লক্ষ্মীপুরে সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্স বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকালে সিএনজি চালকদের হামলায় তিন পুলিশসহ চার জন আহত হয়েছেন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে পৌর শহরের বাগবাড়ি এলাকার মেঘনা সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

আহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছেন, পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক সবুজ মিয়া, ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল ঝুটন ভট্টাচার্য, টারজান বড়ুয়া ও একজন সিএনজি চালক। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফিটনেস ও লাইসেন্স বিহীন সিএনজিসহ সড়কে বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে সকাল থেকে শহরের বাগবাড়ি এলাকার মেঘনা সড়কে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান শুরু করে। এসময় বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি সিএনজি জব্দ করে পুলিশ।

এ ঘটনার জেরে সিএনজি চালকরা বিক্ষুব্দ হয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক সবুজ মিয়া, ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল ঝুটন ভট্টাচার্য, টারজান বড়ুয়া আহত হন। পরে সিএনজি চালকরা লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এতে এক ঘন্টা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে সিএনজি চালকরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে সড়কে সিএনজি চালাতে হলে তাদের মাসোহারা দিতে হয়। অভিযানের নামে সড়কে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় গাড়ি আটকিয়ে টাকা আদায় করা হয়। আজ কোন অজুহাত ছাড়াই কয়েকটি সিএনজি আটক করে মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ। এর জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, ফিটনেস ও লাইসেন্স বিহীন পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা চালায় চালকরা। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। কী কারনে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ১৬ বছর ধরে পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখে মানবাধিকার হরণ করার অভিযোগ উঠেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে ‘মহিলা আনজুমান’ নামে পর্দানশীন নারীদের একটি সংগঠন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে পর্দানশীন নারীদের এনআইডি বঞ্চিত করে মানবাধিকার হরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মহিলা আনজুমান। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।

মহিলা আনজুমানের আহ্বায়ক শারমিন ইয়াসমিন গণমাধ্যমকে বলেন, মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই। গত ১৬ বছর যাবত ইসির কতিপয় স্বৈরাচারী কর্মকর্তা শুধু মুখচ্ছবির অজুহাতে পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখেছেন, যা এক প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ। এতে পর্দানশীন নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট করছেন।

মহিলা আনজুমানের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় অধিকার এবং নিরাপত্তা অধিকার অক্ষুণ্ন রেখে এনআইডির দাবি জানান এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি না মানলে দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাঠে নামবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

শারমিন ইয়াসমিন আরও বলেন, আমি আমার চেহারা কাউকে দেখাব না, এটা আমার গোপনীয়তা বা প্রাইভেসির অধিকার। পর্দানশীন নারীদের এ দাবি শুধু ধর্মীয় অধিকারের মধ্যে পড়ে না, প্রাইভেসির অধিকারের মধ্যেও পড়ে। ফলে দুই দিক থেকেই পর্দানশীন নারীদের দাবি মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, এনআইডি ছাড়া পর্দানশীন নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক পর্দানশীন নারী অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। কিন্তু এনআইডি ছাড়া ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলে তিনি চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারতেন। অনেক পর্দানশীন নারীর দুর্ঘটনায় বাড়িঘর আগুনে পুড়ে গেছে।

এনআইডির ছাড়া ত্রাণ নিতে পারছেন না। অনেক বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত পর্দানশীন নারী এনআইডির অভাবে বাসা ভাড়া করতে পারছেন না। বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। পর্দার সঙ্গে কোনো চাকরি করে জীবন নির্বাহ করতে পারছেন না। গত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের সাবেক ইসি কর্মকর্তারা যে কষ্ট দিয়েছেন তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।

জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে বলেন, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। গত ১৬ বছর শুধু পরিপূর্ণ পর্দা করার কারণে নারীদের সঙ্গে যে বৈষম্য হয়েছে, আমরা এ বৈষম্যের পরিসমাপ্তি চাই। অবিলম্বে পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুণ্ন রেখে এনআইডি দেওয়া হোক। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এবং ২০২৩-এ পরিচয় শনাক্তে চেহারার ছবির কথা উল্লেখ নেই। এমনকি বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে ফেসিয়াল রিকগনিশনকেও বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিন্তু তারপরও স্বৈরাচারী মনোভাব থেকে পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করে রেখেছিলেন সাবেক ইসি কর্মকর্তারা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া স্মারকলিপিতে তিনটি দাবি জানিয়েছে মহিলা আনজুমান। সেগুলো হলো বিগত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের মানবাধিকার হরণ করা ইসি কর্মকর্তাদের বিচার করা হোক; পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুণ্ন রেখেই এনআইডি প্রদান করা হোক; পর্দানশীন নারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ায় মহিলা অফিস সহকারী বাধ্যতামূলক করা হোক।

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চেকপোস্টে তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে এ ঘটনার পরপর দুজনকে আটক করা হয়।

তারা হলেন- মোরশেদ খান (৩১) ও মো. করিম (৩৮)। তারা ওই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন। 

জানা যায়, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যানবাহনে তল্লাশি চালানোর সময় পাঁচজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন অভিযুক্তরা। একপর্যায়ে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে চিৎকার করে বিষোদগার শুরু করেন এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হন।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ জানান, হামলায় পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তারা হলেন- উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) অসিত নাথ, কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার, আমিরুল ইসলাম ও ফরিদ শেখ।

তিনি আরও জানান, পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাজে বাধাদান, আক্রমণ এবং পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

প্রত্যাশিত সংস্কার করতে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আইন বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলোর চারটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা প্রতিবেদন জমা দেয়। সে বিষয়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন আসিফ নজরুল।

• 'সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করবে সরকার'

আইন উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেগুলো করতে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। 

তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনগুলোর দেয়া প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের পথে যাবে সরকার। এর জন্য বাস্তবায়ন নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছার ওপর।