কবে চালু হবে বিআরটিএর কার্যক্রম, জানা নেই কারো!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি:সংগৃহীত

ছবি:সংগৃহীত

কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে গত জুলাই মাসের ১৮ তারিখে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী বনানীর বিআরটিএর প্রধান কার্যালয় এবং মিরপুরে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডেটা সেন্টার। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে এখনো গ্রাহক সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারেনি সংস্থাটি। কবে চালু হবে সে সম্পর্কেও নেই কোনো স্বচ্ছ ধারণা। 
কর্মকর্তারা বলছেন, বনানীর প্রধান কার্যালয়ে থাকা বিআরটিএর মূল সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা কোন গ্রাহক সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারছেন না। সার্ভার ঠিক হলে আবারও চালু হবে সেবা কার্যক্রম। তবে কবে নাগাদ চালু হবে সে কার্যক্রম, ধারণা নেই তাদের।
বিআরটিএর সার্ভার সমস্যায় বন্ধ আছে মোটরযানের ফিটনেস, ট্যাক্স-টোকেন, রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ সকল কার্যক্রম। যে কারণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া এক প্রজ্ঞাপনে এই সময়ের মধ্যে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া মোটরযানের ফিটনেস, ট্যাক্স-টোকেন, রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতার মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো। তবে এ সময় নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, মালিকানা বদলি এবং নতুন যানবাহনের নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। 
প্রজ্ঞাপনে সংস্থাটি জানায়, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী ১৬ জুলাই থেকে যেসব গ্রাহকের মোটরযানের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, অগ্রিম আয়কর, রুট পারমিট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন সংক্রান্ত কাগজপত্রের মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়েছে অথবা ১৫ সেপ্টেম্বর অতিক্রান্ত হবে সেগুলোর মেয়াদ ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হলো।
সরেজমিনে সোমবার (১২ আগস্ট) সকাল ৯টা নাগাদ মিরপুর ১৩ নম্বরে বিআরটিএ সার্কেল-১ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের সামনে দায়িত্ব পালন করছেন কয়েকজন আনসার সদস্য। ফটকের ভিতরে হাতের বামের এক তলা পুড়ে যাওয়া বিল্ডিংয়ের সামনে তাবু টাঙ্গিয়ে বসে আছেন আরও কয়েকজন আনসার সদস্য। এর সাথে আরেকটি লাগোয়া তাবু টাঙ্গানো, সেখানে কর্মকর্তাদের বসার কথা থাকলেও বেলা এগারোটা পর্যন্তও আসেননি কেউ। 
এসময় মূল ফটকের বাহিরে অনেক সেবাগ্রহীতাকেই এসে ফিরে যেতে দেখা যায়। তেমনই একজন বিপু। তার ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৭ আগস্ট, তাই রিনিউ করতে এসেছিলেন, তবে কার্যক্রম চালু না হওয়ায় ফিরে যাচ্ছেন। বার্তা২৪.কম কে বিপু বলেন, ‘ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ তাই আসছিলাম রিনিউ করতে কিন্তু এখন দেখি কার্যক্রম চালু হয়নি তাই ফিরে যাচ্ছি’।
গুলশান নতুন বাজার থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়াতে আসছেন জয়নাল। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করেন। প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো পাননি স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স। তাই ক’দিন পর পরই আসতে হয় মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে। এসে দেখেন কার্যক্রম বন্ধ, তাই অনেকটা হতাশ হয়েই ফিরে যাচ্ছেন তিনি। 
শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স ই নয়, তার অভিযোগ বিআরটিএর সব কার্যক্রম নিয়েই। বার্তা২৪.কম কে জয়নাল বলেন, বিআরটিএ তে হয়রানির কোন শেষ নাই। যে কোন কাজে এসেই সিরিয়ালে পড়লে জীবন শেষ হয়ে যায়। আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য দুই বছর আগে জমা দিয়ে রাখছি কিন্তু এখনো স্মার্ট কার্ড পাইলাম না। অথচ আমার পরে জমা দিয়ে অনেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে।    
এসময় আনসার সদস্যদের কাছে বিআরটিএর অফিস পুড়ে যাওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে কথা বলতে চাননি কেউ। তবে পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আনসার সদস্য বার্তা২৪.কম কে বলেন, দুর্বৃত্তরা গেটের উপর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে হামলা চালায়। হামলাকারীরা একদিকে লুটপাট চালায়, অন্যদিকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে পুরো কার্যালয়টিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। 
হামলায় এক নম্বর, দুই নম্বর ভবন, নতুন ও পুরাতন ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাট করে, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় তিনটি গাড়ি। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে রুট পারমিটসহ অন্যান্য শাখার বেশকিছু মূল্যবান রেকর্ডপত্রও।
এদিন সরেজমিনে গিয়েও দেখা যায়, মূল ফটকের সাথে লাগোয়া এক তলা বিল্ডিংয়ে দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব কিছু। এর পাশেই থাকা আনসার ব্যারাকের সব গ্লাস ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে নতুন ও পুরাতন ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টারে। বাদ যায়নি বিআরটিএর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার জন্য নির্ধারিত ভবনটিও। সেখানে পুড়ে যাওয়া মালামাল পরিষ্কার করতে দেখা যায় কর্মীদের। সেই সাথে আগুনের ধোয়ায় কালো বর্ণ ধারণ করা দেয়ালও পরিষ্কার করে রঙ লাগানোর উপযুক্ত করছেন কারিগররা।
বিআরটিএর কার্যক্রম কবে চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উপ-পরিচালক স্বদেশ কুমার দাস বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমরা কবে কার্যক্রম চালু করতে পারবো এখনো বলতে পারছি না। আমাদের ডেটা সেন্টারে সমস্যা হওয়ায় কার্যক্রম চালু করতে পারছি না। ডেটা সেন্টার চালু হলেই আমরা কার্যক্রম শুরু করে দিবো। 
আগুনে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হিসেব অনুযায়ী ১৯ কোটি ৪৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮০৫ টাকার সমপরিমাণ আমাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আপনারা কতদিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উচ্চপদস্থ কারো সাথে কথা বলতে বলেন। 
পরে প্রায় ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও উচ্চপদস্থ কাউকে আসতে দেখা যায়নি। বিআরটিএ তে কাউকে না পেয়ে বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে ফোন দিলে, তাকে ফোনেও পাওয়া যায়নি।