বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেছেন, দেশে যখন অন্যায়গুলো ন্যায়ে পরিণত হয়েছিল, গুম-খুন-ধর্ষণ যখন নিত্তনৈমিত্তিক কর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশে যখন আইয়ামে জাহেলিয়াত ভর করেছিল- তখনই তরুণরা রুখে দাঁড়িয়েছে। তারুণ্য দেখিয়েছে দেশকে কীভাবে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে হয়।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) জেলা শিল্প একাডেমি মিলনায়তনে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্পিরিটকে ধারণ করে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

কাদের বলেন,দেশে ফ্যাসিবাদ আসার পর বাকস্বাধীনতা, ন্যায়-নীতি বলতে কিছুই ছিল না। আমরা দিনের পর দিন মুখ বুঝে সহ্য করে গেছি। যখন সুযোগ এসেছে, দেশের তরুণরা রাজপথে গুলির মুখে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনের মাধ্যমে মাতৃভূমিকে রক্ষা করেছে। এ তারুণ্য সবসময় সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যা আমরা জুলাই বিপ্লবের মধ্যেও দেখিয়েছি।

আব্দুল কাদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আন্দোলন স্তম্ভিত হয়ে যায়, তখন ফেনী-কুমিল্লা-লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় আপনারা আন্দোলন চালিয়ে নিয়েছিলেন। আপনারা আশা ও সাহস জুগিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখেছিল। দেশের ক্রান্তিলগ্নে আমরা কোনো ভাই বা দলমত দেখে মাঠে নামি নাই।

আন্দোলনে শহীদদের স্বরণ করে আব্দুল কাদের আরও বলেন, আমাদের শহীদদের আত্মত্যাগ কখনো ভুলবার নয়। তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তখন নির্মম কাহিনী শুনতে পাই। এমন পরিবারও দেখেছি, শহীদ হওয়া একমাত্র সন্তানই ছিল তাদের আশা-ভরসা। আমাদের ভাইরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য সেই আশা-ভরসাকে কোরবান দিয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হামযা মাহবুবের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক তাসনিয়া নওরিন, আলী আহমেদ আরাফ, জিয়া উদ্দিন আয়ান, সুমাইয়া আক্তার, খালিদ হাসান, মো. মহিউদ্দিন, মুহিদুল ইসলাম রিন্তু প্রমুখ।

এ সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, ফেনীর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে ঢাকা টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক মেহেদী হাসান নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজার আদালতে মেহেদী হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে যাত্রাবাড়ী থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন।

এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান, হারুন অর রশিদ ও বিপ্লব কুমার।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের কাছে গুলিতে ঢাকা টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক মেহেদী হাসান নিহত হন। এ ঘটনার পর শেখ হাসিনা সরকার থাকাকালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে মেহেদী হাসান মারা গেছেন উল্লেখ করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করে পুলিশ।

এদিকে, সরকার পতনের পর গত ২৫ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের নামে মামলা করেন মেহেদী হাসানের খালা দাবি করা জনৈক রিজিয়া বেগম।

এ বিষয়ে মামলার বাদি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই একজন মহিলা মামলা করে গেছেন। তাকে আমরা চিনি না। আদালতকে গিয়ে বলি, আমি আমার ছেলে হত্যার মামলার বাদি হতে চাই। পরে আদালত ওই মহিলার মামলা স্থগিত করেন। পুলিশের মামলাটাও স্থগিত করেছেন। আমার মামলা গ্রহণ করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবিরকে হত্যা অভিযোগে গ্রেফতার ব্যবসায়ী তানভীর আলী রিমাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন গুলশান থানা পুলিশ।

পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, রিমাণ্ডে নেয়ার পর থেকেই তানভীর আলী বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মামলা ও হত্যা সম্পর্কে আরও প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রবিবার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুমিন মিয়া জানান, তানভীর আলীর বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে গুলশান থানায়। আমরা আসামি কোর্টে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর যেহেতু এটা মামলার বিষয় সেহেতু এটার অনেক প্রাইভেসির বিষয় আছে। তদন্তের বিষয় আছে। বিষয়টা যেহেতু এখনও তদন্তধীন আছে আমরা চেষ্টা করছি দমন-পীড়নে কারা জড়িত, আর্থিক লেনদেনের কি সম্পৃক্ততা আছে, সে বিষয়ে জানতে কাজ করছি। আমরা কোর্টে দিয়েছি কোর্ট রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

তিনি জানান, গত ১৯শে জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টায় গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকার বারিধারা পার্ক রোডে আন্দোলনের সময় হামলার ঘটনা ঘটে। সেই হামলায় শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ডিজিস্টসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন ২০শে জুলাই সকালে ডিজিস্ট ও আবিরের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় গত ২০ই আগস্ট হাসান মাহমুদ নামে একজন বাদী হয়ে গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ওই মামলার অন্যতম আসামি ব্যবসায়ী তানভীর আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার পর তাকে আদালতে হাজির করে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ প্রসঙ্গে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদ আলম বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে গুলশানের ব্যবসায়ী তানভীর আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবির হত্যা মামলাসহ আরও নানা বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

তানভীর আলীর বিরুদ্ধে বিগত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ অর্থ উপার্জন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলা চলমান রয়েছে। একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও ছিল এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একাধিকবার নোটিশ দিলেও তিনি হাজির হননি।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের নওরতন কলোনি থেকে তাকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক।