হাওরের জলে ভাসমান ‘করসবন’, সৌন্দর্যের হাতছানি
চারদিকে পানির মধ্যে সারি সারি গাছ। এর ভেতর দিয়ে ছোট নৌকা দিয়ে ঘোরাঘুরি করছে মানুষ৷ বিশাল জলরাশির হাওরের মধ্যে এই ‘করসবন’ পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ করে৷ গাছের ছায়ায় নৌকায় বসে পানিতে পা ভিজিয়ে ‘মাঝি বাইয়া যাও রে...... অকুল দরিয়ার মাঝে আমার ভাঙা নাও রে মাঝি, বাইয়া জাও রে....... খালি কণ্ঠে গান করছে কেউ কেউ।
এমনই দৃশ্য দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছোট্ট একটি দ্বীপের মতো গ্রাম নিয়ে গঠিত ছাতিরচর ইউনিয়নে। বর্ষায় এই ইউনিয়নে অনেক পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দূর দূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক নৌকা দিয়ে এসেছে এই ছাতিরচর করসবনে। কেউ ছবি তুলছে দলবেঁধে, আবার কেউ হৈচৈ করে পানিতে লাফিয়ে গোসল করছে৷ মুহূর্তের মধ্যে যেন প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দিচ্ছে সবার মনে।
ছোট ছোট নৌকা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন এই বনের ভেতর পেয়ারাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য৷ জলকেলি আর নীরবতার মধ্যে আড্ডায় সময় কাটান আগতরা৷ বড় বড় ঢেউ আর বিরামহীন শীতল হাওয়া মনকে যেন পানির সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূর দিগন্তে৷
হাওরে ঘুরতে আসা বেসরকারি একটি কোম্পানির অফিসার জহিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাওরের মধ্যে এই করসবন সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ উপহার। এখানে এসে আমার দীর্ঘ ক্লান্তি দূর হয়েছে।’
সিলেট থেকে আসা আজহার মাহমুদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাওরের মধ্যে করসবন আরেক বিস্ময়৷ আমরা এখানে এসে সবাই গোসল করলাম৷ চারদিকে ঘুরে দেখলাম। তবে, স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করব এর সৌন্দর্য যেন রক্ষা করা হয়৷ এই বন আরও কীভাবে সম্প্রসারিত করা যায় তার উদ্যোগ নেয়।’
তথ্য সূত্রে জানা যায়, ঘোড়াউত্রা নদীর তীব্র ভাঙনের বুকে গড়ে ওঠা নিকলী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী হাওড়াঞ্চল হলো ছাতিরচর ইউনিয়ন। জমিদারী প্রথা তালুকদারীতে রূপান্তরিত হলে প্রায় ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে কিছু মানুষের বসতি গড়ে ওঠে চরের এই হাওরে। তালুকদারগণ খাজনা আদায়ের জন্য স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ করতেন। আর তাদেরকে উপহার হিসাবে দিতেন একটি করে ছাতা। হাওরে কোনো গাছপালা না থাকায় ছাতা খুব জনপ্রিয় উপহারে পরিণত হয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায়। চরের এই গ্রামটির পূর্ব কোনো নাম না থাকায় আঞ্চলিক ভাষায় গ্রামটির নামকরণ করা হয় ছাতিরচর। আজ ছাতিরচর শিক্ষা থেকে শুরু করে সব দিক দিয়ে এগিয়ে। কালের পরিক্রমায় ছাতিরচর ইউনিয়ন শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খেলাধুল সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার নিজস্ব স্বকীয়তায় আজ সমুজ্জ্বল।