জলাতঙ্ক টিকার জন্য বকশিস দিতে হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে!
‘স্বাস্থ্যসেবা খাতে চাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা-এই স্লোগানে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক সংগঠন সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গণশুনানি শীর্ষক জবাবাদিহিতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। স্বাস্থ্যসেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রোগীরা হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
রোগীদের তোলা অভিযোগদের মধ্যে অন্যতম ছিল হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পানির সরবরাহ না থাকা ও বেশিরভাগ পরীক্ষা বাইরে থেকে করানো, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, সিটি স্ক্যান যন্ত্র ও এমআর আই যন্ত্র সমস্যা, ওষুধ সরবরাহ কম থাকা, আয়াদের বিভিন্ন অনিয়ম, রোগীদের সরবরাহকৃত খাবারের মান খারাপ, ভর্তি রোগীর সিট ব্যবস্থপনায় অনিয়ম। শিশু ওয়ার্ডে রাতের বেলায় ডিউটি ডাক্তার না, নেবুলাইজার মেশিন এর স্বল্পতা ইত্যাদি। পাশাপাশি জলাতঙ্ক টিকার ক্ষেত্রে বকশিস দিতে হয় বলেও অভিযোগ করেন কয়েকজন রোগী।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অজয় দাশের সভাপতিত্বে ও সনাক-টিআইবি চট্টগ্রামের সদস্য প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ও সনাক-টিআইবির দেশব্যাপী চলমান দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন সনাক-টিআইবির সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। অনুষ্ঠানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কে এম আশিক কামাল। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. আবুল বাশার, ডা. রাজদ্বীপ বিশ্বাস, স্বাস্থ্য শিক্ষাবিদ মো. ফয়েজ আহমদ, পরিসংখ্যানবিদ শওকত আল-আমীন চৌধুরী, সেবা তত্ত্বাবধায়ক রেশমী দাস, সিনিয়র স্টাফ নার্স মনোয়ারা বেগম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সনাক চট্টগ্রামের সদস্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক সঞ্জয় বিশ্বাস, রওশন আরা চৌধুরী ও এস এম ফরহাদ উল্লাহ প্রমুখ।
গণশুনানিতে রোগীদের তোলা অভিযৈাগের বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলেন, হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা আমাদের অতিথি, তাদের উন্নত সেবা প্রদান করা আমাদের কর্তব্য মনে করি। হাসপাতালে অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও রোগীদের ভালো সেবা দিতে আমরা তৎপর রয়েছি। রোগীদের সাথে এখানকার ডাক্তারদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা আরও বলেন, ‘কাগজে কলমে ২৫০ শয্যার হলেও ১৫০ শয্যার লোকবল নিয়ে হাসপাতালে সেবা দিতে নিয়মিত হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই হাসপাতালে প্রায় দুই শতাধিক রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকে। ফলে আন্তরিকতা থাকা স্বত্বেও রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া সবসময় সম্ভব হয়ে উঠছে না। এছাড়াও বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ওয়াসা, পিডব্লিউডিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে বারবার তাগাদা দেয়া স্বত্তেও পর্যাপ্ত ও দ্রুত সহযোগীতা পাওয়া যায় না।
রোগীদের যত্রতত্র ময়লা ফেলা এবং পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী না থাকায় এতো বড় হাসপাতালের সঠিকভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা স্বল্প সংখক পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না বলেও অভিযোগ তোলেন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, ডাক্তারদের সম্মাননা হচ্ছে চিকিৎসা শেষে ঘরে ফেরার সময় রোগীর হাসিমুখ। আমরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীদের হাসিমুখে বাড়ি পাঠাতে চাই। এজন্য রোগীদেরকেও সচেতন হতে হবে। হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমাদের নিজের বাড়ির মত করে যত্নবান হতে হবে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না।
সভাপতির বক্তব্যে জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আজয় দাশ বলেন, এ হাসপাতালের ডাক্তারসহ সকলেই সবসময় আন্তরিক থাকে রোগীদের ভালো সেবা দেয়ার জন্য। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা সাধ্যের সবটুকু দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিশেত অন্তঃবিভাগে কোথাও কাউকে টাকা, বকশিস দেবেন না। রোগীরা যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তা সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে বিপুল সংখক নারীসহ প্রায় শতাধিক সেবাগ্রহীতা উপস্থিত ছিলেন।