১৫ আগস্ট ঘিরে সক্রিয় হতে চায় আওয়ামী লীগ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ১৫ বছর পর সরকার পতনের ফলে রাজনৈতিকভাবেও ভেঙে পড়ে দলটি। নড়বরে হয়ে পড়া দলটিকে দাড় করানোর লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ১৫ আগস্টে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ১৫ আগস্ট ঘিরে শোক দিবস পালনের লক্ষে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সর্বোচ্চ জনসমাগমের চেষ্টা করা হবে। এদিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শোক র্যালী, বনানী কবরস্থানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সমাগম ঘটানোর চেষ্টা করবে দলটি।
আগস্ট মাসকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো শোকের মাস হিসেবে পালন করে থাকে। ১৯৭৫ সালে এই মাসের ১৫ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিলো স্বপরিবারে। এছাড়াও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার চালানো হয়েছিলো গ্রেনেড হামলা। এসব কারণে আগস্ট মাস এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে আওয়ামী লীগের কাছে। ফলে মাস ব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে আগস্ট মাসকে শোকের মাস হিসেবে পালন করে আসছিলো দলটি।
সে ধারাবাহিকতায় এবারও বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলো আওয়ামী লীগ। তবে সরকার পতনের ফলে পালটে যায় পরিস্থিতি, দেশ-বিদেশে আত্নগোপনে চলে যান দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আত্মগোপনে থাকলেও এবার অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত, দলের পদ-পদবি নেই কিন্তু সমর্থক এমন নেতাকর্মীদের মাধ্যমে মাঠে থাকতে চায় দলটি। সে লক্ষ সামনে রেখে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডিতে বড় জমায়েতের আশা আওয়ামী লীগের। তাই সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের এখানে এসে জড়ো হবার নির্দেশ হাইকমান্ডের।
দিনটি ঘিরে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিষয়ে আত্মগোপনে থাকা দলটির এক সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমরা ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবো। এদিন আমাদের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমাগমের আশা করছি। এছাড়াও আমরা বনানী কবরস্থানেও শ্রদ্ধা জানাবো। সারা দেশব্যাপী মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক অডিও বার্তায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘সবাই ঢাকায় চলে আসবে, মৌনমিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবনে ফুল দিতে হবে। বাংলাদেশের সব এলাকা থেকে ঢাকায় এসে ফুল দিতে হবে। যাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তাদের থানায় জিডি করতে হবে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা ১৫ আগস্টের কর্মসূচি পালন করবেন। আমরা এ দিন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবো। এছাড়া কালো ব্যাজ ধারণ, মিলাদ মাহফিলের ও আয়োজন করা হবে।
সরকারে না থাকলে যে দল থাকবে না, এটি ঠিক নয় উল্লেখ দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য আমরা রাজপথ থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছি, তারপরও আমরা সক্রিয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে দেখবেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠ দখলে নিয়েছে। আমরা আগামীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামব।
উল্লেখ্য, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্লাটফর্মে সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গড়ে উঠা তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের। এর আগে, ২০০৯ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা চারবার সরকার গঠন করে দলটি। চতুর্থ দফা সরকার গঠনের আট মাসের মাথায় পতন হলো আওয়ামী লীগের।