙনের মুখে রয়েছে ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর, উত্তর রঘুনাথপুর, মজুপুর মুখের টেক এলাকা। এবারের ভয়াবহ বন্যায় ইউনিয়নের এসব এলাকা ৬ফুট থেকে ৮ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। পরে ২৮ আগস্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করলে নদীর তীরে বড় বড় ফাটল দেখা দিতে থাকে। এরপর পানির স্রোতের কারণে প্রতিদিন তীরের মাটি ভেঙে বিলীন হতে থাকে নদীগর্ভে।
ভাঙন কবলতি এলাকাগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মজুপুরের শুক্কর আহম্মদ, শাহাদাত, মফিজের ভিটেমাটিসহ ৭টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং শাহাবুদ্দিন, অটোরিকশা চালক হোসেন, জসিমের ঘরবাড়িসহ ৩০টি বেশি বাড়ির আঙিনা ইতোমধ্যে ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রসহ অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন তারা। এছাড়াও রঘুনাথপুরে আমিরাবাদের বেঁড়িবাঁধ ইতোমধ্যে রাস্তাসহ ভেঙে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ নদীর আগ্রাসী ভাঙনে সব হারানোর শঙ্কা প্রবল হয়ে ওঠেছে। কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর নির্মিত নবাবপুর ব্রিজটি নবাবপুর থেকে কসকা যাওয়ার একমাত্র আঞ্চলিক সংযোগ সড়ক। ইতোমধ্যে ব্রিজটির চারপাশ ভেঙে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ব্রিজ সংলগ্ন পূর্ব সুলতানপুরে সংযোগ সড়কটিও ইতোমধ্যে নদীর স্রোতের কারণে ১২ ফুট ভেঙে গেছে এবং স্থানীয় আব্দুল মান্নানের বসত ঘরসহ ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর পাড়ের ১২০টি পরিবার। এর মধ্যে গুচ্ছ গ্রামের পরিবার রয়েছে ৭৭টি। সুলতানপুরের সংযোগ সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হলেও ভাঙন স্থান দিয়েই পায়ে হেঁটে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে মানুষ।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা জাকির আহম্মদ বলেন, নদী ভাঙনের যে ভয়াবহতা দেখছি, মনে হচ্ছে আমার বাড়িটিও ভেঙে যাবে। আমার দুই সন্তানের জন্য প্রায় কোটি টাকা খরচ করে দুটি দালান নির্মাণ করেছি বেশ কয়েকবছর আগে। এগুলো এখন ইচ্ছে করলেও সরাতে পারব না। শুধু আমরা নয়, পূর্ব সুলতানপুরের নদীর পাড়ের আদর্শ গ্রামে (গুচ্ছ গ্রাম) এরশাদের আমল থেকে ৭৭টি অসহায় পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। সেই পরিবারগুলোও ঝুঁকিতে রয়েছে।
সুলতানপুরের আব্দুল মান্নান বলেন, নদী আমাদের থেকে কিছুটা দূরে ছিল। এখন কূল ভেঙে বাড়ির আঙিনায় চলে এসেছে। প্রবাসে থেকে আমি এই বাড়িতে ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে বসতঘর নির্মাণ করেছিলাম। এই বাড়িটি ছাড়া বাইরে কোনো জায়গা- জমি না থাকায় এই ভাঙন পরিস্থিতিতে আমি বিপদের মধ্যে আছি।
নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির জানান, আমার ইউনিয়নে তিনটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নদীর কূলের ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের বাড়িঘর-আঙিনা ভেঙে গেছে তাদের অনেক পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে এবং নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। আশা করছি ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, বন্যার পানির চাপ মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীনের পর ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীর ফ্লুইজ গেইট, তেল্লার ঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনীপাড়া, চরচান্দিয়ার সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, বগদানানার আলমপুর, আউরারখিল, চর মজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট কাটাখিলা, কালিমন্দির, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাদামতলী, গুচ্ছগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে আনেকে ঘর-বাড়ি রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন।