উপ-পরিচালকের স্বজনপ্রীতিতে কর্মচারীদের বদলির আবেদনের হিড়িক
গাইবান্ধা জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালকের ওপর অভিযোগ এনে বদলির আবেদন করছেন একের পর এক কর্মচারী।
কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্রের মানসিক অত্যাচার, কৈফিয়ত তলব করে হয়রানি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চাকরিবিধি বহির্ভূত কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলে অধিদফতরের মহাপরিচালকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপ্রত দায়ের করেছে কর্মচারীরা। অভিযোগপত্রে উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী কর্মচারীদের অভয় দিয়ে দ্রুত তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়েছে।
অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, উপপরিচালক প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্র ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারী গাইবান্ধায় যোগদানের পর থেকেই কার্যালয়ের হিসাব রক্ষক মাসুদ পারভেজ ও প্রকল্পে নিয়োগ উত্তম কুমাড়ের যোগসাজসে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। কর্মচারীদের মাঝে সঠিক কর্মবন্টন না করে তার সিন্ডিকেটকে দিয়ে প্রায় সকল কর্ম সম্পাদন করে থাকেন। এছাড়া সামান্যতেই কর্মচারীদেরকে একাধিকবার কৈফিয়ত তলবের মাধ্যমে তাদের বেতন কর্তন, অন্য জেলা/বিভাগে বদলির ভয় দেখিয়ে অফিসে একটা ভীতিকর ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলেই চোখ-রাঙিয়ে, তার আঞ্চলিক ভাষায় ব্যাটা-ব্যাটা সম্বোধন করে গালি-গালাচ করতে থাকেন। কোন কর্মচারী তার পারিবারিক অসুবিধার কারণে নৈমিত্তিক ছুটি/অর্জিত ছুটি চাইলে কিংবা ছুটির ব্যাপারে কথা বলতে গেলেও বিভিন্ন ভাষায় গালি গালাজ করেন এই কর্মকর্তা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে জেলা অফিসের ষাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আল আমিন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আসুতোষ চন্দ্র মোদক ও এমএলএসএস মো. মানিকুজ্জামানসহ তিনজন কর্মচারী নিজ জেলায় চাকরিরত থাকা অবস্থায় অনত্র স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা যায়। তাদের মধ্যে ১১ আগস্টের এক আদেশে ষাট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. আল আমিনকে লালমনিরহাট জেলা কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। অপর দুজনেরর বদলির বিষয়ে এখনো কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন কর্মচারী অচিরেই অন্যত্র বদলীর জন্য আবেদন করবেন মর্মে মনস্থির করেছেন বলে জানা যায়।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে (নিপোর্ট) তৃতীয় ও চতুর্থী শ্রেণির কর্মচারীদের অফিস ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা, শিষ্ঠাচার ও নৈতিকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবস্থা থাকলেও তার গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলার কর্মচারীদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়। যার ফলে জেলা অফিসের কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ বঞ্চিত হয়েই আসছেন। কিন্তু পূর্বে প্রত্যেক প্রশিক্ষণে জেলা উপজেলার কর্মচারীদের সমন্বয় করে প্রশিক্ষণে পাঠানো হতো।
কর্মচারীদের থেকে জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধার অত্র দফতরে সাতজন কর্মকর্তা মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করলেও উপপরিচালক তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহাবুবা খাতুনকে আরো তিনটি উপজেলার (সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ) ক্লিনিক্যাল এবং নন ক্লিনিক্যাল বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন। এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলামকে ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং ডাক্তার না হওয়া সত্বেও দুই উপজেলারই ক্লিনিক্যাল বিভাগের দায়িত্ব দেন । পরে যোগদানের ৫ মাসেও দায়িত্বভার না পেয়ে ওই সাত কর্মকর্তার পাঁচজনই বাধ্যহয়ে স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন জানিয়ে অন্য জেলায় বদলি নিয়ে চলে যান।
এ সব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে উপপরিচালক প্রসেনজিৎ প্রণয় মিশ্র মেবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি আপনার মাধ্যমে প্রথম জানলাম। বিষয়টি না দেখে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে অভিযোগের অনুলিপি পাওয়া পরিবার পরিকল্পনা অফিসের রংপুরের বিভাগীয় পরিচালক মো. এনামুল হক মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।